হাসনাত ও সার্জিস আলম। ছবি: সংগৃহীত
দেশের দক্ষিণ ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় আগস্টের বন্যার সময় ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সাড়া ফেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ওই কমিটির কার্যক্রমও অদৃশ্য হয়ে যায়। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সেখানে ত্রাণ সংগ্রহ এবং তা বণ্টন ও বিতরণের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে ত্রাণকার্যের জন্য টাকা উঠেছে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো। খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো। বাকি টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে। সেই টাকার মধ্যে ৮ কোটি টাকা প্রধান উপদেষ্টার তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে আর ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তরাঞ্চলের বন্যায় ব্যয় করা হবে। হিসাব পরিষ্কার, স্বচ্ছতা আছে। ছাত্রদের এই উদ্যোগ নিয়া অপপ্রচার দূর হবে এই আশা করি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই হিসাব নিয়া আর কোনো প্রশ্ন করছি না, তবে এই ধরনের কাজে ভবিষ্যতে যাতে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করি।
প্রথমত: ছাত্রদের ত্রাণ সংক্রান্ত উদ্যোগে মানুষের এগিয়ে আসা ছিল আবেগের বহিঃপ্রকাশ। মৃত মায়ের স্মৃতি মাটির ব্যাংক, শিশুর টিফিনের জমানো টাকা, মায়েদের অনেক কষ্টের গচ্ছিত টাকা, শ্রমজীবী মানুষের, ছাত্রদের, হাসপাতাল ফেরত মানুষ, কত জনের টাকা। এই টাকাগুলো শুধু অর্থ নয়, একেকটি গল্প। মানুষের আবেগের অনুদানের বণ্টন বা বিতরণে কেনো এমন হলো? প্রধান উপদেষ্টার তহবিলে দেওয়ার জন্য তো মানুষ টিএসসিতে এসে টাকা দিয়ে যায়নি হাসনাত আব্দুল্লাহ। প্রয়োজনের সময় অসহায় মানুষকে না দিয়ে ব্যাংকে রাখার ভাবনাটা আপনাদের মাথায় কি করে এলো সার্জিস আলম?
বন্যার্তরা যখন হাহাকার করছে, মানুষ যখন ঘরে রাখা গচ্ছিত টাকা দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে বাঁচাতে তখন সেই টাকা একত্রিত করে ব্যাংকে রাখার মহৎ ও সৎ চিন্তাটা নিয়ে মানুষের মনে যে খটকা লাগিয়ে দিলেন ভাইরা। আপনাদের মানুষ ভালোবাসে, বিশ্বাসও করে, কিন্তু আপনারা কি মানুষের মনে প্রশ্ন জাগার মতো কিছুই করেননি? বিশ্বাসটাকে এমন খাদের কিনারে এনে কে বা কারা দাঁড় করালেন? ফেসবুক সয়লাব, টাকা কোথায় গেলো? হিসাব নাই কেন? টিএসসিতে বিভিন্ন সময় ত্রাণ কার্যক্রম হয়েছে, কখনো হিসাব দেওয়ার কথা আসেনি, কারণ মানুষ দেখেছে ওখানে যা উঠেছে বিতরণ হয়ে গেছে তার চেয়ে বেশি। কিন্তু এবার কেন ত্রাণ বিতরণে ধীরে চলো নীতি নিতে গেলেন? নাকি ত্রাণ বিতরণেও যে কৃচ্ছতা সাধন করা যায় সেটাই জাতিকে দেখিয়ে দিলেন? মাঝখান দিয়ে রব উঠলো টাকা নিয়ে, আত্মসাতের কথাও উঠলো। সত্য হয়তো নয়, কিন্তু মিথ্যাচার করে হলেও পতিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় এমন মানুষ কি কম? বিষয়টা এতই নাজুক হয়ে উঠল যে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হলো - টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে ভিত্তিহীন!
ত্রাণ বিতরণ করতে না পারার যে কারণ আপনারা দেখাচ্ছেন তা কি গ্রহণযোগ্য? তা কি আপনাদের সাথে যায়? সারা দেশের লাখো ছাত্রকে এক করে, কোটি জনতাকে রাস্তায় নামানো তরুণরা ত্রাণ বিতরণের জন্য কয়েকশ বা কয়েক হাজার ছেলে মেয়ে পেলেন না! ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পালাতে বাধ্য করার মতো একটা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন আপনারা। ত্রাণ বিতরণের কাজটি সেই তুলনায় কিছুই না, তবে এটি ঠিকমত করতে পারলে মানুষের ভালোবাসার দানকে সদ্ব্যবহার করতে পারলে, তা আপনাদের মুখকে উজ্জ্বল করতো। কিন্তু কেনো জানি মনে হয় আপনাদের ঔজ্জ্বল্য কমে যাচ্ছে। এর কারণ কী তা একটু সতর্কভাবে ভাববেন স্নেহের ভাইসকল।
এ ক্ষেত্রে অটোম্যান সাম্রাজ্যের মহান সুলতান সুলেমান আর তার প্রিয় পুত্র মোস্তফার জীবন ও পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিই। মোস্তফা কিন্তু তার পিতার সাথে কোনরকম বিশ্বাসভঙ্গ করেননি, কিন্তু তার পিতার মনে যে অবিশ্বাস তা মোস্তফা কোনভাবেই দূর করতে পারেননি, পিতার সন্দেহের কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা আর আস্থা যে ধীরে ধীরে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দিকে যাচ্ছে তা কি আপনারা বুঝতে পারছেন সমন্বয়করা, ছাত্রনেতারা?
লেখক: বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন