Logo
Logo
×

অভিমত

ভারতের উগ্রতা আমাদের এক হওয়ার সুযোগ করে দেবে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম

ভারতের উগ্রতা আমাদের এক হওয়ার সুযোগ করে দেবে

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম ও নিষ্ঠুর স্বৈরশাসন হাসিনাশাহীর পতনের পর ভারত যেন উন্মাদ হয়ে গেছে। দেশটি সবরকম সভ্যতা ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সে দেশের সরকার, রাজনীতিবিদ, এমনকি সাধারণ মানুষের আচরণেও মনে হচ্ছে বাংলাদেশ যেন তাঁদের করদরাজ্য আর হাসিনা পতনে তারা জমিদারি খুইয়েছে। 

সোমবার ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা হয়েছে। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা দুপুরের দিকে সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে এই হামলা চালান। ত্রিপুরার পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলেছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এটাও মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ।’অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ তরফ থেকেই হামলায় একধরনের বৈধতা দে্ওয়া হলো, যা কূটনীতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন। 

হাসিনা পতনের পর থেকেই ভারতে মোদী সরকারের পোষ্য ‘গোদী মিডিয়া’ বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে যাচ্ছে। আল-জাজিরার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভারত মিথ্যা তথ্য বা ডিসইনফরমেশন ছড়ানোর ব্যাপারে রীতিমতো ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে তুলেছে। গত ১৫ বছর ধরে শয়ে শয়ে কোটি টাকা, অগণিত মিথ্যা মিডিয়া তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ইন্ডাস্ট্রি প্রোপাগান্ডা চালায়। ধারণা করা যায় যে, সেই ইন্ডাস্ট্রি এখন বাংলাদেশের পিছনে লেগেছে। 

বাংলাদেশে ইসকনের এক ধর্মীয় নেতার গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে এক মুসলিম আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হিন্দুরা এই হামলা করেছে এই ধোঁয়া তুলে মুসলিমদের হিন্দু নিধনে লেলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল এই ঘটনা। কিন্তু, এই দেশের মুসলমানরা সেই ফাঁদে পা দেয়নি। 

এরপরে বাংলাদেশিরা ভারতের পতাকার অপমান করেছে এই কথা বলে ভারতে বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানো হয়েছে, বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। ভারতের রাজনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করতে দেবে না, মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘের সেনাদের বাংলাদেশে পাঠানোর আহ্বান করেছেন। আগরতলায় হামলা সব ধরনের শিষ্টাচার ছাড়িয়েছে। 

বাংলাদেশ যে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ তা ভারত যেন মানতেই পারছে না। যেই দেশে দেড় যুগ ধরে হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতায়, যেখানে মুসলমানসহ সমস্ত সংখ্যালঘু তীব্র রোষানলের শিকার, সেই দেশ অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে মায়াকান্না দেখানো তীব্র ভণ্ডামি।

আর পণ্য রপ্তানি তো বাংলাদেশ বিনা পয়সায় করে না। বরং বাংলাদেশ ভারতের বিশাল বাজার, এদেশ থেকে ভারতীয়রা বিপুল রেমিট্যান্সও পাঠায়। ফলে, এইসব হুমকি-ধমকি খুবই বায়বীয়। বৈশ্বিক যুগে, ভারত বাদেও বাংলাদেশের পণ্যর অভাব হবে না। 

আদতে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে হাসিনার দাসখতের কারণে বাংলাদেশকে ভারতের পণ্য চড়াদামে কিনতে হতো। ভারত পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ বিকল্প সন্ধান করবে, নিজেরা উৎপাদনের চেষ্টায় যাবে। এর আগে আমরা দেখেছি ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করায় বাংলাদেশ বরং এই খাতে স্বনির্ভর হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাই হবে। কিন্তু ভারত এতো বড় বাজার পাবে কোথায়? 

মোদ্দা কথা, বাংলাদেশ ধৈর্য ধরলে, একতাবদ্ধ হলে ভারতই বরং আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়বে। আর মনে রাখতে হবে, ভারত মানে একটা সত্তা না, বিশাল দেশটির অসংখ্য জাতি, ভাষা, বর্ণ, ধর্মের কারণে এর অস্তিত্বও সবসময় হুমকির মুখে থাকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধঙদেহী হলে দেশটি ভীষণ সংকটে পড়বে। 

তবে, এত বড় দেশের ধাক্কা সামলানো বাংলাদেশের জন্যও সহজ নয়। ভারতের শাসকরা যদি সেদেশের জনগণের সমস্যা মেটানোর বদলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জজবা অব্যাহত রাখে তবে বাংলাদেশকে তা মোকাবিলা করতে দারুণ সাহস, শক্তি এবং সর্বোপরি একতা লাগবে। 

তবে, ভারতের উগ্রতা আমাদের এক করে দে্ওয়ার উপলক্ষ্যে হতে পারে যা আমাদের শক্তিশালী করে তুলবে। যেই শক্তিতে আমরা বলীয়ান হয়েছিলাম ১৯৭১, ১৯৯০ আর ২০২৪ সালে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন