Logo
Logo
×

অভিমত

ভারতের বিকল্প বাজার খোঁজা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

ভারতের বিকল্প বাজার খোঁজা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

মানুষের মতো জাতির গঠনের জন্যও সংগ্রাম করতে হয়, কঠোর সময়ের চড়াই-উতরাই পাড় হতে হয়। সংগ্রাম ছাড়া কোনো জাতিরই মুক্তি ও সমৃদ্ধি মেলে না। বাংলাদেশের জন্যও এক ক্রান্তিকাল। দীর্ঘকাল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের গোলামির জিঞ্জির পরিয়ে রাখা হাসিনাশাহীর পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির চাপান-উতোর চলছে। খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত বাংলাদেশের প্রতি বৈরী আচরণ করছে। সে দেশের মিডিয়া অপতথ্য দিয়ে বাংলাদেশকে খাটো করতে চাইছে আর রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের সাথে সবরকম বাণিজ্য বন্ধ করে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। কিছু বন্দরে মালামাল পরিবহন বন্ধও আছে। 

তবে, বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটি বরং দারুণ সুযোগ হতে পারে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশ ভারতের পণ্যর একটি বিশাল বাজার এবং চিকিৎসাসহ নানা সেবা নিতে বাংলাদেশিরা বিপুল অর্থ সে দেশে খরচ করেন। ভারত যদি রাজনৈতিক বৈরিতায় এইসব সুযোগ বন্ধ করে দেয়, তবে সাময়িক অসুবিধা হলেও দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হবে। পণ্য ও সেবায় নিজ দেশে আরো সক্ষমতা বাড়ানো এবং আমদানির জন্য অন্য বিকল্প খোঁজা বাংলাদেশকে ভারতের উপর নির্ভরতা মুক্ত করবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বাজার হারানো হবে ভারতের জন্য বিরাট আঘাত। 

এমনটাই মনে করেন, নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। চলতি সপ্তাহে, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারত কোনো কিছু বিনা পয়সায় দেয় না। তারা যদি বন্ধ করে দেয়, আমি তো বলি বন্ধ করুক। গরু তো বন্ধ করেছিল। আমরা এখন গরুর মাংস খাই না? বন্ধ যদি ওনারা করতে চায়, ওনাদের ব্যাপার। ওনারা বন্ধ করলে ওনাদের ইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটার সঙ্গে দুই পাশের হাজার হাজার, লাখ লাখ লোক জড়িত। পলিটিকস ওনারা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি না ব্যবসায়ীরা কখনো এটা সাপোর্ট করবেন। এত বড় একটা বাজার, সেই বাজারকে নষ্ট করবেন। এক দিন, দুই দিন অবরোধ আমরাও করি মাঝেমধ্যে। পলিটিক্যাল অবরোধ করছে করুক। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কারণ, ওনাদের বেশি গরজ আমাদের চেয়ে।’

সরকারের তরফ থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগেরও ইঙ্গিত মিলছে। আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে একক উৎস দেশের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প খুঁজছে বাংলাদেশ। এই দুই পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সরকার ভারতের পাশাপাশি আরও কিছু দেশ চিহ্নিত করেছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আলু ও পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয় ভারত থেকে। এই পরিস্থিতিতে আমদানির জন্য বিকল্প দেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিটিটিসি আলু আমদানিতে চারটি দেশের কথা বলেছে। এগুলো হলো জার্মানি, মিশর, চীন ও স্পেন। পেঁয়াজের জন্য চীন, পাকিস্তান ও তুরস্কের কথা বলেছে বিটিটিসি।

এই দুই পণ্যে কেন ভারতের পাশাপাশি অন্য উৎসও খোঁজা হচ্ছে, তার কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল করতে ভারত রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তাই বিকল্প উৎস থেকে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের উৎসাহিত করা যেতে পারে বলে মনে বিটিটিসি।

আলু ও পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প উৎস বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘শুধু আলু-পেঁয়াজ নয়, অন্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারতের বিকল্প উৎস দেশ খোঁজা করা দরকার। এ ব্যাপারে বিটিটিসির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হলো বছরের কোন সময়ে কোন পণ্যের ঘাটতি থাকে, তা আগেই বের করা এবং সে অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া।’

ভারতের বৈরিতা আদতে বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়ে আসতে পারে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন