নির্বাচন বিষয়ে সরকারকে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পিএম
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম স্বৈরাচারের শাসনামলে গণতন্ত্রে ভোটের গুরুত্ব কতোটা তা বোঝা গেছে। এদেশের ভোটাভুটি ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে, ভোটে জিতে আসা সরকারদেরও জনবিরোধী হবার নজির আছে, কিন্তু ভোট ব্যবস্থা না থাকলে যে অবধারিতভাবে স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী শাসকের জন্ম হয় তা নিশ্চিত।
শেখ হাসিনার প্রবল প্রতাপশালী সরকারের পতন হয়েছে জনগণের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে। আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিলো মানুষ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তো ছিলোই, ইসলামী হোক, বামপন্থী হোক, দলমতনির্বিশেষে মানূষ রাস্তায় নেমে জীবন দিয়েছে। ছাত্রদের ডাকা আন্দোলন পরিণত হয়েছিলো গণআন্দোলনে।
হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হন সারা দুনিয়ায় অন্যতম শ্রদ্ধেয় মানুষ মোহাম্মদ ইউনুস। আওয়ামী অপশাসনের ধংসের উপর দাঁড়িয়ে তাঁকে এই কঠিন দায়িত্বটি নিতে হয়। দেশের একাংশের মানূষ আশা করেছিলো, কেবল সরকারের পতন নয়, বরং দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার হবে।
কোনো সন্দেহ নেই, ষোল বছরের জঞ্জাল তিন মাসে সরানো কঠিন। ফলে, রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত সরকারকে সংস্কার করার বেলায় যথেষ্ট সময় দিতে রাজি। কিন্তু, এই সরকার আন্দোলনের পর কোনো রকম বিপ্লবী রাস্তায় না হেঁটে সংবিধান মেনে চলাটাকেই শ্রেয় মনে করেছে। আওয়ামী আমলে নিযুক্ত প্রেসিডেন্টকে পদে বহাল রেখে তারা শপথ নিয়েছেন এবং দেশশাসনে কোনো বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেননি।
অরাজনৈতিক সরকার হওয়ার ফলে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধিত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে কাজ চালানোর ফলে জনতার সাথে একধরনের দূরুত্ব তৈরি হয়েছে। তদুপরি, জবাবদিহিতার ব্যাপারেও প্রশ্ন চলে আসছে।
এ অবস্থায় এই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘকালের আকাঙ্ক্ষিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রকে আবার সঠিক পথে নিয়ে আসা। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ শোষণে বুঝেছে, ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। জবাবদিহিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জনগণের সবচেয়ে বড় শক্তি।
এর মানে এও না যে, এই মূহুর্তেই ভোট হতে হবে। সরকার নানা ধরনের সংস্কার করার জন্য অনেকগুলো কমিটি করেছে। সেইসব কমিটির সুপারিশ ও সেগুলো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে দেশ। সেগুলোর জন্য সময় লাগবে। তবে তিন মাসের মধ্যে সরকারের নিশ্চিতভাবেই একটা ধারণা হয়ে গেছে যে, কতোদিন নাগাদ, কোন কর্মপরিকল্পনায় ভোট আয়োজনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
রাজনৈতিক সুস্থিরতা ও সামগ্রিক অবস্থা বিচারে জনতাকে এই পরিকল্পনা খুলে বলতেই হবে। এই নিয়ে কালক্ষেপণ করলে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যেই সরকারের নানা বিষয়ে জনমনে কিছুটা অসন্তোষ আছে, অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এই অসন্তোষ ভালো লক্ষণ নয়। আন্দোলনের পরে একটা দেশের জন্যও তা অশনি সংকেত।
তাই, সরকারকে অতিসত্বর তাদের নির্বাচন বিষয়ে পরিকল্পনা ও সময় বিশদে জানাতে হবে। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য তা অত্যন্ত জরুরি।