Logo
Logo
×

অভিমত

কেমন হওয়া উচিত সাকিবের বিদায়?

Icon

আব্দুর রহমান

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৪ পিএম

কেমন হওয়া উচিত সাকিবের বিদায়?

সাকিব আল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

যেমনটা ধারণা করেছিলাম তাই হয়েছে। সাকিব আল হাসানের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। সাকিব দেশের উত্তাল সময়ে নিজের অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা ছিল একটি ডার্টি গেম। ফ্যাসিস্টের দোসর বা সুবিধাভোগী হিসেবে যখন তিনি ধিকৃত ও নিন্দিত হচ্ছেন, যখন অপকর্ম করা হাজারো আওয়ামী লীগ নেতার মতো তারও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর কথা এবং তার বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে, তখন তিনি মানুষের আবেগের আগুনে একটু ঘি ঢেলেছিলেন অবসরের ঘোষণা দিয়ে।

সাকিব আল হাসান দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন, টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন শেষ টেস্টটা তিনি খেলতে চান দেশের মাটিতে। কিন্তু জনতার প্রবল বিরোধিতায় সাকিবের সে আশা পূর্ণ হচ্ছে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের পথে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার নিরাপত্তা দেওয়াটা এ মুহূর্তে কঠিন, এ বিবেচনায় সাকিবকে দেশে ফেরার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি আবার ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

বৃহস্পতিবার মিরপুরে বিক্ষোভ হয় সাকিবের বিপক্ষে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা বলেন, খেলোয়াড় হিসেবে তিনি এখন আর বিবেচনার যোগ্য নন। তিনি ফ্যাসিস্টের দোসর ও সুবিধাভোগী, তাই তারা সাকিবকে মাঠে নামতে দেবেন না। পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সাকিবের পক্ষে মিছিল, সেই মিরপুরেই। তারা বলছেন, ১৭ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলা সাকিব রাজনীতিতে নেমে হয়তো ভুল করেছেন, কিন্তু তিনি ৭ মাসে কতটা ভুল করেছেন?

অনেকে বলছেন, সাকিবের পক্ষে মিছিলটা আসলে আওয়ামী লীগের স্ক্রিপ্টে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আর সুবিধাভোগীরা সব জায়গায় বসে আছে। ক্রীড়াঙ্গণে তাদের উপস্থিতি আরও বেশি। কেন না ক্রিকেটের সভাপতি থেকে পরিচালক সবাই রাজনৈতিক আশির্বাদেই এসব পদে অধিষ্ঠিত হন। তারা মনে করেন যারা পাপনের গুনগান গেয়েছেন, শেখ হাসিনার ভজন করেছেন, কোন জাদুর কাঠিতে তাদের চরিত্র একেবারে বদলে যাবে? হ্যাঁ বদলাবে, তবে তাও ওই সুবিধাবাদী চরিত্রের জন্যই, মানে সুবিধা যেখানে এরা সেখানে, সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ আর কি!

যাইহোক, সাকিব প্রসঙ্গে ফিরি। ব্যক্তি সাকিবের নানা ভূমিকা থাকতে পারে, তবে শুধু খেলোয়াড় সাকিব বিবেচনায় তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া উচিত। এখন প্রতিকূল সময়, আগুনঝড়া এ সময়ে ফাগুনের ফুল আশা করা ঠিক নয়। সাকিব যদি তার প্রাপ্য সম্মান পেতে চান তাহলে সাকিবকে দায়িত্বশীল হতে হবে। নিজের কৃৎকর্মের কথা ভেবে তাকে অনুশোচনা করতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে। একজনের কৃপালাভের জন্য আপনি এবং আপনার মতো অনেক তারকাই ফ্যাসিস্টের অনুসারী ও অনুগামী হয়েছেন। আপনারা মানুষের ভালোবাসার মানুষ, আর তাই আপনাদের এই স্খলন মানুষকে হতাশ করেছে, কষ্ট দিয়েছে, ক্ষুব্ধ করেছে।

সাকিব, আমি মনে করি আপনার সম্মান প্রাপ্য, আর সেই সম্মান দেওয়াটা জাতির দায়িত্ব। জয় দিয়ে মানুষের মুখে অসংখ্যবার হাসি ফুটিয়েছেন আপনি, আবার দেশের হারে সাধারণ মানুষের সাথে অশ্রুসিক্ত হয়েছে আপনার চোখ। অনেকটা নিরাবেগ হলেও কখনো কখনো আপনি দারুণভাবে আবেগাপ্লুত হয়েছেন, আপনার আবেগে শামিল হয়েছে দেশের কোটি মানুষ।

মানুষের ভালোবাসার বিপরীতেই থাকে ঘৃণা, আপনি এখন সেই ঘৃণাটাই পাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এই কঠিন সময়টা আপনাকে পার করতে হবে ধৈর্য্যের সঙ্গে। সেই ধৈর্য কিছুটা আপনি বৃহস্পতিবার দেখিয়েছেন। দলের জন্য খেলতে রওয়ানা দিয়েও দেশে আসেননি আপনি। নিজের দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত কোনো সাধারণ বিষয় নয়, এটি কঠিন একটি সিদ্ধান্ত।

যে সাকিবকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজারো মানুষ যায়, যে সাকিবের নামে শ্লোগানের ঢেউ ওঠে মিরপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট আর কক্সবাজারে— সেই সাকিবকে মানুষ দেশে আসতে দিতে রাজি নয়! সাকিব মানুষের রাগ আর ক্ষোভটা বুঝুন। সাকিবকে এ মুহূর্তে বরণ করতে প্রস্তুত নয় দেশের মানুষ আবার রাজি নয় তাকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় দিতেও। তাই সাকিব আপনাকেই সুন্দর সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেশের মানুষ এখন তেতে আছে, তবে পলিমাটির এ দেশের মানুষের মনও কিন্তু নরম। আপনার প্রতি ভালোবাসাটা ফিরে পেতে অপেক্ষা করুন। নিজের কৃৎকর্মের জন্য অনুশোচনা করুন। ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তটাকেই আপাতত অবসরে পাঠান, অন্তত বছর তিনেক থাকুন ক্রিকেটার হিসেবে। সাকিব দেশের একজন মহাতারকা আপনি, আপনার বিদায়টা বিষাদে নয়, হোক রাজসিকভাবেই।


লেখক : বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন