প্রতিটি গণপিটুনির হত্যা দেশের জন্য অশনিসংকেত
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ পিএম
পৃথিবীর ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের কিছুকাল পরেই প্রতিবিপ্লবের উপস্থিতি। জনতার ত্যাগ-তিতিক্ষার বিজয়ের ফসল লুটে নিয়েছে জনবিরোধীরা। এর পেছনে মাঝে মাঝে কাজ করে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র, কখনো বিজয়ীদের বাড়াবাড়ি বা নিয়ন্ত্রনহীনতা আর বেশিরভাগ সময়েই সবগুলোর একসাথে উপস্থিতি। বাংলাদেশে অভাবনীয়, অনবদ্য এক অভ্যুত্থানের পর তাই এইসব নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, হাসিনাশাহী এদেশের পুলিশকে গণহত্যার যন্ত্রে পরিণত করেছিল। ফলে, হাসিনার পতন হলেও পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরেনি, পুলিশও সাহস করছে না দায়িত্ব নেবার। এদের একটা অংশ হয়তো আবার স্বপ্নও দেখছে খুনি হাসিনাকে ফেরানোর। এর ফলে দেশব্যাপী একধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে। অবশ্য পুলিশবিহীন রাষ্ট্রে যতোটা অরাজকতা হবার কথা ততোটা হয়নাই, কিন্তু তা বলে এই অবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।
প্রথম ধাক্কায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জানমালের ওপর আক্রমণ করা হয়, প্রচুর স্থানে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। সেগুলোকে ক্ষোভে থাকা জনতার আক্রমণ বলা হলেও এতে বেশকিছু নিরীহ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দায়িত্ব ছিল এইসব ভাঙচুর দ্রুত থামানো।
তথাপি দেখা যায়, দেশব্যাপী মাজারগুলোতে হামলা হয়েছে। আবারও উন্মত্ত জনতাকেই দোষারোপ করা হয়েছে। তবে, এইসব তথাকথিত জনতা যতোটা স্বতঃস্ফূর্ত তার থেকেও এদের যে উত্তেজিত করা ভাঙার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার। এসব কাণ্ডে সরাসরি জড়িত কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যারা গণতন্ত্রের বিপক্ষে। এদের ঠেকাতে না পারা একদিকে যেমন দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতা অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সুযোগ। কোনো অজুহাতেই এসব চলতে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু, এরই মধ্যে দেখা গেলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে একজনকে হত্যা করে ছাত্ররা। শুধু তাই না, হত্যা করার আগে এক দফা পিটিয়ে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় এবং খাবার পর আবার পিটিয়ে মারা হয়।
এই হত্যাকে কোনোভাবেই ‘উত্তেজিত জনতার’ কাজ বলে গণ্য করা যায় না। দেশের সেরা মেধাবীদের এহেন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এতোটা সময় নিয়ে এতোটা নৃশংসভাবে আরেকজনকে মারধর করা, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া কোনোভাবেই সুস্থ আচরণ নয়। অবিলম্বে এইসব খুনিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে যায় নাই কীভাবে শহীদ আবরারকে তাঁরই বুয়েটের সহপাঠীরা তারই হলে হত্যা করেছিলো। নতুন বাংলাদেশে সেই ঘটনা ঘটতে দেওয়া যাবে না। তদন্ত করে বের করতে হবে দোষী কারা, এর পিছনে পরাজিত শক্তির হাত আছে কিনা তাও দেখতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনাটার বেলাতেও তাই। যদিও সেখানে যিনি খুন হয়েছেন তিনি ছাত্রলীগের একজন কুখ্যাত ক্যাডার। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কুখ্যাত লোকটি কোন উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে গিয়েছিল? কাদের মদতে বা সাহসে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন, এই গণপিটুনিতে হত্যা কারা ঘটালো, কেন ঘটালো?
যারা জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, দেশের গণতন্ত্র চায়, কোন রকম অজুহাত না দিয়ে এদের দায়িত্ব এইসব প্রশ্নের সুষ্ঠু সমাধান খোঁজা। আর কোনো ধরনের অরাজকতা হতে না দেওয়া। প্রতিটি আইন বহির্ভূত হত্যা জুলাই বিপ্লব আর দেশের জন্য অশনিসংকেত