Logo
Logo
×

অভিমত

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি কেবল কথার কথা?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ পিএম

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি কেবল কথার কথা?

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে স্বাধীন গণমাধ্যম। গণতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে জবাবদিহিতা ও ন্যায্যতা। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের তথ্য প্রকাশ করে এবং ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে জবাবদিহিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটা শক্তির বিপরীতেই একটি বিপরীত শক্তি বা কাউন্টার-ব্যালেন্স থাকতে হয় নতুবা শক্তির ভারসাম্য থাকে না। গণমাধ্যম সেই ভারসাম্য নিশ্চিত করে।

এই কারণে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্যই থাকে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর মাধ্যমে স্বৈরাচার যে কেবল জবাবদিহিতা এড়িয়ে নিজের শক্তিকে বাড়ায় তাই কেবল নয়, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে স্বৈরাচার নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করে। নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম হয়ে উঠে স্বৈরাচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এর মাধ্যমে সে জনমতকে নিজের দিকে আনার চেষ্টা করে, বিরোধীমতকে নির্মমভাবে দমন করার সম্মতি উৎপাদন করে। সত্য গোপন করে নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম জনগণকে কেবল বিভ্রান্তই করে না, জনতার আশ্রয় নষ্ট করে ফেলে। 

হাসিনাশাহী ঠিক এই কাজটিই করেছিল। দেশের গণমাধ্যমের মুখ চেপে ধরেছিল। হাসান মাহমুদ মার্কা তথ্যমন্ত্রীরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বলগা চাপিয়ে দিয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের বাধ্য করেছিল বা প্রলোভনে ফেলে কাজ হাসিল করেছিল। মুখে স্বাধীনতার কথা বললে দায়িত্বশীলতা, দেশবিরোধীতা ইত্যাদি জুজুর ভয় দেখিয়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ আটকে দেওয়ায় ছিল তাঁদের কৌশল। 

হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, বহু মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো গেছে। এদেশের মানুষ দারুণ এক বিজয় অর্জন করেছে। যদিও এখনও দেশে গণতন্ত্র আসেনি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কিন্তু যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে তাঁরা এই বিপ্লবের থেকেই উঠে আসা। তাঁদের ওপর জনগণের আস্থা আছে। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে থাকা দলগুলোও তাঁদের ওপরে আস্থা রাখছেন। 

কিন্তু, সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা, যিনি নিজেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে কিন্তু, কেন, যদি ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। অনেকটাই পতিত হাসান মাহমুদের সুরেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সীমা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। 

এই ধরনের প্রশ্ন তোলা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতাই, এর সীমা নেই। গণতন্ত্রকে এই বোঝা বহন করতেই হবে। দরজা খুলে রাখলে যেমন বাতাসের সাথে সাথে ধুলা ঢোকে স্বাধীনতার মূল্যও তাই। আর, রাষ্ট্র এতোটাই শক্তিশালী তাঁকে ভারসাম্য রাখতে এই স্বাধীনতা লাগবেই। যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যবহার করে প্রচলিত আইনে অপরাধ করা হয়, জাতিগত দাঙ্গা বাধানোর মতো চেষ্টা করা হয় তবে নির্দিষ্ট কাজের সাজা দেওয়া রাষ্ট্রের কাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই দায়িত্ব, কিন্তু এই কারণে গোটা গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই রুদ্ধ করার সুযোগ নাই। 

সন্দেহ নাই পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনায় চলে না, তাদের ওপর আমরা ভরসা রাখি, রাখতে চাই। আর ঠিক এই কারণেই তাঁদের প্রশ্নের ওপর রাখা জরুরি। স্বাধীন গণমাধ্যম যেকোনো ভাবে নিশ্চিত করা জরুরি। তা আমাদের এতো কষ্টে পাওয়া স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন