Logo
Logo
×

অভিমত

ড. ইউনূস হতে পারেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম

ড. ইউনূস হতে পারেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি

শেখ হাসিনা যে কেবল বছরের পর বছর বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করে নিজের দলের লোকদের লুটপাটের সুযোগ দিয়েছেন তাই না, তাঁর রাজনীতি আর লোভের বলি হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও। মিয়ানমারে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গায় সেদেশের রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে সমুদ্র পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্ররোচনায় যে জাতিগত দাঙ্গা চলছে তার জেরে ধরে অসহায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই সংকট রূপ নেয় এই শতকের অন্যতম ভয়াবহ জাতিগত হত্যাকাণ্ডে। তখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা। 

বাংলাদেশ গরিব দেশ হলেও এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে মানবিক কারণেই আশ্রয় দেয়। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলিম এবং ভাষাগতভাবে অনেকটাই মিল থাকায় তাঁদের প্রতি সহানুভূতিও আছে এদেশের মানুষের। তবে, হাসিনা ব্যাপারটিকে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যাবহার করতে চেয়েছিল। 

সন্দেহ নাই যে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশে তাঁদের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে হাসিনার উদ্দেশ্য ছিল এই ব্যাপারটিকে তুলে ধরে তার আজীবনের আরাধ্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া। এই পুরস্কারটি পাওয়ার ব্যাপারে এই নারীর আকাঙ্ক্ষা ছিল রীতিমতো উন্মাদনার পর্যায়ে। আর ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস তা পেয়ে যাওয়ায় সম্ভবত তার ক্রোধ সপ্তমে চড়ে গিয়েছিল। ইউনূসকে বছরের পর বছর হেনস্তা করার জন্য এই ব্যাপারটিও কাজ করতো। 

এর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য আসতে থাকায় এনজিও ও সরকারি লোকদের জন্য গোড়ার দিকে রোহিঙ্গারা সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত হয়। হাসিনা একে কাজে লাগায় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও। এর আগে ২০১৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন এবং দেশে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারানো হাসিনা সরকার পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝায় যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা জরুরি। পশ্চিমাদেরও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, কারণ জাতিসংঘ বা অন্য কেউই এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে অক্ষম ছিল। 

তবে, সময়ের সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। তাঁদের অধিকার আদায়ের পথ রুদ্ধ হতে থাকে। লাখ লাখ মানুষ ক্যাম্পে অমানবিক জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। মিয়ানমার তাদেরকে রীতিমতো অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গাদের নাম নিশানা সেদেশ থেকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। আরাকানের ভূমি ও সম্পদই ছিল তাদের লক্ষ্য। জান্তাকে সমর্থন দেয় চীন। এই সমর্থনের ফলে তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। 

ওদিকে, কক্সবাজারসহ উপকূলের এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের অবস্থান সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা বাড়াতে থাকে। করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এরপর গাজায় ইসরায়েলি হামলা বিশ্ব মানবতার মনোযোগ রোহিঙ্গাদের থেকে সরিয়ে নেয়। কমে আসতে থাকে তহবিল। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের দিয়ে অপরাধ করানো, তাঁদের বসবাসের কারণে পাহাড় ও জংগল ধ্বংস হতে থাকে। স্থানীয়দের সাথে সামাজিক সমস্যা তৈরি হতে থাকে। 

হাসিনা তো নোবেল পেলেনই না, উলটো দেশে প্রবল স্বৈরাচার হলেও বিদেশনীতিতে তাঁর সরকার আরও নতজানু হতে থাকে। চীনের কাছ থেকে বিপুল ঋণ এবং ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশ উচ্চকিত হতে পারে না। হাসিনার প্রভু ভারতও এই নিয়ে আওয়াজ তোলার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের জীবন হয়ে পড়ে অনিশ্চিত, অসহায়। বিশ্ব মানবতার অক্ষমতা আর রাজনীতির বলি হয় এই মানুষগুলো। 

তবে, আগস্টের ৫ তারিখ হাসিনার পতন হয়। বাংলাদেশ স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেন বর্তমান দুনিয়ায় সবচেয়ে পরিচিত ও প্রভাবশালী বাংলাদেশি ইউনূস। 

তবে হাসিনাশাহীর দীর্ঘ ১৬ বছরের সমস্যা ও জঞ্জালের মধ্যে দিয়েই তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এখনও আশানুরূপ জায়গায় যেতে পারেনি। ইউনূস সরকার এই নিয়ে চাপে আছেন। পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র নিয়মিত মোকাবিলা করতে হচ্ছে। 

তবে, আশার কথা হচ্ছে ড. ইউনূস হতে পারেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি। তাঁর বিপুল প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা পারে পরাশক্তিদের এই নিয়ে কার্যকরী কোনো সমাধান বের করতে। মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়, কোনো ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশে তাঁদের অভিবাসনের ব্যবস্থা। সম্প্রতি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়ে এই নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপও করেছেন। দেশে ফেরার পরেও আলাপ চলছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের সময়ে মানবতাকে প্রশ্ন করা এক হৃদয়বিদারক সংকট। এর আশু সমাধান জরুরি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন