Logo
Logo
×

অভিমত

বাকশাল আর এক-এগারো থেকে শিক্ষা নিতে হবে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম

বাকশাল আর এক-এগারো থেকে শিক্ষা নিতে হবে

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না। বাংলাদেশের মানুষ বারংবার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে কিন্তু এরপর সেই কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। ইতিহাসের অন্যান্য পাতার মতো বাংলাদেশেও একই ঘটনা বারবার ঘটেছে, কিন্তু তা থেকে এই দেশের শাসকেরা, মুক্তির আকাংখীরা শিক্ষা নিতে পারেনি বলেই মনে হয়। 

আমাদের নিয়ে অভিযোগ আছে, আমরা এক হতে পারি না। অথচ, এক হতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় আসতো না। গোটা দেশের মানুষ এক হয়ে সেসময় দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু হায়, স্বাধীনতার পর পরই একটা গোষ্ঠী দেশকে নিজেদের সম্পত্তি ভাবা শুরু করলো, স্বাধীনতার সমস্ত ক্রেডিট কেবল নিজেদের কবজায় নিতে চাইলো। 

দেশের ঐক্যর নামে, গড়ে তোলা হলো বাকশাল। কেড়ে নেওয়া হলো অন্য রাজনীতি করার সুযোগ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। অথচ, স্বাধীন দেশে দরকার ছিল রাজনৈতিক বৈচিত্র্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যেগুলো দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবে। দেশের স্বার্থের প্রতি ঐকমত্য মানে সবাইকে একদল করতে হবে তা না, বরং সমস্ত মত আর পথকে প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। গণতন্ত্র হচ্ছে শত ফুলের এক বাগান। এইখানে ডান, বাম, মধ্যপন্থীরা থাকবেন। বিতর্ক হবে, জবাবদিহিতা হবে ক্ষমতাসীনদের আর দেশের স্বার্থ বিষয়ে এক হবে।

অথচ, হলো ঠিক উল্টাটা। শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগ দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করলেন। গণতন্ত্রের পথ ধ্বংস করে দিলেন। নতুন দেশের আকাঙ্ক্ষা আর অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়লো। জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চেষ্টা করলেও তা বেশিদিন টিকেনি, বরং স্বৈরাচার এরশাদের হাতে পড়ে দেশ। 

আবারো, দেশের মানুষ একত্র হয়, স্বৈরাচারকে উৎখাত করে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে। এবং বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময়ের জন্য গণতন্ত্র বহাল থাকে। মনে রাখতে হবে যে, গণতন্ত্র বহু মতের মিলনমেলা। ফলে, এই ব্যবস্থায় এক দলের সব চাওয়া পাওয়া মিটবে না। এই ব্যবস্থায় সারাক্ষণ প্রশ্ন, বিরোধিতা চলবেই। এতে সময়ক্ষেপণ হলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। আর, এই ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জনতার কাছে জবাবদিহিত করতে বাধ্য।

কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোর উপর বিতৃষ্ণা আবারো দেশে অরাজনৈতিক সরকার নিয়ে আসে। এক-এগারো সরকার নামে পরিচিত সেই আমলে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটিকে মাইনাস করার চেষ্টা হয়। প্রথমদিকে বিরক্ত জনগণ একে স্বাগত জানালেও এই জনপদের মানুষ আবার রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠে। এক-এগারোর বিরুদ্ধে আন্দোলন তো হয়ইই, এমনকি এসময় নতুন দল করার উদ্যোগও সফল হয় না। 

সেইবার, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই বিগত সরকার বিরোধী, তাই বিএনপি ৯০ এর মতো সমর্থন পায় না। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, ৯০ এর পর যে নির্বাচনের ধারা ছিলো আওয়ামী লীগ তা নস্যাৎ করে দেয়। ঠিক যেন ৭১ এর পর বাকশালের আদলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। 

বাংলাদেশের মানুষ অবশ্য দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও ভয়ংকর স্বৈরাচার হাসিনাশাহীরও পতন ঘটায়। আরো একবার মহান একটা আন্দোলনে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুক্তির যুদ্ধ করে। আবারো, ৯০ এর মতো, এক এগারোর মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 

তবে, এইবার আওয়ামী লীগের থেকে দেশের মানুষ ঘৃণায় জর্জরিত। খুনি, লুটেরায় পরিণত হয়ে পড়া দলটি ব্রাত্য। অন্যদিকে, নিদারুণ অত্যাচার সয়ে বিএনপি রাজনীতির মাঠে টিকে গেছে। পরিণত হয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে। 

কিন্তু, এক এগারোর মতো নতুন রাজনীতির চেষ্টা এবারও থেমে নেই। নতুন দল ও বন্দোবস্তের কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। দেশের মানুষও এক এগারোর শুরুর মতো স্বাগত জানাচ্ছে। বারংবার রক্ত দেওয়া মানুষ নতুন বন্দোবস্ত চায়, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে চায়। যদিও বিএনপি দলটি গণতন্ত্রের লড়াইয়ে দারুণভাবে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে, তবুও মানুষ চায় দেশে একদলীয় শাসন না আসুক। ঐতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তা কেবল দেশের না দলের জন্যও ভালো। 

ফলে, নতুন বন্দোবস্তের জন্য আশা করাটাই উচিত। কিন্তু, এক-এগারো আমাদের শিক্ষা দিয়েছিল যে, রাজনীতি আর রাজনৈতিক দল গঠন জোর করে, চাপিয়ে দিয়ে হয় না। এ এক দীর্ঘ ও জটিল যাত্রা। আমাদের ৭১ সালের অর্জনের পর অনেকেই যেমন দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছিলো, সেই লক্ষণ যেন ফুটে না উঠে। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রতিটা আন্দোলন সামষ্টিক, সেখানে কেউ কেউ হয়তো নেতা হয়ে উঠেন, তবে এর মানে এই না যে তিনি বা তাঁরা সব কিছুর ঊর্ধ্বে চলে যাবেন। এর পরিণতি ভালো হয় না, শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগ এর বড় প্রমাণ। 

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ভিত্তি দেশের মানুষের ভোটাধিকার, তা দীর্ঘ সময়ের জন্য কেড়ে নেয়াও ভালো ফল বয়ে আনে না। এক-এগারোর সরকার এর বড় প্রমাণ। কথা হচ্ছে, আমরা কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারবো? 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন