ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা অত্যাবশ্যক
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। এই চিরচারিত সত্যটি বাংলাদেশের জন্য আবারো প্রাসংগিক হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবোজ্বল ইতিহাসকে আবারো সমৃদ্ধ করে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারকে হটিয়েছে এক রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুথানে। কিন্তু, প্রায় চার মাস চলে গেলেও দেশের সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়নি। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবকিছুই অনিশ্চিত।
অবশ্য, যেকোনো বড়সড় অভুথানের পরই এমনটা হয়। পরাজিত শক্তির রেখে যাওয়া জঞ্জাল তো আছেই, এক সময়ে যারা একজোট হয়ে লড়াই করেন তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিজেরা ভাগ হয়ে পড়েন। অনেক সময় প্রতিবিপ্লব এসে হাজির হয়।
আর যেটা হয়, তা হচ্ছে প্রতিহিংসা। যারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করেছে তাদের উপর রাগের বহিঃপ্রকাশ অনেক সময় বাড়াবাড়ি রকম হয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশে তেমনটা হয়নি। যদিও হাসিনা পালানোর পর ব্যাপক ভাংচুর হয়েছে, পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। কিন্তু, তা থেমে গেছে দ্রুতই। হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে খুনে বাহিনীতে পরিণত করায় ক্রোধ প্রকাশ স্বাভাবিকই ছিলো, বরং পুলিশশূন্য দেশে আশংকার চেয়ে অনেক কম নৈরাজ্য হয়েছে।
তবে, দালান ভাঙ্গার চেয়ে গড়া কঠিন। আওয়ামী লীগ আমলে বিপুল সংখ্যাক লুটেরা এই দেশকে ধংস করে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রথম ধাপ হচ্ছে এদের বিচার করা। নায্যতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তা না করে যদি রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার দিকে যাওয়া হয় তবে প্রতিশোধের চক্র চলতেই থাকবে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো মানুষদের দশকের পর দশক নিষ্পেষণ করার পর যখন নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে বর্ণবাদ ঘুচলো, তখন এই মহান নেতা প্রতিশোধের দিকে না গিয়ে ন্যায়বিচার ও দেশকে সংহত করার দিকে জোর দিয়েছেন। সব সাদা মানুষকে হরেদরে শাস্তি না দিয়ে, নিষিদ্ধ না করে ন্যায়বিচারের জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছেন। এর ফলে গৃহযুদ্ধ এড়ানো গেছে।
কম্বোডিয়াতে একই রকম ঘটনা ঘটেছে খেমাররুজদের পতনের পর। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতেও বিচার প্রক্রিয়াতেই নায্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকেও এই পথে হাঁটতে হবে।
প্রতিটা খুনের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। লুটপাটের বিচার করতে হবে। এরপর গণতন্ত্রের শর্ত মেনে বাকিদের রাজনীতি করার সুযোগ দিতে হবে। গণতন্ত্রে কোনো মতকেই দমন করার সুযোগ নেই। অপরাধ করলে শাস্তি অবশ্যই দিতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে, কিন্তু মতকে দমন করা যাবে না।
এর জন্য প্রথম কর্তব্য ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা। এই কমিশন প্রতিটি সত্য খুঁজে আনবে এবং দেশের স্থিতিশীলতা আনতে রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।