Logo
Logo
×

অভিমত

আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি

Icon

সোহেল আহমেদ

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০১ পিএম

আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি

বাংলাদেশের ভোটারদের এবং রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক শিক্ষা, রাজনৈতিক চর্চা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে আনুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন বন্দোবস্ত কীভাবে যৌক্তিক এটা বোধগম্য নয়।

যারা এটা নিয়ে খুব বেশি কথাবার্তা বলছেন তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, তারা এ বিষয়ে খুবই সীমিত ধারণা রাখেন এবং কখনোই বাস্তব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি। বিষয়টি শুনতেই বেশ চটকদার।

পৃথিবীর বেশকিছু অত্যন্ত উন্নত অর্থনীতির এবং সচেতন নাগরিক আছে এমন দেশে আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু সেই ব্যবস্থাগুলোও আমাদের কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং টকশোপন্থি লোকজন যেমনটা বলছেন তেমন   ব্যবস্থা নয়। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত এবং প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আনুপাতিক নির্বাচনী প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী বন্দোবস্ত কখনোই কোনো সুফল বয়ে আনবে না। 

আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় গেলে কখনোই কোনো ভোটার তার প্রতিনিধিকে সরাসরি  নির্বাচিত করার স্বাধীনতা পাবে না। আনুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা গণতন্ত্রের মূল চেতনা পরিপন্থি একটি বন্দোবস্ত, গণতন্ত্র যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নিশ্চিত করে। আনুপাতিক ব্যবস্থা সেখানে চরমপন্থি, উগ্রপন্থি এবং অন্যান্য নেতিবাচক রাজনৈতিক শক্তিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিদেরকে জিম্মি করে রাখার সুযোগ তৈরি করে দেয়। 

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা আছে এমন কিছু দেশের বিগত কিছু নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক পার্লামেন্ট কিছু কিছু ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটি অনেক ক্ষেত্রেই সরকার গঠন করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে সরকার গঠনের লক্ষে অনেক ক্ষুদ্র এবং স্বার্থবাদী দলের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার মাধ্যমে একটি দুর্বল সরকার গঠন করতে বাধ্য হয়। এমনকি কিছু পার্লামেন্টে  দীর্ঘদিন ধরে সরকার গঠন করতে না পারার উদাহরণও রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় কিছু ক্ষুদ্র দল দুই তিন শতাংশ ভোট নিয়ে এমন বড় এবং অপ্রাসঙ্গিক দাবি দাওয়া সামনে নিয়ে আসে, যেগুলো রীতিমতো পার্লামেন্টকে এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটিকে ব্ল্যাকমেইল করার শামিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি নির্বাচনী ব্যবস্থায় যদি তিনটি দল থাকে এবং দুইটি দল ৪৯ শতাংশ করে এবং একটি দল ২ শতাংশ ভোট পায়। তাহলে ওই দুই শতাংশ ভোট পাওয়া দলটির কাছে বাকি দুইটি দল ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েও জিম্মি হয়ে থাকবে। এটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি একটি বন্দোবস্ত। যদিও কিছু দেশে এই ব্যবস্থাটিকে আরও উন্নত এবং জটিল আকারে পুনর্ববিন্যাস করা হয়েছে, যেটা বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক পরিবেশের দেশে বাস্তবায়ন কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। 

পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে যদি আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরি, তাহলে তাদের কোথাও আনুপাতিক নির্বাচনী বন্দোবস্ত নেই। যদিও  ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কিছু দেশে এই ব্যবস্থা বিদ্যমান। কারণ ওই দেশগুলির অর্থনীতি অত্যন্ত উন্নত এবং জীবনযাত্রার মান পৃথিবীর সবথেকে উপরের দিকে।

লেখক : ডেনমার্ক প্রবাসী

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন