Logo
Logo
×

অভিমত

শ্রমিকদের রক্ষা করতে না পারলে জুলাইয়ের চেতনা হারিয়ে যাবে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

শ্রমিকদের রক্ষা করতে না পারলে জুলাইয়ের চেতনা হারিয়ে যাবে

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই মাসের ১৭ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত যারা যাত্রাবাড়ী, উত্তরা কিংবা আশুলিয়া এলাকায় ছিলেন তারা জানেন কি অসম সাহসিকতায় সেই অঞ্চলের মানুষেরা খুনি হাসিনার পুলিশকে প্রতিরোধ করেছিল। নির্বিচারে গুলির বিরুদ্ধে এইসব মানুষ স্বৈরাচারকে পতনের শপথ নিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এদের বেশিরভাগই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচার, খুনি হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে, পতন হয়েছে দুঃসহ আওয়ামী শাসনের। তবে ছাত্র-জনতা বলা হলেও এই আন্দোলনে আসলে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা ছিল শ্রমিক শ্রেণির মানুষের। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাসিনাশাহী স্তব্ধ করে দিতে পেরেছিল, অনেক স্থানে ছাত্ররাও নিরুপায় ছিল, ইন্টারনেট বন্ধ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জুলাইয়ের ২৪ তারিখের পর মনে হচ্ছিল আরও বহুবারের মতো হাসিনা এবারও সামলে নিলো। মধ্যবিত্তের মনে আবার হতাশা গ্রাস করছিল। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি হাল ছাড়েনি, মাথা নোয়ায়নি। মৃত্যু অথবা মুক্তির দৃঢ় শপথে তারা লড়ে গেছে। শেষদিন যখন ঢাকার তিন প্রান্ত থেকে জনতার ঢলের ভয়ে হাসিনা পালালো, সেই সময় পর্যন্ত। 

আরও অনেক আন্দোলনের মতো রিকশাওয়ালারা ছিলেন অনবদ্য। তারা মিছিল করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহতদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন, নিহতদের টেনে নিয়ে গেছেন। নিজেরাও অনেকে মরেছেন। আহত হয়েছেন অগণিত। 

অবশ্য, যথারীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর তাদের স্থান হয়নি। তাদের অবদানকে রীতিমত ভুলে যাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই না, এখন তারা রীতিমত জীবিকার জন্য লড়াই করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

সরকার পতনের পরপরই আওয়ামী সমর্থক কারখানা মালিকদের একটা অংশ পালিয়ে গেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধে ধৃত। এদের কারখানাগুলোতে বেতনভাতা ঠিকঠাক মতো দেওয়া হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ এই সুযোগে শ্রমিকদের নায্য হক মেরে দিচ্ছে। কেউ কেউ শ্রমিক এলাকাগুলোতে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে গণতান্ত্রিক আলাপের সুযোগ এখনও তৈরি হয়নি। বঞ্চিত শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে তাই রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে। 

একই ব্যাপার ঘটছে রিকশাওয়ালাদের নিয়েও। ব্যাটারি রিকশাকে অবারিতভাবে বাড়তে দিয়ে, কোনরকম কমিশন না করে, কোনরকম বিধি না করেই লাখো লাখো মানুষকে এই পেশায় আসতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অথচ, প্রায় বিনা নোটিশে তাদের উৎখাতের কথা বলা হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের বীর রিকশাচালকরাও জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় রাস্তায় নেমেছে। 

শ্রমিকদের এই মরিয়া হয়ে উঠা কোনভাবেই জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই অবস্থার জন্য হাজারো মানুষ জীবন দেয়নি। শ্রমিকদের নায্য অধিকার না দিলে জুলাই আন্দোলনের চেতনা তো বটেই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রও গভীর সংকটে পড়বে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন