Logo
Logo
×

অভিমত

সংস্কারের নামে ভোটাধিকারকে তুচ্ছ করা হচ্ছে কেন?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পিএম

সংস্কারের নামে ভোটাধিকারকে তুচ্ছ করা হচ্ছে কেন?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে, অসীম ত্যাগ তিতিক্ষায় এই দেশের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। দীর্ঘ সময়ে যেই স্বৈরাচার নির্বাচনের নামে বারংবার প্রহসন করে নিজেরা ক্ষমতায় টিকে গেছে। তবে, বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে শেষতক হাসিনাশাহীর পতন ঘটিয়েছে। 

হাসিনার আমলে দেশের প্রায় সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধংস হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা, আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সমস্ত কিছুকেই চূড়ান্ত দলবাজি ও দুর্নীতির আখড়া বানানো হয়েছে। এই প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে লুটপাট ও ক্ষমতাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের অর্থনীতি। এমনকি সামাজিক আর রাজনৈতিক কাঠামোও। 

ফলে, হাসিনার পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সুকঠিন এক দায়িত্ব বর্তায় সংস্কারের। প্রায় সব খাতেই সংস্কার দরকার। ধ্বংস্তূপটাকে মেরামত দরকার। দেশের মানুষ আশা করে, অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা এই সরকার এই কঠিন কাজগুলো করবে এবং দেশকে একটা দিশা দেবে। 

এই কারণে, এই সরকারের জনপ্রতিনিধিত্ব না থাকলেও, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও সবাই অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, আশংকার সাথে দেখা যাচ্ছে যে, দীর্ঘকাল গণতন্ত্রহীন থাকা দেশে ভোটাধিকারকে সংস্কারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

নির্বাচনের দাবি দূরের কথা, নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চাওয়া হলেও তাকে জুলাই আন্দোলনের ‘চেতনা বিরোধী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা পর্যন্ত এই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। 

দীর্ঘদিন ধরে দেশে যে ‘বিরাজনৈতিকরণ’ চলে আসছে সেই জায়গা থেকেও যেকোনো মূল্যে নির্বাচন ব্যাপারটাকেই রীতিমত সংস্কারের বিপরীত বলে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। সব রাজনৈতিক দলই খারাপ, এমন একটা ধুয়া তুলে বয়ান তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। 

অথচ, ভোটাধিকারই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অধিকার। এই ব্যবস্থায় ভোট জনতার জবাবদিহিতা চাওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ফলে, একটা গণতন্ত্রের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে নিয়মিত সুষ্ঠু ভোট আয়োজন। 

এর মাধ্যেমে জনগণ যেমন শাসককে বিচার করার সুযোগ পাবে, তেমনি শাসকও চাপে থাকবে। গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে এই প্রক্রিয়া চালু রাখা।

আর, সংস্কার কোনো স্থবির প্রক্রিয়া না। একটা দেশ বা জনগোষ্ঠী নির্দিষ্ট কিছু আইন বা অধ্যাদেশ জারি করলেই আজীবনের জন্য শুধরে যায় না। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া,গণতন্ত্রের উন্নতি হলেই কেবলমাত্র সংস্কার গতি পায়। 

ফলত, সংস্কার বলে যেইসব আলাপ দেওয়া হচ্ছে তা আজীবনের সমস্যা সমাধান করবে না, এগুলো এমন কোনো জাদুর কাঠি না। বরং বিগত আমলে ধ্বংসস্তূপ থেকে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করিয়ে দেওয়া পর্যন্তই এই সংস্কার কাজ করবে। 

এর পরের ধাপ হবে একটা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। জনগণ ও শাসকের মধ্যে জবাবদিহিতার সম্পর্ক স্থাপন করা। এর মাধ্যমেই দেশের ধসে পড়া খাতের সংস্কার হবে। বিষয়টা হুট করে হওয়ার না। 

বিরাজনীতির সমর্থকরা প্রায়ই ভোট ব্যাপারটা নিয়ে নাক সিটকান। ভোটের গুরুত্ব ও ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেন। ভোট ব্যবস্থা ভালো না, ভোটে জিতে আসারা দুর্নীতি করবে এইসব যুক্তি দেন। 

অথচ, ভোটই নাগরিককে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা দেয়। ভোটের মাধ্যমে অযোগ্যরা জিতে আসে, ভোট একটি বাজে প্রক্রিয়া এগুলো আসলে বাজে যুক্তি। এইসব যুক্তি দিয়ে জনতার ভাবনাকে খাটো করা হয়। আওয়ামী সমর্থকরা যেমন বলতো, দেশে বিকল্প নাই, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ দেশ চালাইতে পারবে না, এরাও একইরকমভাবে ইঙ্গিতে বোঝায় যে, ভোটের দরকার নাই, বরং বিরাজনীতি ভালো। 

এইসব আলাপই বরং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ডেকে আনে। জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই সবচেয়ে বড় সংস্কার। হয়তো প্রথম প্রথম ভোট ব্যবস্থাকে কাচকলা দেখিয়ে কেউ কেউ দুর্নীতিবাজ হবে, কিন্তু নিয়মিত ভোট হলে তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা যাবে। 

টানা যখন ভোট হতে থাকবে তখন জনগণ আরও সচেতন হবে, আরও শক্তিশালী হবে। ব্যাপারটা অনেকটা শিশুর হাঁটা শেখার মতো। শুরুর দিকে আছাড় খাবে, ব্যথা পাবে, কিন্তু যতো হাঁটবে সে ততো বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে। গণতন্ত্রও এইভাবেই কাজ করে। 

যারা নির্বাচনকে সংস্কারের বিপরীতে দাঁড় করাতে চান তারা আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন