ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবস্থা এতোটাই নাজুক যে, চলতি সপ্তাহে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘরের বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে।
বিগত সপ্তাহে বিশ্বের ১২৬ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল। এ সময় আইকিউএয়ারের বাতাসের মান সূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ২৫৯। বায়ুদূষণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল মিসরের রাজধানী কায়রো ও ইরাকের বাগদাদ। এই দুই শহরের স্কোর যথাক্রমে ২৪১ ও ১৮৯।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। গত সপ্তাহে ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। ঢাকার বাতাস কতটা বিষাক্ত তা বোঝাতে একটি হিসাব দেওয়া যেতে পারে। দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে ঢাকা শহরের বাতাসে শ্বাস নেওয়া দিনে ২০টি সিগারেট টানার ক্ষতির সমান।
বিগত স্বৈরাচারের আমলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, বেশুমার লুটপাট আর দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও এর প্রভাবে পরিবেশের যে মারাত্মক দূষণ হয়েছে তা নিয়ে খুব একটা কথা হচ্ছে না।
হাসিনাশাহীর মূলনীতিই ছিল কাঠামোগত উন্নয়ন। মূলত লুটপাটের সুবিধার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যেগুলোর অধিকাংশই ছিল বড় বড় কাঠামো নির্মাণ। ঢাকা শহরের উপর অত্যাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। পরিকল্পনাহীনভাবে বড় বড় ফ্লাইওভার, বিশাল বিশাল ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। এমনিতেই ঢাকা শহরের জনঘনত্ব অত্যধিক, তদুপরি এইরকম দানবীয় উন্নয়নে শহর থেকে সবুজ হারিয়ে গেছে। উন্নয়নে বিষে বাতাস হয়ে পড়েছে বিষাক্ত।
এর সবচেয়ে বড় শিকার শহরের গরীব মানুষেরা। ঘিঞ্জি বস্তিতে থাকা এইসব মানুষের প্রায় সবাই ফুসফুসে বিষ টেনে চলছেন। মানুষের উন্নয়ন না করে, লুটপাটের উন্নয়ন করায় দেশে কর্মসংস্থান হয়নি। গ্রামগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্য বিষের শহরে হাজির হতে বাধ্য হয়েছে।
অবশ্য শুধু গরিব নয়, সকল শ্রেণি নির্বিশেষে শিশুরা বিষ টেনে বড় হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে শিশুরা নানারকম রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে। আওয়ামী উন্নয়ন শুধু আমাদের দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজই ধ্বংস করেনি, ভবিষ্যতকেও রীতিমতো মেরে রেখে গেছে।
দেশের মানুষ রক্ত ঢেলে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছে। কিন্তু, আমরা যদি বুকভরে শ্বাস নিতে না পারি, যদি আমাদের শিশুরা ঠিকঠাক বড়ই না হতে পারে, তবে সেই রক্তদান বৃথা যাবে।