শুধু নিষিদ্ধ নয়, ছাত্রলীগের কুকীর্তির বিচার করাও জরুরি
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসক হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গত ১৬ বছরে এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। হাসিনা পালিয়েছে, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। আর এর আড়াই মাস পর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এসব কারণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২-এ এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।
আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রলীগ শিক্ষাঙ্গণসহ গোটা দেশে বহু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। দর্জির কাজ করা বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে মারে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা। আওয়ামী লীগের আগের আমলে ১০০ ধর্ষণ করা ছাত্রলীগ নেতা মানিক সেঞ্চুরিয়ান মানিক নামে পরিচিত হয়েছিল। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এই সংগঠনটি ছিল বেপরোয়া আর সমস্ত ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এদের ব্যবহার করতো ক্ষমতাসীন নেতারা। জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলনে সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডেও এই সংগঠনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের নানা স্থানে আনন্দ মিছিল হয়। কিন্তু কেবল নিষিদ্ধ হলেই হবে না দীর্ঘসময়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা এই সংগঠনের দোষীদের যথাযথ বিচার করতে হবে। ছাত্রলীগের পরিচয়ের কারণে ১৬ বছর যাবত দেশের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এখনও এদের সংখ্যাধিক্য আছে। এইসব নিয়োগ নিয়ে তদন্ত করতে হবে। সন্ত্রাসী এই সংগঠনের সদস্যরা যাতে পতিত স্বৈরাচারকে আবার প্রতিষ্ঠা না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচার না করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে, কেবল নিষিদ্ধ করে ন্যায়বিচার কায়েম হবে না।