শ্রমিকদের রক্ষা করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম
বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনে যে অভূতপূর্ন গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন একসময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় এবং সেই প্ল্যাটফর্ম থেকেই হাসিনাপতনের এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়। সকল শ্রেণির জনতার রক্ত আর প্রতিরোধে পালিয়ে যায় হাসিনা, পতন ঘটে স্বৈরাচারের।
আর জনতার সকল শ্রেণির মধ্যে বিশেষভাবে ভূমিকা ছিল শ্রমিক শ্রেণির। যখন ছাত্রদের হত্যা করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে মধ্যবিত্তকে হাসিনাশাহীর খুনি পুলিশ আর গুন্ডাবাহিনী প্রায় ঘরে ঢুকিয়ে ফেলেছিল তখন বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছিল যাত্রাবাড়ী আর উত্তরা এলাকার পরিবহণ ও পোষাক শ্রমিকেরা। ঢাকার এই দুই প্রবেশপথের রাজপথ দখলে রেখে তারাই আন্দোলন চাঙ্গা করেন। আওয়ামীবিরোধী সকল দলের নেতা-কর্মীরা তাদের সাথে যোগ দেন। শ্রমিকদের সাহসে বলীয়ান হয়ে আন্দোলন চলে।
তবে, সেই শ্রমিকেরা নতুন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্থান পাননি। সরকারে স্থান পাওয়া তো দূরের কথা, নিজেদের ন্যায্য বেতন পর্যন্ত তাঁরা পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর এই শ্রমিকেরা নিজেদের ন্যনতম মজুরির জন্য লড়াই করেছেন। তাঁদের শ্রমে ঘামে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও আওয়ামীশাহীর সুবিধাভোগী মালিকশ্রেনী সেগুলো বিদেশে পাচার করে বেগমপাড়া বানিয়েছে। নিজেদের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের পিটিয়েছে।
হাসিনা পতনের পর আওয়ামী মালিকেরা বহু জায়গায় শ্রমিকদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। কারখানা অচল রেখেছে। নানাভাবে তারা ষড়যন্ত্র করছে দেশকেও অচল করে দিয়ে আবার অরাজকতার রাজ কায়েম করার। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে অতি অবশ্যই শ্রমিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দেশের ন্যায্যতা ও গণতন্ত্র পথ পাবে।মেহনতি মানুষের অধিকার না থাকলে দেশে গণতন্ত্র কায়েম হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
সন্দেহ নেই, আমাদের চারপাশে এখনও ষড়যন্ত্রীর দল কার্যকর। গত ১৫ বছরে তারা যে পরিমাণ অর্থ ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে তা দিয়ে তারা জনতার অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। আমাদের এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সোনালি আশের দেশ বলা হলেও বাংলাদেশের পাটশিল্প এখন ধ্বংসপ্রায়। এদেশের পেপারমিলগুলো একসময় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরামানের কাগজ উৎপাদন করতো। এসব কাগজ দেশে সস্তায় পাওয়া যাওয়ায় প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্প উন্নতি করে যা দেশের শিক্ষাবিস্তার ও সত্যিকারের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। আর এইসব কারখানায় লাখো লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হওয়ায় অর্থনীতি সরাসরি উপকৃত হতো। তাছাড়াও গার্মেন্টস শিল্পের মতো পরিবেশ ধংসকারীও নয়।
অথচ এইসব শিল্প ধ্বংসপ্রায়। শিল্পের পাশাপাশি শ্রমিকদের অবস্থাও শোচনীয়। তাঁদের ইউনিয়ন করার অধিকার নাই। দরকষাকষির সুযোগ নাই। যদিও, বাংলাদেশের উন্নতিতে কেবল এইধরনের শিল্প নয়, বরং গাড়ি নির্মাণ, রোবট নির্মাণ ইত্যাদি ধরনের ভারী ও আধুনিক শিল্প যেগুলোতে মুনাফাবেশী ও শ্রমিকবন্ধ সেসব দিকেও মনোযোগ দেয়া দরকার। নতুন বাংলাদেশ গড়ার মেরুদণ্ড হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার।