সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে পারা জুলাই আন্দোলনের জন্য জরুরি

আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম

পুরোনো ছবি
বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের নিয়ে গর্ব করতেই পারে। দেশের একটা টালমাটাল সময়ে এদেশের মানুষ হরেদরে সঠিক পথেই আছে। নানারকম দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রে উত্তেজিত না হয়ে দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অবিচল আছে।
এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে তার সমর্থকদের চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে সৃষ্ট গন্ডগোল এবং একজন মুসলিম আইনজীবীকে হত্যার পরেও তা থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না বাঁধা। সংখ্যালঘু হিন্দুরা পিটিয়ে একজন মুসলিমকে মেরে ফেলেছে এই তথ্যাটি বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর । উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আশংকা হয় যে এই নিয়ে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা হিন্দুদের উপর প্রচন্ড চড়াও হয়ে উঠবে।
কিন্তু, তা হয়নি। এই দেশের মুসলিমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাননি। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সুশীল সমাজের নেতারা কোনরকম রায়ট লাগতে দেননি। অথচ, অনুরূপ ঘটনা ভারত বা পাকিস্তানে ঘটলে মর্মান্তিক ব্যাপার হতো বলেই ধারণা করা যায়। ভারতে অতি তুচ্ছ কারণে মুসলিমসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হওয়াটা গত কিছুবছর ধরে প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে।
হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পর তাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত প্রথম থেকেই বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ও উসকানি দিচ্ছে। ভারতীয় সরকার বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া সীমিত করে দিয়েছে। হিন্দু নিধনের কাল্পনিক ও বাড়াবাড়ি সংবাদ প্রচার করছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে নিজেদের সীমা ছাড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে হাসিনার ক্ষমতা হারানোয় তারা দিশেহারা হয়ে গেছে।
একই ব্যাপার ভারতীয় মিডিয়ার বেলাতেও ঘটেছে। কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলছে, বাংলাদেশকে রীতিমত ইসলামী জঙ্গিদের দেশ বানিয়ে এই দেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা। গত ১৬ বছরে অবিরত লুটের টাকা ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।
এরই একটা ধাপ ছিলো চিন্ময়ের গ্রেপ্তার ঘিরে হত্যাকাণ্ড। সংখ্যালঘুদের উপর দোষ চাপিয়ে সংখ্যাগুরুদের ক্ষেপিয়ে তুলে দাঙ্গা বাধানোর এই কৌশল উপমহাদেশে শত বছর ধরে চলে আসছে। তবে, এইবার বাংলাদেশিরা সেই ফাঁদে পা দেয়নি।
জুলাই আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সেই আন্দোলনের একতা ও প্রেরণা আমাদের অনেক বেশি সাবধানী, সতর্ক করেছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হবে, ঐক্যে ফাটল ধরানো হবে। তা করতে পারলে পরাজিত হায়েনাদের সুবিধা হবে।
বাংলাদেশে হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘু ততোটাই বাংলাদেশি যতোটা এদেশের মুসলিমরা। সবাই মিলে থাকাটা, এক হয়ে উঠাটাই এই দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো। জুলাই আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে।