র্যাব বিলুপ্তির দাবি বিএনপির রাজনৈতিক পরিপক্কতার প্রমাণ
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২০ পিএম
বাংলাদেশে রাজনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই দেশে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি তাদের ভুল শোধরানো দূরের কথা, স্বীকার পর্যন্ত করে না। এই দেশে খুনি, লুটেরা হাসিনারও লাখ লাখ ভক্ত আছে যারা নিজেদের জঘন্য পাপ স্বীকার না করে উলটো জনগণের ওপর হম্বিতম্বি করে। কিন্তু, ভুল স্বীকার করা কেবল দল ও জনগণের জন্যই জরুরি নয়, একটা দলের পরিপক্কতারই প্রমাণ। কারণ, ভুল হতেই পারে, কিন্তু গোঁয়ারতুমি করে তা স্বীকার না করাই অপরাধ।
সম্প্রতি, বিএনপি এই ব্যাপারে নিজেদের পরিপক্কতা দেখিয়েছে। যুগের সাথে সাথে জনগণ ও দেশের চাহিদা অনুযায়ী পুরোনো ভুল শোধরাতে চাইছে। বিএনপি সরকারের আমলে র্যাব গঠন করে দ্রুত ও লোকরঞ্জন করে অপরাধ বিনাশ করতে চাইলেও দলটি এর ভয়াবহতা টের পেয়েছে।
পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন এবং ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিলুপ্তি চেয়ে এ–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব ও সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা অসংগতি ও অনিয়ম দূর হবে বলে মনে করে দলটি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
র্যাবের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে বিএনপি। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে পুলিশের এই বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। বিএনপির আমলে গঠিত এই বাহিনীকে সংস্কার না করে কেন বিলুপ্ত করতে চায়, প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা মেডিকেল বিদ্যাতেও আছে, যখন একেবারে গ্যাংরিন হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তখন কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
হাফিজ বলেন, ‘সে জন্য আমরা মনে করেছি, র্যাব আন্তর্জাতিকভাবেই এমনভাবে নিন্দিত হয়েছে...আর দেশে তো র্যাব মানেই একটা দানব তৈরি করা হয়েছে। তারা যত ধরনের খুন-গুম, যত এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভূত হত্যা), অধিকাংশই এই র্যাব বাহিনীর মাধ্যমে হয়েছে। সে জন্য আমরা এটিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছি। র্যাব বিলুপ্ত হলে র্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা-পুলিশ যেন পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’এই মুহূর্তে র্যাবকে বিলুপ্ত করা হলে জনগণের কাছে একটা ভালো সিগন্যাল যাবে বলে মনে করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অনেক বিএনপি সমর্থক দাবি করেন র্যাব বিএনপি আমলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অপরাধ কমিয়েছিল। বেশ কিছু রাঘব বোয়ালকে শায়েস্তা করেছিল যাদের মধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। জনগণ শুরুতে র্যাবের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে উৎসবও করেছিল। কিন্তু, বিচার বহির্ভূত উপায়ে যে ন্যায্যতা আসেনা সেসময় তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ এর পুরো ব্যবহার করে। র্যাব রীতিমতো ভাড়াটে খুনে বাহিনীতে পরিণত হয়। আওয়ামী অপশাসন টিকিয়ে রাখা ও বিরোধী মতের দমন তো বটেই, স্রেফ টাকার বিনিময়েও এই বাহিনী এক সময় হত্যা করা শুরু করে।
ফলে, বিএনপির এই বোধোদয় রাজনীতিতে অত্যন্ত শুভ লক্ষণের ইঙ্গিত দেয়। ভুলকে শোধরানোর পরিপক্কতা দেখিয়ে দলটি দারুণ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করলো। বিএনপির এই পরিপক্কতা প্রশংসনীয়।