প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ভয়াবহতম স্বৈরাচারী শাসনের অন্যতম অস্ত্র ছিলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। হাসিনার আমলে এই আইনের মাধ্যমে ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারতো। অনলাইনে লেখালেখি বা কার্যকলাপের জন্য যে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা যেতো। এই আইনের মাধ্যেম সরকার ও সরকার পক্ষের লোকজন অতি সহজেই সরকারবিরোধী মতামত ও প্রতিবাদকে দমন করতো। নানামাত্রিক প্রতিবাদের ফলে ডিএসএ আইন পরিমার্জিত হয়ে ২০২৩ সালে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট চালু হয়, তবে এই আইনটিও স্বৈরাচারের হাতিয়ার হয়ে উঠে।
দুঃখের বিষয় স্বৈরাচারের পতন হলেও এই আইন এখনো বলবৎ। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সাইবার আইন বিলুপ্ত করা হয়নি। শুধু তাই না, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে কটূক্তি করায় একজনের নামে পটুয়াখালীতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মো. মাসুম বিল্লাহ রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশনের একজন পয়েন্টসম্যান। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সময় নিউজ ডট টিভি এবং ঢাকা নিউজের শেয়ার করা ভিডিও দেখে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আপনাকে দেখে মনে হয় আমেরিকার দালাল’। এমন মন্তব্যে মামলার বাদী হাসান মাহমুদ ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, মাসুম বিল্লাহ এলাকায় এসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘সুদখোর, ইহুদি, পশ্চিমা দালাল’ বলে মানহানিমূলক উক্তি করেছেন। সর্বোপরি মাসুম বিল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘একাকী পাইলে গুলি করিয়া হত্যা করার’ হুমকিও দিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মাসুম বিল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য একজন মানুষকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর-অপদস্তমূলক আচরণ করায় ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০৭/৪৯৯/৫০৬ (৪) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে বিবাদী পক্ষ দাবি করছেন, মূলত ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।
তবে, ঘটনা যাই হোক, ফেসবুক বা অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে এই ধরনের মামলা করাটা আওয়ামী আমলের অরাজকতা মনে করিয়ে দেয়। এই ধরনের মামলা গ্রহণ করাও ঈঙ্গিত দেয় যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ তরফে সাইবার সিকিউরিটি আইনের মতো বিতর্কিত আইন বিলোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটালেও তার রেখে যাওয়া শোষণ যন্ত্র বহাল রাখলে এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। অচিরেই এই ধরনের সমস্ত কালাকানুন নিষিদ্ধ করতে হবে।