সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। গেতকাল ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ। ছবি: সৌরভ দাশ
ভারতের হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্রতি নতজানু হয়ে এতকাল বাংলাদেশকে কার্যত ভারতের করদ রাজ্য বানিয়ে রাখা হাসিনাশাহীর পতনে তারা দিশেহারা। যে করেই হোক, বাংলাদেশকে ইসলামি জঙ্গিবাদের দেশ প্রমাণ করে, এই দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে তারা বিশ্বের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়। বাংলাদেশে হিন্দুরা বিপদে আছে এই ভয় দেখিয়ে ভারতে হিন্দুত্ববাদের শক্তিকে আরো সুসংহত করা এবং সেদেশের মুসলিমদের আরো বেশি নিপীড়ন করার ক্ষেত্র তৈরি করতে চায় এই গোষ্ঠী।
এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হচ্ছে ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা। যাতে খুন হন সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন সরকারি আইনজীবী। সোমবার হিন্দুধর্মীয় নেতা চিন্ময়কে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন।
তখন পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী চেষ্টা করেও প্রিজন ভ্যান আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করে কারাগারে নিতে পারেনি। পরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটা শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এরপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। পরে চিন্ময় কৃষ্ণকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান কারাগারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। চিন্ময় সমর্থকরা এসময় আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এই হত্যাকান্ডের জেরে চট্টগ্রামসহ গোটা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। হাসিনা পালানোর পর থেকেই ভারত বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষ দেখাচ্ছে। হাসিনাকে সে দেশে আশ্রয় দিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে ভিসা দেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে, যদিও এদেশের মানুষ সেদেশে গিয়ে নানা খাতে বিপুল খরচ করে, তবুও। আর, সবচেয়ে বড় কথা, সরকারি প্রেসনোট আর মিডিয়া বাংলাদেশে হিন্দু নিধন ও অত্যাচারের বানোয়াট খবর নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে।
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলালেই ধরে নেয়া যায় যে, চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার পিছনেও ভারত ও আওয়ামী লীগেরই কারসাজি রয়েছে। যেকোনো উপায়ে তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চায়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ হিন্দুই শান্তিপ্রিয়। তারা এই দেশেরই মানুষ। তদুপরি, বেশির ভাগ মানুষেরই এই বুদ্ধিটুকু আছে যে, দাঙ্গা বাধলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হবেন সংখ্যালঘুরাই। দুনিয়ার যে দেশেই দাঙ্গা বাঁধে, সংখ্যালঘুরা ভয়াবহ রকম বিপর্যয়ে পড়ে। ফলত, তাদের দিক থেকে উসকানি দেয়াটা আত্মহত্যার শামিল। যারা এদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারাই এই উসকানি দেয়, ষড়যন্ত্র করে।
পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নানা ষড়যন্ত্র বিদ্যামান। ভীষণ শক্তিতে তারা এই দেশের ক্ষতি করতে চাইছে। কিন্তু আমাদের এই ফাঁদে পড়া চলবে না। আমাদের একতা ধরে রাখতে হবে, যা দিয়ে আমরা হাসিনার মতো দানবের পতন ঘটিয়েছি।