Logo
Logo
×

অভিমত

ভারতের সীমান্ত হত্যা কি চলবেই?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

ভারতের সীমান্ত হত্যা কি চলবেই?

আরও একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে নিহত হলেন। এই নিয়ে চলতি মাসে ৫ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো লাইনে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল ব্যক্তি নিহত হন। পরদিন বিকেলে বিজিবি, পুলিশ ও স্বজনরা জিরো লাইনের ২০০ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তর থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে। নিহতের বাবা দাবি করেছেন, সীমান্ত এলাকার কাছে বাঁশ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি বিএসএফের গুলির শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। 

গত বুধবারেও যশোরের শার্শা সীমান্তে সাকিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নামে দুজন যুবককে হত্যা করা হয়।সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, রাতে জাহাঙ্গীর, সাকিবুর, শাহাবরসহ কয়েকজন একসঙ্গে ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন বিএসএফ সদস্যরা তাদের কুপিয়ে ও মারধর করে ইছামতী নদীতে ফেলে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দর থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, একই ঘটনায় তিনজন জখম হন। তাদের মধ্যে দুজনের লাশ সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। অপরজনের লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হাসিনাশাহীর পতনের পরও বাংলাদেশের মানুষকে নিয়মিতভাবে খুন করছে ভারতীয় বাহিনী। গোপাল যেই সীমান্তে খুন হন সেইখানেই সেপ্টেম্বরের দুই তারিখ খুন হন ১৪ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাস। আগস্টের ১৩ তারিখ শিবগঞ্জ সীমান্তে খুন হন আব্দুল্লাহ। সেপ্টেবরের ৯ তারিখ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে জয়ন্ত কুমার সিংহ। অক্টোবরের আট তারিখে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তে কামাল হোসেন। নভেম্বর মাসে কোনো হত্যাকাণ্ডের খোঁজ পাওয়া না গেলেও ডিসেম্বরে বাংলাদেশি হত্যার যজ্ঞে মেতে উঠেছে বিএসএফ। এই মাসের চার তারিখ সিলেট কোম্পানীগঞ্জ সংলগ্ন ভারত সীমান্তে আশরাফ উদ্দিন নামক ৬৫ বছরের একজন খুন হন, এর দুই দিন পর ছয় তারিখে পঞ্চগড় সীমান্তে খুন হন আনোয়ার হোসেন নামের আরও একজন। 

হাসিনাশাহীর পুরো আমলে ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত ছিল মৃত্যুকূপ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। কারো কারো মতে এই সংখ্যাটি মূলত গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যর ভিত্তিতে পাওয়া, আসল সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। অথচ একটি হত্যারও বিচার হয়নি।

বাংলাদেশের তরফ থেকে বারবার অভিযোগ করলেও ভারত তেমন গা করেনি। বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে সীমান্ত সম্মেলন বা পতাকা বৈঠকে প্রতিবারই সীমান্তে আর গুলি চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর রক্ষা হয় না। 

ভারত বরং নানাভাবে খুন হওয়া মানুষদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং স্মাগলার বলে এইসব হত্যাকাণ্ডকে হালাল করার চেষ্টা করে। অথচ সীমান্ত আইন অনুসারে, নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা কোনো নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করার সুযোগই নিয়ে। ভারত সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক হত্যা করেই যাচ্ছে।

ভারতের পাপেট হয়ে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে হাসিনা সরকার চুপচাপ থাকতো, কিন্তু এখন এই নিয়ে চুপ থাকার সুযোগ নেই। এই হত্যাকাণ্ড যেকোনো ভাবেই হোক, থামাতে হবেই। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন