Logo
Logo
×

অভিমত

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

বিপ্লব থেকে সংস্কার: বাংলাদেশে তরুণদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের উত্থান

Icon

শাহাদাত স্বাধীন

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পিএম

বিপ্লব থেকে সংস্কার: বাংলাদেশে তরুণদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের উত্থান

ছবি: সংগৃহীত

যে ছাত্র-নাগরিকের নেতারা জুলাই বিপ্লব নামে পরিচিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা এখন তিনটি স্বতন্ত্র অংশে বিভক্ত। একটি অংশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছে। একটি অংশ ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয়। আর তৃতীয় অংশটি গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিসি) নামে একটি সংগঠনের সূচনা করে। এই অংশটির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বয়স ৩০-এর ঘরের আশপাশে। 

নাগরিক কমিটি প্রথম দিকে জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সামনে আসলেও, পরে খুব দ্রুতই সংগঠনটির রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে হৈ চৈ শুরু হয়। পরবর্তীতে এর সংগঠকরা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান। কমিটির সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে আসা ব্যক্তিদের পাশাপাশি ডানপন্থী এবং বামপন্থী দলগুলোর সদস্যও রয়েছেন।

নাগরিক কমিটি তার কাঠামো গঠন করতে বেশ অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলা এবং ৬০০টিরও বেশি থানার মধ্যে নাগরিক কমিটি ঢাকায় ২৪টি এবং সারাদেশে ৬৫টিসহ ৮৯টি স্থানে ইতোমধ্যে তাদের প্রতিনিধি দিয়েছে। 

গত মাসে দ্য ডিপ্লোম্যাট জানতে চেয়েছিল নাগরিক কমিটি কি ভারতের আম আদমি পার্টির বাংলাদেশ সংস্করণ হতে চায় কিনা, উত্তরে সংগঠনটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছিলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

যদিও এই ক্ষেত্রে বেশ ভালোই প্রতিবন্ধকতা আছে। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বড় ধরনের মেরুকরণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে নাগরিক কমিটি নতুন একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে বিবেচিত।

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক, আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব এবং সামান্থা শারমিনকে মুখপাত্র করে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আনুষ্ঠানকি যাত্রা শুরু হয়। গত ৩ অক্টোবরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাতজন আইনজীবী যোগ দিয়েছিলেন সংগঠনটিতে। এতে করে এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২-তে। এরপর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও সদস্য যোগ হয়। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা এখন ১৪৭-এ উন্নীত হয়েছে।

সদস্য সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি হলেও, নাগরিক কমিটি সমালোচনার মুখে পড়েছে।  বিরোধীরা সরকারের সঙ্গে নাগরিক কমিটির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে একে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এদিকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ কিছু বিএনপি (বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল) নেতা নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে প্রতি খুব সতর্কতার সঙ্গে সমর্থন দিয়েছেন।

ঢাকায় নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে এবং এর প্রয়োজনীয়তা ও আদর্শ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। নাগরিক কমিটিরি মুখপাত্র সামান্থা শারমিন দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে বারবার রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের তীব্র প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি গণআন্দোলনের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্রোহের আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত। আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর লড়াই এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে গভীরভাবে মিশছি।’

শারমিন দলের তরুণ নেতৃত্বের ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করে জোর দিয়ে বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম। কঠোর মতাদর্শ মেনে চলার পরিবর্তে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অংশীদার জনগণকে একত্রিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে তা আছে, এমনকি তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ থাকলেও।

নাগরিক কমিটির বিশিষ্ট সদস্য এবং এর বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি তৈরিতে অবদান রাখা সারওয়ার তুষার তাদের মতাদর্শগত অবস্থানের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি দ্য ডিপ্লোম্যাটকে বলেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামবাদের বাইনারি রাজনীতির বাইরে চলে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত করে রেখেছে। আমাদের মনোযোগ হলো নাগরিক কেন্দ্রিক রাজনীতি, যেখানে আদর্শ নির্বিশেষে নাগরিক অধিকার সবার আগে। আমাদের লক্ষ্য হলো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা যা ঐক্যকে ত্বরান্বিত করে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

বাংলাদেশি স্কলার এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ডিডব্লিউ একাডেমি এবং বন রাইন-সিগ ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে কাজ করেন ড. সাইমুম পারভেজ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিকশিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল গঠন নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। তরুণদের-নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে এগিয়ে এসেছে বলে আমি এর প্রশংসা করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের মধ্যে অনেকে জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। আমি আশা করি, তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে গণজাগরণের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ শাসনের অনুপস্থিতিতে এবং আওয়ামী আদর্শকে জনসাধারণের প্রত্যাখ্যানের পর আমাদের একটি প্রাণবন্ত ও সেন্ট্রিস্ট বিরোধী দলের প্রয়োজন, যেটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিএনপির রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দলটিকে শক্তিশালী তৃণমূল সমর্থন ভিত্তি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। বর্তমানে তাদের সমর্থন প্রাথমিকভাবে শহরাঞ্চলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন্দ্রীক। একটি শক্তিশালী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দলের উত্থান নির্ভর করে তৃণমূল কাঠামো এবং জোটের অংশীদারদের সঙ্গে তারা কতটা সফলভাবে সংযোগ স্থাপন করে তার ওপর। 

ছাত্রদের দ্বৈত ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পারভেজ—যখন নতুন দল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে তখন সরকারের সঙ্গেও কাজ করছে তারা। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি সম্ভাব্য কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট তৈরি করে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে তারা যেন ‘কিংস পার্টি’ হয়ে না যায়।

এই সমালোচনার জবাবে তুষার স্পষ্ট করে বলেন, সরকারের পক্ষে কেউ দল গঠন করছে না। এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রকৃতপক্ষে, জনগণের মাঝে প্রচারের সময় আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আমরা যদি সরকার সমর্থিত হতাম তাহলে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো না। সরকারি কর্মকর্তারা দলে যোগ দিলেই সমালোচনা বৈধ হবে। আর এটি এখনো হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে না।

রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার কম থাকার বিষয়টিকে স্বীকার করে নাগরিক কমিটি। যদিও তাদের ১৪৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের প্রতিধিনিত্ব ১০ শতাংশেরও কম।

এই বৈষম্যের ব্যাপারে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র শারমিন বলেন, নারীর অংশগ্রহণ আমরা ২৫ শতাংশ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকাংশে নারীর প্রতি বিরূপ। এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।

শারমিন জোর দিয়ে বলেছেন তারা সংরক্ষিত আসনের মতো টোকেনিস্টিক পদক্ষেপের বিরোধী। বরং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের পক্ষে। 

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের অবশ্যই একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে নারীরা রাজনীতিতে ভালো করতে পারে। যদিও রূঢ় রাজনৈতিক দৃশ্যপট তার জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে এতে মনোযোগ দিতে হবে—যোগ করেন তিনি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে নাগরিক কমিটির অংশ নেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব। দলের বৃহৎ প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানে যোগদানকারী সর্বস্তরের মানুষ—রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, আহত বা শহীদদের পরিবার, এমনকি বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও এখন আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। অতীতের ফ্যাসিবাদী যুগে দূরে সরে যাওয়া অনেকেই আবার যোগ দিচ্ছেন। তাই এখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে।’

আদিব জোর দিয়ে বলেন, ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় হতাশ বয়স্ক নাগরিকদের পাশাপাশি তরুণরা গভীর আগ্রহ নিয়ে রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ক্রমবর্ধমান এই আন্তঃপ্রজন্মগত সম্পৃক্ততা অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের বৃহত্তর দাবিকে সামনে নিয়ে আসে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট লেখক ড. মারুফ মল্লিকও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করেছেন। তবে বিএনপিকে দলটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের নেতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন তার জন্য দলটিকে সরকারকে জবাবদিহিতায় আনার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, নাগরিক কমিটিকে সফল হওয়ার জন্য তৃণমূলে ভিত্তি তৈরিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে ড. পারভেজের পরামর্শ, ‘আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দল হতে এখন থেকেই নাগরিক কমিটিকে কাজ করা উচিত। নির্বাচনের আগে প্রায় এক বছরের মতো অল্প সময়ের মধ্যে যদি তারা ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তবে তাদেরকে হয়তো অনেক ‘শর্ট-কাট’ পথ অবলম্বন করতে হতে পারে, যার জন্য পরে তারা অনুশোচনা করবে। তার পরিবর্তে ২০২৯ সালে যেন শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয় সেজন্য আগামী ছয় বছর দলকে সংগঠিত করতে কাজে লাগানো উচিত তাদের। তাৎক্ষণিক সাফল্যের জন্য জনতুষ্টিবাদী (পপুলিস্ট) নীতিগুলি অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে, তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় মনোনিবেশ করা উচিত এবং কার্যকর বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা উচিত।

‘কিংস পার্টি’ বলে ক্রমাগত সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ায়, অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দৃশ্যমান দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেন ড. পারভেজ, এমনকি তার জন্য যদি সরকারি পদ থেকে পদত্যাগের প্রয়োজনও হয়।

লেখক : বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্কলার। বর্তমানে নয়া দিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গবেষণা স্কলার হিসেবে যুক্ত। দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত নিবন্ধটি বাংলা আউটলুক পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করে দেওয়া হলো। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন