পূজামণ্ডপে ইসলামি গান এবং দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা
আব্দুর রহমান
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৯ পিএম
পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত গাওয়ার সময়ের একটি চিত্র। ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি
চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক দলের ইসলামি সংগীত পরিবেশন নিয়ে নেট দুনিয়ায় তোলপাড়। বাংলাদেশের প্রশাসন আর বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে নানামুখি আলোচনা আর তৎপরতা। কাজটি ঠিক না বেঠিক হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ঘটনায় হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এমন কথা সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে শোনা যায়নি। কিন্তু জটিলতা তৈরি করতে পটু কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী আর মুসলমানদের একটি অংশ এ ঘটনায নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করছে। তারা এ ঘটনায় শুধু আহতই নয়, এ ঘটনা তাদের মর্মে আঘাত করেছে এবং তারা মর্মাহত। তারা ঘটনায় এতটাই আহত বা মর্মাহত যে, তারা এর প্রতিশোধমূলক নানা বুদ্ধি বাতলাচ্ছেন।
কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, জুমার খুতবার আগে দেবতার ভজন করা যাবে কী? কারো কারো জিজ্ঞাসা, কুরবানির আগে কিছুক্ষণ কীর্তন দল এসে হরে রাম, হরে কৃষ্ণ বলে কীর্তন করে গেলে মুসলমান সমাজ কি তা মেনে নেবে?
বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই প্রশ্নগুলো শুধু বিদ্বেষপ্রসূতই নয়, অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিতও। ইসলামি সংগীত পূজার মণ্ডপে গাওয়া ঠিক হয়নি এটা যারা বলছেন, তারাই কি করে জুমায় হিন্দুদের গান বাজনা করা যাবে কি না এই প্রশ্নটা করেন? একটা ভুলের খেসারত কি আরেকটা ভুল দিয়ে শোধ করতে হবে? তা কি যৌক্তিক বা সুবিবেচনাপ্রসূত হবে?
বিষয়টাকে আদালতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু’জনকে। প্রশাসন বিষটির তাৎক্ষণিকভাবে সুরাহা করতে পারতো। চাইলে একটা তদন্ত কমিটি করতে পারতো, কিন্তু তা হয়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জল ঘোলা করতে তৎপর চক্রটি নানাভাবে চেষ্টা করছে। সামাজিক আর ধর্মীয় ইস্যুকে আদালতে নিলে বছরের পর বছর তা নিয়ে আলোচনা হবে। আইনগত পদক্ষেপ যদি একান্ত নিতেই হয় তাহলে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে নেওয়া যেতো বা এখনো তা করা যায়। আদালতে ৩/৫ বছর পর যে রায়ই হোক একটি পক্ষ নিজেদের অবিচারের শিকার মনে করতে পারে। তাই মাঠের সমস্যার সমাধান মাঠেই করুন, একে আদালতে নেবেন না, জিইয়ে রাখবেন না। তিক্ততা নয়, বাড়াবাড়ি নয়। সবচে ভালো হয়, যদি হিন্দু মুসলিমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয় এ ঘটনায় কি করা উচিত? ধর্মীয় ইস্যুকে আদালতের ইস্যু বানালে তা আখেরে কোনো ভালো ফল আনবে না।
এ কথা সত্য যে, হিন্দুদের পূজায় বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠানে মুসলমান শিল্পীদের গান গাওয়া নতুন কিছু নয়, এটা একেবারে সাধারণ ও নিয়মিত ঘটনা। জনপ্রিয় অনেক শিল্পী বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে গান গেয়ে আসেন, সেখানে তারা সম্মানি আর সম্মান দুটোই পান। সাকিব আল হাসান ভারতে গিয়ে পূজামণ্ডপ উদ্বোধন করেছেন। আর বাংলাদেশের মমতাজ তো পূজা-পার্বণের দিকেই তাকিয়ে থাকতেন, সে সময় তার পসার আর স্বাভাবিকভাবেই পয়সা বাড়তো।
চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে শিল্পীরা যে গান দু’টি গেয়েছেন তার একটি সাধারণ গান, এটি দেশের এমন কোনো সাংস্কৃতিক উৎসব নেই যেখানে গাওয়া হয় না। ‘বাংলার নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম’। আরেকটি গান ছিল ইসলামি গান। শুধু ইসলামি গানই নয়, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশসূচক ছিল গানের কথা। পূজা উদযাপন কমিটির একজনের বক্তব্য ভালো লেগেছে, গানটি কেন মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হলো না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, গানটি ছিল ধর্মীয় গান, সেটি মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হলে তা আরও বেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতো।
একটি ধর্মের অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজ ধর্মের মাহাত্ম্যের প্রকাশ কোনো মহৎকর্ম নয়। এরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজটি করেছে কি না তা জানা দরকার। তদন্তটা এখানেই হওয়া উচিত। সরল মনে, সরল বিশ্বাসে আর নিজেদের ভালো লাগা থেকে গানটি করে থাকলে তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সমীচীন হবে না। সুবুদ্ধিসম্পন্ন ও শান্তিপ্রিয় কোনো মানুষই তা চাইবে না।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন