Logo
Logo
×

অভিমত

আওয়ামী মাফিয়াতন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ানো সহজ কাজ না

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম

আওয়ামী মাফিয়াতন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ানো সহজ কাজ না

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হতো। এই সামরিক শাসক দীর্ঘ আট বছরের বেশি সময় দেশকে শাসন করেছিলেন। এসময় তাঁর বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন হয়। তিনি নিষ্ঠুরভাবে সেইসব আন্দোলন দমন করলেও একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। 

এরপর বিচারে তিনি জেলে যান। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এরশাদকে গণ-আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলেও এর পরের নির্বাচনে তিনি একাই পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেন। তাঁর দল জাতীয় পার্টি রংপুরে একচেটিয়া জয়লাভ করে এবং দীর্ঘদিন ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। 

এরশাদের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ সময় নিয়ে বহুগুণ লুটপাট ও অত্যাচার করে দেশের সবচেয়ে বড় স্বৈরশাসকে পরিণত হন শেখ হাসিনা। বিপুল রক্তপাতে তাঁর পতনের পর অনেকে হয়তো আশা করছেন, এহেন অত্যাচারী, ঘৃণিত শাসক আর তাঁর দল জীবনে এই দেশের মাটিতে মাথা তুলতে পারবে না। তবে এরশাদের উদাহরণ মাথায় রাখলে এইরকম ভ্রান্তি কাটানো সহজ হবে। 

জাতীয় পার্টির চেয়ে আওয়ামী লীগের ভিত অনেক শক্ত। দীর্ঘদিন স্বৈরশাসনে এই দল প্রচণ্ড ঘৃণিত হলেও এখনো এর অনেক তীব্র সমর্থক আছে। তদুপরি, বিগত দিনে বিপুল পরিমাণ অর্থ এরা দেশে বিদেশে জমিয়েছে। দেশের প্রায় সমস্ত স্থানে এই দলের লোকেরা ক্ষমতায়। ফলে, আওয়ামী লীগের পতন হলেও, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সমস্ত স্থানে তাদের দোসররা রয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে বা আদর্শের কারণে এরা আবার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে। দেশের বাইরে থেকেও এরা সাহায্য পাবে। 

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ ছিল কার্যত ভারতের করদরাজ্য। হাসিনাশাহী ভারতকে সকল ধরনের সুবিধা দিয়েছে। ফলে, হাসিনার পতনে শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশটি বিক্ষুব্ধ। তাঁরা কেবল খুনি হাসিনাকে আশ্রয়ই দেয়নি, বরং তাঁদের মিডিয়া হাসিনা পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারত আওয়ামী লীগের পুনরুদ্ধার করতে চাইবে। 

বাংলাদেশের মতো ফিলিপাইনেও স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতন হয়েছিল। সেসময় অনেকেই ভেবেছিল এতো ঘৃণ্য স্বৈরশাসক আর তার দল সেদেশে কখনো ক্ষমতার কাছে যেতে পারবে না। অথচ তিন যুগ না পেরোতেই মার্কোসের সন্তান বংবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। 

ফার্দিনান্দের স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসকে গোটা দুনিয়া চিনেছিল তাঁর আয়েশী জীবনযাপনের জন্য। এই স্বৈরশাসকের স্ত্রীর সংগ্রহে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে নামিদামি ব্র্যান্ডের কয়েক হাজার দামি জুতা। অথচ ফার্দিনান্দ-ইমেলদার বিদেশে পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলার ১৯৮৭ সাল থেকেই কাজে লাগতে শুরু করল। মূলত টাকার জোরেই চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজনীতিতে ফিরলেন ইমেলদা। ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারবার পার্লামেন্ট কাঁপানো নির্বাচিত সংসদ সদস্যও থাকলেন। আর ২০২২ সালে বংবঙ দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। 

দুর্নীতির কামাই রাজনীতিতে ইমেলদার আসন পোক্ত করল আরও চারটি উপায়ে। এক, দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হতে পারা। দুই, ফের রাজনীতিতে ফেরার আইনি বৈধতা জোগাড় করা। তিন, আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীতে রেখে যাওয়া দুর্নীতিবাজ সুবিধাভোগীদের পুনঃসংগঠিত করতে পারা। চার, ঘুষ-উৎকোচ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের কিনে ফেলতে পারা।

আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ধূর্ত একটি দল। তাঁরা এইসব জানে, তারা এও জানে কীভাবে এই দেশের রাজনীতিতে সাফল্য পেতে হয়। ফিলিপাইন শুধু না, পৃথিবীর নানাদেশে এই উদাহরণ দেখা গেছে। দীর্ঘসময় দুর্নীতি করে জমানো টাকা ও ক্ষমতা ঘৃণিত স্বৈরাচারদের আবার ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। 

ফলে, আওয়ামী মাফিয়াগিরি রুখতে এদেশের মানুষকে একজোট হতে হবে। যারা গণতন্ত্রের রাজনীতি করেন তাঁদের মনে রাখতে হবে যে, জনগণকে সাথে নিয়েই তাঁদের আগাতে হবে। জনগণের চাওয়াকে মূল্যু দিতে না পারলে আবার মাফিয়ারা বিষদাঁত নিয়ে ছোবল দিবে। কেবল জনগণের দৃঢ় ঐক্যই তা রুখতে পারে। আওয়ামী মাফিয়াতন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন