Logo
Logo
×

অভিমত

‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ করতে হবে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২০ পিএম

‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ করতে হবে

আওয়ামী সরকারের আমলে জনগণের জন্য অন্যতম ভয়ের নাম ছিল পুলিশ। জনগণের করের টাকায় বেতন ও অস্ত্র পাওয়া পুলিশ জনগণের ওপরই নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড চালায় জুলাই আন্দোলনের সময়। এর আগের ১৬ বছর আইনকে ব্যবহার করে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে উঠার বদলে ত্রাস হয়ে উঠেছিল। ক্রসফায়ারে খুন আর যার-তার নামে মামলা দেওয়া ছিল আতঙ্কের দুই নাম। হাজার হাজার মানুষকে ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামি করে মামলা দেওয়া হতো আর সেগুলোতে আসামি করা হতো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে যে কাউকে। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা পালিয়েছে। দেশে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। কিন্তু, পুলিশি আচরণ বদলানো নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে আগস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় ২ লাখের বেশি মানুষের নামে ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। 

মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন’ তাদের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে ওই দুই মাসের মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ২৬৮টি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ জনকে। অন্যদিকে নাম উল্লেখ করা আসামির সংখ্যা ২৬ হাজার ২৬৪। সেপ্টেম্বর মাসে ২৩৮ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০ হাজার ২৩৫ জনকে আর নাম উল্লেখ করা আসামির সংখ্যা ১৯ হাজার ২৮৩।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায়ও অজ্ঞাতনামা আসামি আছে বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে এ হিসাব এখনো নিরূপণ করা হয়নি।

উত্তাল জুলাইয়ের ১৮ তারিখ, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসংলগ্ন কাজলা বিশ্বরোড। কোটা সংস্কার ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সেদিন বিকেলে আন্দোলনে থাকা মো. সাকিব হাসান (২২) নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আর পুলিশের মারধর ও গুলিতে। পরদিন ডেমরা সড়কের কাজলা চৌরাস্তা মোড়ে একইভাবে নিহত হন আরেক আন্দোলনকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০)।

সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, এ দুটি ঘটনায় ৪৫ ও ৪৬ দিন পর ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন মো. আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তি। একই দিনে করা আলাদা দুটি মামলার আসামি একই নাম ও ঠিকানার ব্যক্তিরা। ৪৪২ জন করে দুই মামলায় আসামি সংখ্যা ৮৮৪। দুই মামলার প্রতিটিতে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা তিন-চার হাজার। অর্থাৎ দুই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি সর্বোচ্চ আট হাজার। একই ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা দুটি করেছেন। এজাহারে বাদীর পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিকদলের আহ্বায়ক। যদিও মামলার ব্যাপারে নিহতদের পরিবারের কেউ কিছু জানেন না।

৫ আগস্ট ফেনীর ছাগলনাইয়া থানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার ৪৩ দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী পৌর ভবন ও ঢাকা জেলার ধামরাই থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ হাজার করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে সচিবালয়ে ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় সাধারণ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর তিনটি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১০ হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এ আটটি মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুটি মামলার বাদী একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং চারটি মামলার বাদী পুলিশ। বাকি মামলাগুলোর বাদী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা না করে এইভাবে গণহারে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করলে পুলিশের তরফ থেকে হয়রানি করার সম্ভাবনা যেমন বাড়ে তেমনি আসল অপরাধীরাও অনেক সময় পার পেয়ে যায়। 

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল এ ধরনের মামলার জন্য ফ্যাসিস্ট শাসনামলের পুলিশকে দুষছেন। সেই সঙ্গে এটা ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্র হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তা না হলে পুলিশ কেন একটা ঘটনায় ৭০০ জনকে আসামি করবে। এতজনের নামও তো জানার কথা নয়। বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউ মামলা করেছে এটার সংখ্যা খুবই কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে ফ্যাসিস্ট শাসনামলে পুলিশ মামলা করেছে, এখনো একইভাবে চলছে। আর কিছু মামলা করেছেন নিহত ও আহতের স্বজনরা। অবশ্যই গত ১৫ বছরের যে সংস্কৃতি, সেটি রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কিংবা প্রতিষ্ঠান, সবকিছুই ফ্যাসিস্ট শাসক পলাতক শেখ হাসিনা ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। এ ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এখন নতুনভাবে সবকিছু করতে হচ্ছে। এজন্য একটু সময় দিতে হয়। আমি ঢালাওভাবে আসামি করা সমর্থন করছি না।’

কায়সার কামাল যৌক্তিক কথাই বলেছেন। এইভাবে ঢালাও আসামি করা ভালো লক্ষণ নয়। এভাবে ঢালাও মামলার করার কারণে তদন্ত প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়বে এবং অভিযোগ প্রমাণ করতে সমস্যা হবে। আর সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ঝুঁকি তো রইলোই। তাই, এই ধরনের অজ্ঞাতনামা মামলা করা বন্ধ করতে হবে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন