শেখ হাসিনা পালানোর তিনমাস পূর্তি হতে চলেছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের জগদ্দল থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাইছে। হাসিনাশাহীর পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। দেশের মানুষ আশা করছে, আওয়ামী লীগ আমলে ধংস হয়ে যাওয়া ক্ষেত্রগুলোকে যথাসম্ভব সংস্কার করে এদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে সাহায্য করবে দুনিয়াজুড়ে নন্দিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। যথাযথ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেবে।
সন্দেহ নেই কাজটি বেশ কঠিন। বছরের পর বছর আওয়ামী লীগ সরকার কেবল লুটপাটই করেনি, জায়গায় জায়গায় দলীয়করণ করেছে। দেশের অর্থনীতি, রিজার্ভ সব ভঙ্গুর। পুলিশ প্রশাসনের অবস্থা তথৈবচ। সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্কারের। এই লক্ষ্যে অনেকগুলো কমিশন করা হয়েছে। উপদেষ্টা হিসেবে নিরলস কাজ করছেন নানা ক্ষেত্রের মেধাবী মানুষেরা।
কিন্তু, রাজনৈতিক সরকার ব্যতীত, জনগণের ম্যান্ডেট ব্যতীত, তলা থেকে এবং কোণায় কোণায় সংস্কার করা মুশকিল বলেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সরকারের রাজনৈতিক বাহিনী নেই যাদের সাথে জনগণের সরাসরি সংযোগ হবে। যার ফলে, প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক কিছুই স্থবির হয়ে আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনিক কাজকর্মে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা, পতিত স্বৈরাচারের দোসরেরা এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিপুল অর্থ লোপাট করায় তাদের শক্তি কম নয়। সেই শক্তি দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে তা দেখা যাচ্ছে। দেশে তো বটেই, এমনকি বিদেশেও ষড়যন্ত্র বিস্তার করছে। ভারতের মিডিয়া সংখ্যালঘু নিপীড়নের নামে অতিরঞ্জিত করছে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিরুদ্ধে টুইট করেছেন যা আওয়ামী লবির প্রণোদনাতেই করা বলে সন্দেহ হয়।
দেশের গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে না পারলে সামনের দিনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে। যদিও বিএনপি ধৈর্য ধরে সরকারকে সময় দিতে চাইছে। কিন্তু সরকারের কিছু অংশ এই ঔদার্যকে দুর্বলতা হিসেবে নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।
সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির কিংবদন্তী নেতা সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা একটা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। বুকের ওপর থেকে পাথর গেছে। কিন্তু পাথর গেলেও এখনো কিন্তু স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকে আছি। আমাদের জনগণের সরকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। এই সুনাম রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। যে দায়িত্ব আপনার ওপর পড়েছে, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। অর্থাৎ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত পার্লামেন্ট এবং সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যত দেরি করবেন, তত হাসিনারা আবার ফিরে আসবেন। তাই এখনো বলছি, আবারও বলছি, অতি দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। জঞ্জাল যা আছে, তা সাফ করে ফেলুন। দায়িত্বটা আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় সহযোগিতা করেছি। আপনারাও সহযোগিতা করেন।’
ফখরুল সাহেবের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দেশকে রক্ষা করবেন বলে আশা করছে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষরা।