Logo
Logo
×

অভিমত

সেন্টমার্টিন এবং একটি দৈত্যের গল্প

আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি

আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম

সেন্টমার্টিন এবং একটি দৈত্যের গল্প

সেন্টমার্টিন

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জেগে থাকা প্রকৃতির স্বর্গ খ্যাত ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র পালাউ। এই দেশটির অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন খাত এবং এর পরেই রয়েছে মৎস্য ও জলজ সম্পদ। বোঝাই যাচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণের আয়ের উপর নির্ভর করে এই দেশটির মানুষদের জীবিকা।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসেন প্রতিবছর। এখানে ভ্রমণ করতে গেলে বিমানে যাত্রীদের এক লোভী দ্বৈত্যের গল্প দেখানো হয়। গল্পের সেই দৈত্যটি এতো লোভী যে তার লোভের কারণে প্রাণ প্রকৃতি সব উজার হয়ে যেতে শুরু করে। তবুও তার ক্ষুধা মেটে না। দিন দিন সে আরো লোভী হতে শুরু করে। একে একে খেতে থাকে গাছ-পালা, পাহাড় সামুদ্রিক প্রাণি সবকিছু। সেই লোভী দৈত্যের কবলে পরে ধ্বংস হতে থাকে দ্বীপ। তার কারণে যখন শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পরে তখন দ্বীপবাসী মিলে সেই দৈত্যকে হত্যা করেন।

এই লোভী দ্বৈত্যটির মাধ্যমে রূপকভাবে দেখানো হয় প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী পর্যটন ব্যবস্থাকে। ফলে এই দেশে পা ফেলার আগেই আপনাকে যে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে সেটি হলো আপনি কি সেই লোভী দৈত্য হবেন কিনা, যে নিজের ভোগ বিলাসিতার জন্য শিশুদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন? তাকে স্বরন করিয়ে দেওয়া হয় তিনি যেন এই প্রবাল দ্বীপের পরিবেশ প্রাণ বৈচিত্র্যের ক্ষতি না করেন, তিনি যেন সেই লোভী দানব না হয়ে ওঠেন।

আরো একটি দারুণ বিষয় হলো এই দেশে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করতে হবে, সেই অঙ্গীকার নামায় লেখা থাকে- ‘হে পালাউয়ের সন্তানেরা, আমি এই অঙ্গীকার করছি যে আপনাদের অতিথি হিসেবে আপনাদের এই সুন্দর এবং  প্রাণবৈচিত্র্যময় দ্বীপের সৌন্দর্য এবং অনন্যতা রক্ষা করবো। আমি শপথ করছি যে আমি এখানে ধীরস্থির ভাবে চলাচল করবো। উদার আচরণ করব এবং অন্তর দিয়ে সবকিছু অনুধাবন করব। যা আমার জন্য নয়, আমি তা গ্রহণ করব না। যা আমার জন্য বিপদজ্জনক নয়, আমি তার ক্ষতি করব না। আমি শুধু সেই পদচিহ্ন রেখে যাব, যা কেবল সমুদ্রের জলে ভেসে যাবে।’

এখানকার পরিবেশ আইনও বেশ কড়া। আপনি চাইলেই সব জায়গায় যেতে পারবেন না। শুধু বিদেশি পর্যটক না ওই দেশের জনগণের জন্যও সর্বত্র অবাধ পর্যটনের পসরা বসানোর সুযোগ নেই। এই দেশটির ৮০ ভাগ জল সীমানাই সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত। এই সংরক্ষিত অঞ্চলই এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। পৃথিবীর বহু বিরল প্রাণের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

এবার আসি হিমালয় বেষ্টিত পাহাড়ের দেশ ভুটানে। এই দেশটিরও প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন। পরিবেশ বিষয়ে খুবই সচেতন এই রাষ্ট্রটির পৃথিবীর বুকে আরেকটি পরিচয় হলো ‘জিরো কার্বন’ এর দেশ। নিজেদের দূষণমুক্ত পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচয় দিতেই তারা ভালোবাসেন। কাজেও সেই স্বাক্ষর রেখেছেন। অবাধ পর্যটন রুখতে তারা পর্যটন ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন। যাতে করে পর্যটকদের স্রোত ঠেকানো যায় । এ নিয়ে কিছুদিন ভুটানের অনেক নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দেশের স্বার্থে তারা সেটা মেনেও নিয়েছেন।

প্রশান্ত মহাসাগর কিংবা হিমালয় বেষ্টিত দেশের গল্প থেকে এবার চোখ রাখতে চাই বঙ্গোপসাগরের পাড়ের দেশ বাংলাদেশে। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় সম্প্রতি পর্যটন প্রবেশ সীমিত করে আনা নিয়ে বেশ হইচই শুরু হয়েছে। একদিকে চলেছে নানা কূরাজনীতি গুজব এবং মিথ্যা প্রচারণা অন্যদিকে পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় বিক্ষোভ।

এটা সত্য যে পর্যটন সীমিত আকারে হলে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু অবাধ আগ্রাসী পর্যটন ব্যবস্থা যে সেন্টমার্টিনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে এখন প্রায় বিপন্ন করে দিয়েছে সেই নির্মম সত্যকে অগ্রাহ্য করে কি আমরা আমাদের হোটেলে মোটেল রিসোর্টকেন্দ্রিক বাণিজ্যের বিকাশ ঘটাবো? এই প্রশ্নটিকেও আমাদের সামনে আনতে হবে।

শুধু সেন্টমার্টিনে না আমাদের পর্যটন মানেই আগ্রাসী পর্যটন। আমাদের পর্যটন ভ্রমণ বিলাসিতার ধরনই হলো প্রকৃতিকে অনুভবের চেয়ে প্রকৃতিকে ভোগ করা, ধ্বংস করার বিনোদনে বিলাসিতায় মেতে থাকা। এ যেন পালাউ দ্বীপপুঞ্জের সেই লোভী দ্বৈত্যর গল্প, মাত্র কয়েক দশকেই যার ভয়াল স্বীকারে পরিণত হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এই সেন্টমার্টিন।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরোনো এই দ্বীপটিকে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর । ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নাল–এ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে। বিশ্বজুড়ে বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিম, চার প্রজাতির ডলফিন, বিপন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা বন্য প্রাণির বাস এই দ্বীপে। এসব প্রাণীও দ্বীপটি ছেড়ে চলে যাবে। 

একই বছর সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসের আরেক গবেষণায় উঠে আসে দ্বীপ রক্ষা করতে গলে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নাই।  তারা প্রস্তাব রাখেন দ্বীপটিতে কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না। শীতে পর্যটন মৌসুমে দিনে ১ হাজার ২৫০ জনের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া ঠিক হবে না।

২০১৯ সালেই পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছিল মানুষের চাপে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এদিকে পর্যটন ব্যবসা ঘিরে রীতিমতো গড়ে উঠেছে দখল দূষণ আর ধ্বংসের উৎসব। ২০২৩ সালে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে প্রথম ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। ২০১৮ সালে ভবন ছিল ৪৮টি আর ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮টিতে। ওই বছর আরো ৩০টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছিলো।  ওই প্রতিবেদনেই বলা হয় হোটেল রিসোর্ট নির্মাণের কারণে সেন্টমার্টিন রক্ষা দেয়াল হিসেবে পরিচিত ২০ কিলোমিটার জুড়ে থাকা কেয়া বন কমে ৮ কিলোমিটারে দাঁড়ায়।

২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১৪টি বিধিনিষেধ আরোপ করে। যার ভেতর রয়েছে সেন্টমার্টিনের সৈকতে আলো জ্বালিয়ে বারবিকিউ, দোকানপাটে বেচাকেনা, সৈকতের পাথরে সংগ্রহ, মোটরসাইকেলসহ যেকোনো ধরনের যানবাহনে চলাচল নিষিদ্ধ । বারবার সেন্টমার্টিন রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণের কথা আসলেও পর্যটন মাফিয়াদের দাপটের কারণে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। আগ্রাসী পর্যটনেরই বিকাশ হয়েছে সর্বত্র। লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও দখল দূষণ থামেনি। ফলে সেন্টমার্টিন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

এবার সরকার বেশ জোড়ালো ভাবেই সেন্টমার্টিন রক্ষায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা অনেকটা বিড়ালের গলায় ঘন্টাবাধার মতো কাজ। কারণ এতে অনেক পর্যটকরা যেমন মনক্ষুণ্ন হয়েছেন তেমনি সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টরাও ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

তবে সেন্টমার্টিনের যে অবস্থা তাতে কিন্তু পর্যটন নিয়ন্ত্রণের এই পদক্ষেপ এখনই না হলে আর কবে? তবে এমন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে সাথে আমাদের কিছু প্রস্তুতিও রাখতে হবে। এখানকার অনেক মানুষই পেশা পরিবর্তন করে পর্যটন নির্ভর হয়ে উঠেছে। অনেক ব্যবসা গড়ে উঠেছে এই পর্যটনকে ঘিরে। তাদের জন্য সরকারকে আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হবে। সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার কথা ভাবতে হবে। আর সে জন্য আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনা সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের এটাও পরিস্কারভাবে প্রকাশ করতে হবে যে পরিবেশ রক্ষা মানে কারো জীবন জীবিকাকে ধ্বংস করা না, বরং জীবনকে অর্থময় টেকসই করে গড়ে তোলা। আর বিশেষ পরিকল্পনা আর পদক্ষেপের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন হতে পারে এর মডেল। সেন্টমার্টিনের তরুণ শিক্ষার্থীরা আগ্রাসী পর্যটনের পক্ষে না দাঁড়িয়ে বরং নতুন নতুন ভাবনা দাবি দাওয়া প্রস্তাবনা সরকারের সামনে তুলে ধরুক। সেটাই হবে তাদের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাভিত্তিক পরিচয়ের দারুণ পদক্ষেপ। পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করেও , কীভাবে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় এসব নিয়েই বরং এখন আমাদের আলোচনা প্রস্তাবনা পরিকল্পনা হওয়া উচিত। সেন্টমার্টিন রক্ষার প্রশ্নে সমাধানে আসতে হলে প্রথম দরকার ভাবনার ঐক্য। যদি জীবিকা কিংবা এখাতে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কার প্রশ্নেই এতো ক্ষোভ বিক্ষোভ বিরোধীতার কথা সামনে আসে তাহলে সেটার সমাধান নিয়েইতো আমাদের বসতে হবে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে গত দুই দশকে সব রকম নিয়ম নীতি তোয়াক্কা করে যত্রতত্র অপরিকল্পিত সব স্থাপনার সৃষ্টি করা হয়েছে। নিয়মবহির্ভূত যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর বিষয়েও সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

আমাদের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদকে যেমন রক্ষা করতে হবে তেমনি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকার বিষয়টিও। দ্বীপবাসীর জন্যও আলাদা করে সামাজিক প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী শ্রেণির জন্য উপভোগ্য পর্যটন কীভাবে এই দ্বীপের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সেই আলোচনা সামনে আনতে হবে।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের প্রাণ প্রকৃতি ও সংকটাপন্ন এইসব অঞ্চলে পর্যটন ব্যবস্থা যেন হয়ে ওঠে প্রকৃতি রক্ষার শিক্ষা সফর হিসেবে। একজন দেশি-বিদেশি পর্যটক যেন এইসব স্থানে এসে অনুভব করে প্রকৃতি কোন ভোগ বিলাসের বস্তু নয়। প্রকৃতি হৃদয় দিয়ে অনুভব করার বিষয়। ধ্বংস নয়, সংরক্ষণই হোক আমাদের পর্যটনের দীক্ষা। একজন পর্যটককে আমাদের ভাবাতে হবে- তার এ ভ্রমণ যেন প্রকৃতিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত না হয়। তাকে অঙ্গীকার হবে প্রাণ প্রকৃতিকে বিপন্ন করা ‘রিলাক্স’ প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 

সেন্টমার্টিন দিয়েই সেই যাত্রা শুরু হোক। তৈরি হোক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। আর এই ইতিবাচক পদক্ষেপই এক সময় বিশ্ব পরিমণ্ডলে সংবেদনশীল পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে নতুন আরাধ্য স্থান! ভুলে গেলে চলবে না প্রকৃতি আমাদের যা দিয়েছে তা রক্ষা করাই সবচেয়ে টেকসই সমাধান হতে পারে।  সেন্টমার্টিন থেকে সুন্দরবন, পাহাড় থেকে হাওর, প্রকৃতির দান এইসব স্থানের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করাই হতে পারে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সবচেয়ে বড় প্রচারণা। সুতরাং পর্যটনকে দানব নয় প্রকৃতির বন্ধু হিসেবেই বিকাশিত হোক। এজন্য সরকারকে যেমন মনোযোগী হতে হবে, তেমনি দেশের জনগণের ভেতরও প্রকৃতি রক্ষার সংস্কৃতির বিকাশ চর্চা গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে হবে। 

সবশেষে আদিবাসীদের একটি প্রচলিত প্রবাদ উল্লেখ করছি, ‘তুমি যদি এই ভূমির যত্ন নাও সে তোমার যত্ন নিবে। কিন্তু তুমি যদি তাকে ধ্বংস করো তাহলে এই ভূমিও তোমাকে ধ্বংস করে দিবে।  আমাদের জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় দর্শনে এই সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পারলে আমাদের সকলের জন্যই মঙ্গল। তা নাহলে ভয়ংকর বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও অ্যাক্টিভিস্ট

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন