Logo
Logo
×

অভিমত

মাহফুজ আনাম সমীপে

Icon

শেখ ওমর

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম

মাহফুজ আনাম সমীপে

মাহফুজ আনাম। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর ২০২৪) ডেইলি স্টারে মাহফুজ আনাম Hasina’s misrule should not affect our judgement of Bangabandhu—The history of Liberation War must be honoured (হাসিনার দুঃশাসনের মাপকাঠিতে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করা ঠিক হবে না—স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে) শিরোনামে যে কলামটি লিখেছেন, সেটি সেই রাজনৈতিক ন্যারেটিভের ওপরই প্রতিষ্ঠিত, যে ন্যারেটিভটি হাসিনার দুঃশাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো।

পুরো কলামটিতে তিনি যেহেতু একটি ব্যর্থ ও পতিত স্বৈরতন্ত্রের ন্যারেটিভকে পলিশড আকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই পুরো কলামজুড়ে তার আর্গুমেন্টগুলো অপূর্ণাঙ্গ, অর্ধ সত্য, পক্ষপাতদুষ্ট ও স্ববিরোধী। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত মূল ইংরেজি কলামটির সাথে ডেইলি স্টারের অনলাইন বাংলা ভার্সনে প্রকাশিত বঙ্গানুবাদে কিছু গরমিল রয়েছে। দুটোই ডেইলি স্টারের অফিসিয়াল প্রকাশনা, তাই ইংরেজি কলামটিকে অথেন্টিক টেক্সট এবং বঙ্গানুবাদটিকে অনুমোদিত টেক্সট ধরে নিয়ে দুটি ভার্সনের বক্তব্যই এখানে খণ্ডন করা হলো।  

মূল ইংরেজি কলামে লেখা মাহফুজ আনাম লিখেছেন:

Bangabandhu is a giant of history and the supreme leader of our independence movement. There were many others, such as Maulana Abdul Hamid Khan Bhashani, Huseyn Shaheed Suhrawardy, Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq, Tajuddin Ahmad, Syed Nazrul Islam, and Gen MAG Osmani. History will judge them all and give them their due place.

 মাহফুজ আনাম এই অংশটুকুতে ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-তাজউদ্দিন প্রমুখের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকার বিচার ইতিহাসের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা ইতিহাসে উপযুক্ত স্থান পাবেন বলে ভরসা করছেন। কিন্তু সেই মাহফুজ আনামই শেখ মুজিবের ক্ষেত্রে ইতিহাসের বিচারের হাতে মুজিবকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন না, বরং তিনি নিজেই এই কলামে মুজিবকে ইতিহাসের জায়ান্ট, সুপ্রিম লিডার ও [সবচেয়ে আপত্তিকর হলো] ‘indisputable’ (তর্কাতীত) ঘোষণা করছেন!

উপরে উদ্ধৃত অংশটির বঙ্গানুবাদ ডেইলি স্টারের বাংলা ভার্সনে এভাবে করা হয়েছে:

আমাদের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বোচ্চ নেতা। মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, জেনারেল ওসমানীসহ আরও অনেকেরই অবদান রয়েছে এই সংগ্রামে। নিজ নিজ অবদান অনুযায়ী ইতিহাসের পাতায় তাদের অবিস্মরণীয় অবদান ইতোমধ্যেই স্বীকৃত।

ভাবানুবাদ হিসেবে ‘giant of history’-এর স্থলে ‘ইতিহাসে অবদান অবিস্মরণীয়’ যথাযথ নয়, কিন্তু ‘History will judge them all and give them their due place’ [প্রকৃত অর্থ: ইতিহাস তাদের সবার বিচার করবে এবং তাদের উপযুক্ত স্থান দেবে] অংশটির বঙ্গানুবাদে অর্থটি অনেকটাই বদলে দিয়ে লেখা হয়েছে: ‘নিজ নিজ অবদান অনুযায়ী ইতিহাসের পাতায় তাদের অবিস্মরণীয় অবদান ইতোমধ্যেই স্বীকৃত।’

অর্থাৎ বাংলা ভার্সনে মাহফুজ আনাম কিন্তু ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-তাজউদ্দিন প্রমুখকে ইতিহাসের বিচারের হাতেই রাখেননি, বরং ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিজ নিজ অবদান অনুযায়ী ইতিহাসের পাতায় তাদের অবিস্মরণীয় অবদান ইতোমধ্যেই স্বীকৃত’।

বাংলা ভার্সনে করা মাহফুজ আনামের এই দাবিটি মোটেও সঠিক নয়। ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-তাজউদ্দিন-সৈয়দ নজরুল-ওসমানী প্রমুখের ‘নিজ নিজ অবদান অনুযায়ী ইতিহাসের পাতায় তাদের অবিস্মরণীয় অবদান’ ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পায়নি। বিশেষত পতিত ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়ে তো এরা মোটেও স্বীকৃতি পাননি।

 মোটা দাগে, মাহফুজ আনাম ও শেখ হাসিনার সমস্যা প্রায় একই। এরা ইতিহাস বিচারের সময় মুজিবের ক্ষেত্রে একটি অবস্থান নেন, কিন্তু ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-তাজউদ্দিন-জিয়ার ভূমিকার প্রশ্নে সম্পূর্ণ বিপরীত আরেকটি অবস্থান নেন। এবং সবচেয়ে আপত্তিকর হলো, মাহফুজ আনাম ও শেখ হাসিনা মনে করেন ইতিহাসে মুজিবের ভূমিকা ‘indisputable’ (তর্কাতীত)! ইতিহাসের বিচারের ক্ষেত্রে মুজিবের ভূমিকাকে ‘indisputable’ (তর্কাতীত/প্রশ্নাতীত/‘কোনো দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই’) মনে করাটাই আসলে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী শাসনের মূল ভিত্তি। এই অবস্থানটিতেই মাহফুজ আনাম ও শেখ হাসিনা একাকার।

শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধকে এভাবে indisputable বানিয়েই ডেইলি স্টার-প্রথম আলো গং হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ গড়তে সহায়তা করেছেন।

এখন দেখা যাক, এই কলামটিতে মাহফুজ আনামের আর্গুমেন্টগুলো কিভাবে অপূর্ণাঙ্গ, অর্ধ সত্য, পক্ষপাতদুষ্ট ও স্ববিরোধী।

অপূর্ণাঙ্গতা

কলামের শুরুতেই মাহফুজ আনাম আশ্চর্য হয়েছেন ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট, ৪ নভেম্বর (গণপরিষদে যেদিন সংবিধান গৃহীত হয়)—এই তিনটি দিনকে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এবং শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে বিবেচনা না করে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেওয়ায়।

কিন্তু তার কলামটিতে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব নিয়ে কিছু কথা থাকলেও মাত্র ৩ বছর আগে ২০২১ সালে ‘জাতীয় দিবস’-এর স্বীকৃতি পাওয়া এই দিনটিকে কেন এখনো ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবেই পালন করতে হবে—সেটার পক্ষে তেমন কোনো বক্তব্য নেই। ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালন করাটাই কোনো একটি বিশেষ দিনকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দেওয়ার একমাত্র/অপরিহার্য উপায় কিনা—সেই আলোচনা তো মোটেই নেই। পুরো কলামজুড়ে বহু রিপিটেশন থাকলেও ১৫ আগস্ট বা ৪ নভেম্বর (গণপরিষদে যেদিন সংবিধান গৃহীত হয়) কেন ‘জাতীয় দিবস’ হতে হবে, সেই আলোচনাও নেই। বিশেষত ৪ নভেম্বর প্রশ্নে কোনো আর্গুমেন্ট নেই। ৪ নভেম্বরের গুরুত্ব থাকলে ১০ এপ্রিল বা ১৭ এপ্রিলের গুরুত্ব কেন নেই, কিংবা ৪ নভেম্বর / ১০ এপ্রিল / ১৭ এপ্রিল ইত্যাদি সবগুলোকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালন করলে বাংলাদেশে বছরে আর কয়টা ‘বিজাতীয় দিবস’ বাকি থাকবে—সেই প্রশ্নেরও কোনো মীমাংসা মাহফুজ আনামের কলামের ধারে-কাছেও নেই।

মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ না মানার ব্যাপারটি নিয়েও মাহফুজ আনাম ‘আশ্চর্য’ হয়েছেন, কিন্তু কোনো আর্গুমেন্ট দেননি। ‘জাতির পিতা’ কনসেপ্টটির বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি ও বৈধতা কতটুকু, ‘জাতি’ আসলে কী, সেটা কিভাবে গঠিত হয় এবং বিশেষত শেখ মুজিব কেন জাতির পিতা—এসবের পক্ষেও কোনো আর্গুমেন্ট নেই।

মাহফুজ আনামও কি শেখ হাসিনার মতোই বিনা তর্কে, বিনা প্রশ্নে শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ মেনে নেওয়ার জবরদস্তির পক্ষপাতী?

মাহফুজ আনামরা শেখ মুজিবকে indisputable ভেবে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে মেনে নিয়েছেন—এটাই শেখ  হাসিনাকে সুযোগ দিয়েছে মুজিবের ওপর দেবত্ব আরোপ (Apotheosis) করতে। তাই হাসিনার প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এ বিধান করা গেছে: আল্লাহ বা নবীর অবমাননা হলে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ দুই বছর (ধারা ২৮), কিন্তু ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টিকারী লেখালেখি করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান পাঁচ বছরের! (ধারা ২১)

ধর্ম অবমাননার চেয়ে বেশি শাস্তি হবে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করলে বা ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করায় মদদ দিলে—এমন একটি ভয়াবহ মুজিব-কাল্ট সৃষ্টির পেছনে পুরো দায় কি কেবলই শেখ হাসিনার? শেখ মুজিবকে indisputable ভেবে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে মেনে নেওয়া ডেইলি স্টার-প্রথম আলো গং কিভাবে এক্ষেত্রে নিজেদের দায় এড়াতে পারে?

মাহফুজ আনামরা পতিত ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ন্যারেটিভকে এখনো টিকিয়ে রাখতে চান কেন? কেনই বা সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর মুজিব-কাল্ট বিষয়ক বিধানগুলো এখনো অপরিবর্তিত আছে?

অর্ধ সত্য

মাহফুজ আনাম লিখেছেন:

 ‘পাকিস্তানি শাসকের শৃঙ্খল থেকে আমাদের মুক্ত করার যে সংগ্রাম তা তিনি আজীবন করে গেছেন, তাতে কোনো দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই।’

অথচ প্রকৃত সত্য হলো মুজিবের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ভূমিকা নিয়েও বহু দ্বিমত আছে। মাহফুজ আনামের নিজের বাবা আবুল মনসুর আহমদ (মুসলিম লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী) ও নিজের ভাই মহবুব আনাম (যিনি বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন)—এরাও মুজিবের পাকিস্তান আমলের রাজনীতি নিয়ে কোনো অন্ধ প্রশংসায় মেতে ওঠেননি, দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। সিরাজুল আলম খান, বদরুদ্দীন উমর, আহমদ ছফা, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তাজউদ্দীনের মেয়ে শারমিন আহমদ-সহ বহু দেশি-বিদেশি লেখক শেখ মুজিবের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ভূমিকা নিয়ে ভ্যালিড প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষত ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান আর্মির কাছে মুজিবের আত্মসমর্পণ এবং ওই রাতে তার রহস্যময় আচরণ নিয়ে বিপুল সমালোচনা আছে।

এমনকি, যে ৭ই মার্চের ভাষণকে মুজিবের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ধরা হয়, সেটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। খোদ শেখ হাসিনাই স্বীকার করেছেন যে, ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা না দেওয়ায় ছাত্রনেতারা শেখ মুজিবের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণের ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে হাসিনা ২০১৭ সালের এক ভাষণে বলেছিলেন: 

‘আমি যখন ঘরের মধ্যে ঢুকলাম, ঠিক সেই সময় দেখি, আমাদের কয়েকজন ছাত্রনেতাসহ বেশ কিছু ... তারা হঠাৎ দেখি বেশ উত্তেজিত। আমার আব্বাকে বলছেন, “এটা কী হল লিডার? আপনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে আসলেন না। মানুষ সব হতাশ হয়ে ফিরে গেল।’” [https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1301170.bdnews]

পক্ষপাত

ইতিহাস নিয়ে এই ধরনের বহু সত্য গোপন করে মাহফুজ আনাম এই কলামে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছেন। এমনকি তিনি যে বারবার মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন, সেই ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটিও ১৯৭৩ সালে ডাকসুর তৎকালীন কমিটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। মুজিবের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে ডাকসুর তৎকালীন ভিপি ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (আজকের সিপিবি নেতা) মুজিবের ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটি প্রত্যাহারের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন।

মাহফুজ আনাম ১৯৭১ সালের মার্চে শেখ মুজিবের অসহযোগ আন্দোলনের কথা গৌরবের সাথে বলেন, অথচ ১৫ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ রাত পর্যন্ত মুজিব যে ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই স্পষ্ট ঐতিহাসিক সত্যটি এড়িয়ে যান। মুজিবের প্রতি এই ধরনের পক্ষপাতিত্ব দেখানোর পরও তিনি নাকি ‘নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে ভালো-খারাপ মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে বিচার’ করতে চান!

স্ববিরোধিতা

এই ধরনের স্ববিরোধিতা মাহফুজ আনামের পুরো কলামটি জুড়েই আছে। একদিকে তিনি বলেন, শেখ মুজিবের ভূমিকা নিয়ে ‘কোনো দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই’, আবার সেই তিনিই বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুও অনেক ভুল করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ব্যক্তিদের মতো তাকেও সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’ তিনি এ-ও বলেন,  ‘১৯৭৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে একদলীয় শাসন কায়েম করাই ছিল “স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের সূচনা।’” তাহলে যে মুজিব ‘বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের সূচনা’ করেছিলেন, তাকে কেন জাতির পিতা মানতে হবে, তার মৃত্যু দিবসকে কেন শোক দিবস বা জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করতে হবে এসব স্ববিরোধিতার কোনো ব্যাখ্যা মাহফুজ আনামের লেখায় পাওয়া যায় না।

আসলে মুজিব-কাল্ট নিয়ে মাহফুজ আনাম পড়েছেন চরম বিপর্যয়ে। তাই তিনি একদিকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার বাবার অবদানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি চালু করে’ এবং তিনি স্বীকার করেন যে,  হাসিনার আমলে মুজিবকে ‘দেবতুল্য করে দেখানো হয়, যা গণতান্ত্রিক দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। বাঙালিরাও স্বভাবগতভাবেই এমন ব্যক্তিপূজা ঘৃণা করে।’ আবার সেই মাহফুজ আনামই বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব, তারা যেন শেখ হাসিনার অপশাসনের পাল্লায় বঙ্গবন্ধুকে না মাপে।’!

অর্থাৎ মুজিব যতই ফ্যাসিবাদের আইকন হন না কেন, হাসিনা যতই মুজিবকে দেবতুল্য বানাক না কেন, স্বৈরাচারী শাসনের সূচনাকারী মুজিবকেই আজকের শিক্ষার্থীরা ‘জাতির পিতা’ মানতে হবে এবং মুজিব-কাল্টের স্মরণীয় দিনগুলোকেও ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবেই পালন করতে হবে!

এমন বিচিত্র দ্বিচারিতায় ভরা রাজনৈতিক ন্যারেটিভকেই মাহফুজ আনামরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে গেলাতে চান। মাহফুজ-মতিউর গং মানতে চান না যে, এসব অসত্য, পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রতারণাপূর্ণ রাজনৈতিক ন্যারেটিভের বিরুদ্ধেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানটি হয়েছে। এখন ডেইলি স্টার-প্রথম আলো গং যতই নতুন বোতলে সেই অন্ধকারের বয়ান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুক না কেন, আগামীর বাংলাদেশে এসব পতিত ও প্রত্যাখ্যাত বয়ানের কোনো স্থান থাকবে না। 

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন