ছবি: প্রতীকী
২৬ বছরে পদার্পণ করলো প্রথম আলো। অনেক সমালোচনা থাকলেও সংবাদপত্রটি বাংলাদেশে বহুলপঠিত এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারী। কেবল সংবাদপত্র নয়, প্রথম আলো নানারকম মিডিয়া ও অমিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশাল কনগ্লোমারেট হয়ে উঠেছে। বিশাল শ্রেণির মানুষের মতামত গঠনে বড়সড় ভূমিকা রাখছে।
অভিযোগ আছে যে, প্রথম আলো এ দেশের বিরাজনীতিকরণে কাজ করে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে হটিয়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চায়। এর পিছনে ভারতীয় ও কর্পোরেট পুঁজি রয়েছে। তরুণদের মধ্যে নানা কৌশলে রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধা তৈরি করে বিরাজনীতিকরণ করতে চায়। প্রথম আলোর ‘স্মার্ট’ তরুণেরা রাজনীতিকে ‘নোংরামি’ হিসেবে দেখে এবং হরেদরে সব রাজনীতিকে সমানভাবে ঘৃণা করে।
বিগত আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় প্রথম আলোর ভূমিকা ছিল মিশ্র। নানাসময়ে হাসিনাশাহীর কোপানলে পড়েছে তারা। সরকারি বিজ্ঞাপন পায়নি। মামলা হয়রানির শিকার হয়েছে। এমনকি সংসদে হাসিনা নিজে বিষোদ্গার করেছে। কিন্তু, আওয়ামী লীগকে সুরক্ষা দিয়ে বিরোধীদেরকে খাটো করার অভিযোগও আছে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে। আবার জুলাই আন্দোলনের সময় পত্রিকাটির ট্রিটমেন্ট ছিল জনতার পক্ষে।
সেক্যুলার এই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর অভিযোগও আছে। বিশেষত জঙ্গি ন্যারেটিভ তৈরির যে ধোঁয়াশাপূর্ণ পশ্চিমা নীতি ছিল প্রথম আলো এর বড় সমর্থক বলে অভিযোগ আছে। বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই কারণে পত্রিকাটির উপর ক্ষুব্ধ।
এত কিছুর পরেও প্রথম আলো প্রবল প্রতাপে বিদ্যমান। যদিও, সম্প্রতি কেউ কেউ একে নিষিদ্ধ করার আওয়াজ তুলেছে। কেউ শোধ নেওয়ার কথা বলছে। তবে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এই ধরনের দাবি যুক্তিযুক্ত না। মিডিয়ার স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি আর যদি মিডিয়া জনবিরোধী হয়ে আরও বেশি বেশি জনবান্ধব মিডিয়াই কেবল পারে একে হটাতে।
প্রথম আলোর শক্তি এর উপস্থাপনা ভঙ্গি। আধুনিক যুগে এই গুণটা মিডিয়ার জন্য খুব জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশে বাকি সব মিডিয়া এই জায়গায় যোজন যোজন পিছনে। প্রথম আলোর আরেকটা শক্তি এর ভালো আর্কাইভ। এই জায়গাতেও বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল। আর নিউজ সোর্সিং করার বেলায় প্রথম আলো খুবই যত্নশীল। হয়তো মতামত বা নিউজের ভাষা আপত্তিকর হতে পারে কিন্তু সোর্সিংটা পুরোপুরি পেশাদারভাবে করে। এইসব কারণে লোকে প্রথম আলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, নির্ভরতা পায়।
ফলে, প্রথম আলোকে অপাঙ্ক্তেয় করতে এই জায়গাগুলোতে প্রথম আলোর চেয়েও শক্তিশালী হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আল-জাজিরার কথা বলা যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক হলেও এই চ্যানেলটি এখন দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মিডিয়া। এর সামনে ইউরোপ আমেরিকার শতাব্দী প্রাচীন মিডিয়াগুলোও অনেকটা ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। আল জাজিরা কেবল পশ্চিমা ঘেঁষা দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা করেছে।
তবে, এর জন্য পুঁজিরও দরকার হয়েছে। বিপুল পুঁজির সাথে ইউরোপ আমেরিকাসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে সেরা মেধাবীদের জড়ো করেছে। বাংলাদেশের মিডিয়াও আল-জাজিরা থেকে শিখতে পারে। গণবান্ধব, নিষ্ঠাবান মিডিয়া তৈরি করতে পুঁজি ও সময় দিতে হবে। সেরা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার্থে ভালো মিডিয়া লাগবেই।