সম্প্রতি ঢাকায় অন্তত তিনটি ‘গুপ্তহত্যার’ খবর পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (এআইইউবি) শিক্ষার্থী মো. ওয়াজেদ সীমান্ত ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানসহ তিনজন। তাঁদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার রাতে মিছিলও হয়েছে।
এর আগে, সোমবার বিজয় দিবসের দিন নাগরিক কমিটির অনুষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এইসব ঘটনা দেশের মানুষকে বিচলিত করছে। বিশেষত, জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই আশঙ্কার মধ্যে কাটাচ্ছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চার মাসের বেশি অতিবাহিত হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত জুলাই আন্দোলনের আহত ও নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হয়নি। জুলাই মাসে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যে, হাসিনাশাহী সেসময় নিহত ও আহতদের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে নানারকম কৌশল করেছে। নিহতদের পুলিশের গুলির বদলে অন্যান্য কারণে মারা যাওয়ার ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল, এমনকি অনেক হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতা সরিয়ে ফেলা হয়।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল আহতদের ও শহীদ পরিবারদের দায়িত্ব নেওয়া, কিন্তু সেইসব ব্যাপারেও ঢিলেমি পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালে চিকিৎসারত আহতদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ভালো ব্যবহার করেনি বলেও অভিযোগ এসেছে। মর্মান্তিকভাবে, এই অভিযোগের প্রতিবাদে খোদ আহতরা মাঠে নেমে এসেছেন।
এর সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক ভীতি জুলাই আন্দোলনের যুক্তদের জন্য আরও একটা আশঙ্কা নিয়ে আসলো। বিশেষত, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আওয়ামীযন্ত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দমন করতে পারলেও জুলাইয়ের ১৭ তারিখের পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে রাস্তায় নেমেছিল বলেই গোটা দেশ সাহসে বলীয়ান হয়ে হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছিল ঐক্যর মন্ত্রে। অতীব দুর্ভাগ্য যে, সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন উঁচু পদে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্থান হয়নি। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা জুলাইয়ের যোদ্ধাদের দায়িত্ব পালন না করে রাজনৈতিক স্বার্থ ও সমীকরণ মেলাতেই বেশি ব্যস্ত বলে অভিযোগও উঠেছে।
পতিত স্বৈরাচার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুট করেছে, বাংলাদেশকে আবারো পরাস্ত করার জন্য স্বৈরাচারের বংশবদেরা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু, বিপরীতে জুলাই আন্দোলনের ঐক্য ও দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে না। আজ অবধি বড় বড় খুনি লুটেরাদের কোনো বিচার হয়নি। এমনকি অনেকে পালিয়ে ভারতসহ নানা জায়গায় নিরাপদে পৌঁছে গেছে।
এই ব্যর্থতার দায়ভার ক্ষমতাসীনদের নিতেই হবে। কেবল রেটোরিক আর ভাববাদী কথা বলে এড়িয়ে গেলে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিশ্চিত করতে হবে যাতে ঐক্য বিনষ্ট না হয়। জুলাইয়ের বীরদের, দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে পুরো আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। যেকোনো মূল্যে তা হতে দেওয়া যাবে না।