দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই। বিশেষত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু ভয়ংকর রূপে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন হাজারে হাজারে ডেঙ্গু রোগী।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। সেখানে বলা হয়— দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর হার বেশি। এর অর্থ হচ্ছে এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩ হাজার ৬৫৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১৫ জনের। এর মধ্যে ১১৪ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে।
বিগত বছরগুলোতে মশকনিধনের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। অভিযোগ ছিল যে, এইসব বরাদ্দের অধিকাংশই ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টরা লোপাট করে দিয়েছিলেন। লোক দেখানো কিছু মশকনিধন কর্মসূচি চললেও তা তেমন কাজে আসেনি। গত বছর, রেকর্ডসংখ্যক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।
এ বছর সমস্যাটি ভিন্ন আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ড কমিশনার আওয়ামী লীগের, বিধায় তাদের অধিকাংশই বর্তমানে পলাতক। অল্প সংখ্যক প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে এদের কাজ চালানো হচ্ছে। আবার, এদের বেশিরভাগের সাথেই সাধারণ জনগণের কোনোরকম যোগাযোগ নেই। বিধায় জনগণ প্রতিকারের জন্য কাছে কাদের কাছে যাবে তা বুঝতে পারছে না। সব মিলিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মশক তথা ডেঙ্গু নিধনে।
আশ্বিন মাসের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিতে পারলে পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হবে। তাই অতিসত্বর ডেঙ্গু বিষয়ক কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।