বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমান। দেশের একটা টালমাটাল সময়ে সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তিনি স্বল্পসময়ে দেশকে গণতন্ত্রের স্বাদ দিয়েছিলেন। দেশ যখন একদলীয় বাকশালী শাসনে জর্জরিত তখন তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র কায়েম করেন। ঘৃণার বদলে সব মতকে সুযোগ দেওয়া, অতীতের বদলে সামনের দিকে তাকানোই ছিল তাঁর নীতি। যার ফলে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। কেবল সরকারে থেকেই নয়, একাধিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেয় দলটি।
দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে আরও একবার দেশের মানুষকে নিয়ে জিতেছে বিএনপি। দেশের সুশীল সমাজের একটা অংশ, মিডিয়াসহ নানা প্রান্ত থেকে বছরের পর বছর বলার চেষ্টা করা হয়েছে বিএনপি ক্যান্টনমেন্টে গড়া দল, এই দলের কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা নেই, এই দল বিরোধী দলে টিকতে পারবে না। কিন্তু, বিএনপি দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম দমনপীড়ন সহ্য করেও পথ হারায়নি, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখেছে।
আওয়ামী স্বৈরাচারের নৃশংসতায় দেশের মানুষ বীতশ্রদ্ধ। শহীদদের হারিয়ে শোকগ্রস্ত। সেই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার বিষয়ে এক ধরনের গণমত আছে। আওয়ামী শাসনামলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করা মিডিয়ার ওপর দেশের মানুষের বিবমিষা আছে। অনেকেই এগুলোর শোধ তুলতে চান। তাঁদের গুড়িয়ে দিতে চান। এই আবেগের যথাযথ কারণ আছে।
কিন্তু, রাজনৈতিক দল হিসেবে জিয়ার গড়া বিএনপিকে আবেগ নয়, বরং বাস্তবতা এবং ন্যায্যতাকে মূল্য দিয়ে রাজনীতি করতে হবে যা দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে।
বছরের পর বছর মিডিয়াতে বিএনপিকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে, এমনকি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় এবং এর পতনের পরেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এই বয়ান দেওয়া চেষ্টায় দলটিকে দমনের চেষ্টা হয়েছে।
তবে, এখনও পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেননি যা প্রশংসনীয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে দলটি নতুন নামে বা পরিচয়ে ফিরে আসতে পারে আর এর চেয়েও জরুরি হচ্ছে বিচার ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা। এমনভাবে স্বৈরাচারের দোসর আর স্বৈরাচার আমলের খুনি লুটেরাদের বিচার করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। দমন নয়, বরং ন্যায়বিচার দিয়ে ফ্যাসিবাদী নীতিকে নির্মূল করতে হয়।
অন্যদিকে, গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতেই হবে। গণতন্ত্র এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সব মতের মানুষ থাকতে হবে, সবাইকে স্বাধীনতা দিতে হবে। উসকানি বা অপরাধের জন্য আইন আছে, সংবাদমাধ্যমও সেই আওতায় পড়ে। কিন্তু, হরেদরে তাদের বন্ধ করে দেওয়া গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। আওয়ামী আমলে আমরা এমনটি হতে দেখেছি।
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে দেশের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সবচেয়ে নিষ্ঠাবান শক্তি হিসেবে বিএনপিকে অতি অবশ্যই গণতান্ত্রিক চিন্তায় সামনের পথ পাড়ি দিতে হবে।