জোতিকা জ্যোতির ফেসবুক প্রলাপ উসকানি এবং শিরদাঁড়ার আলাপ
ছবি: সংগৃহীত
জোতিকা জ্যোতি নামে একজন অভিনেত্রী আছেন, জানতাম না। তার নামটা প্রথম শুনলাম ‘আলো আসবেই’ নামে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার কল্যাণে। তিনি যে শিল্পকলায় চাকরি করতেন তাও জানা ছিলো না। জানি না কোন যোগ্যতায় তিনি শিল্পকলায় চাকরি পেয়েছেন। সম্ভবত লেজুরবৃত্তি কোটায়। গতকাল তাকে নিয়ে খবর হয়েছে গণমাধ্যমে। তিনি শিল্পকলায় গিয়েছিলেন এবং তাকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিলো। কেন হয়েছিলো?
শিক্ষার্থীরা যখন বুলেটে প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন জোতিকা জ্যোতি আয়েশের সাথে তা অবলোকন এবং উপভোগ করছিলেন। ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের আলাপচারিতা তার প্রমাণ। আজকে তিনি শিল্পকলা থেকে বিতারিত হওয়ার পর, ফেসবুক লাইভে এসে কাঁদলেন। তাকে অপমান করা হয়েছে তাই তার দুচোখ থেকে পানি নয় ‘জল’ নির্গত হয়েছে। ‘জল’ বললাম এ জন্য যে, তিনি সংখ্যালঘু কার্ডটা একেবারে ঠিকমত খেলেছেন। যেন তিনি হিন্দু বলেই তাকে অপমান করা হয়েছে এবং তাকে কাঁদতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু মুসলমান শিক্ষার্থীরা ছিলো কীট-পতঙ্গ, তাদের মৃত্যুতে তাই তার কান্না আসেনি। তার কথার অর্থ অনেকটা এমনি দাঁড়ায়। তিনি যে পুরো একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ এবং দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন লাইভে এসে তা পরিষ্কার।
ফ্যাসিস্ট রেজিমের সুবিধাভোগী অনেককেই জনরোষে পড়তে হয়েছে। তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ যোগ্য মানুষকে ডিঙিয়ে চাকরি পেয়েছেন, প্রমোশন পেয়েছেন শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট রেজিমের সমর্থক ছিলেন বলে। কত মানুষকে প্রমোশন দেয়া হয়নি শুধুমাত্র ফ্যাসিস্টের অনুগত না হওয়ার কারণে। শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা ছিলেন বঞ্চিত। যারা ফ্যাসিস্ট রেজিমের তল্পিবাহক তারা সবাই এখন অপদস্ত হচ্ছেন। জোতিকা জ্যোতি তার বাইরে কেউ নন। যতদূর খোঁজ নিয়ে জানলাম, শিল্পকলায় চাকরি করার যে যোগ্যতার প্রয়োজন তার ততটা নেই। তারপরও তিনি চাকরি পেয়েছেন। কীভাবে পেয়েছেন সেটা নিপুন আক্তারদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। যাকগে, সেসব কথা বলতে গেলে ‘আলিফ-লায়লা’ হয়ে যাবে।
জোতিকা জ্যোতির লাইভের লক্ষ্যটাই ছিলো বিতর্ক তৈরি করা এবং তার তুরুপের তাস ছিলো সাম্প্রদায়িকতা। জানি না, পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার লাইভে এসে বলেন কিনা, তিনি হিন্দু বলেই তার বিরুদ্ধে নানা কিছু হচ্ছে, আসলে তিনি নির্দোষ। অসম্ভব কিছু না, বলতেই পারেন। অরুণা বিশ্বাস বাচ্চাদের উপর গরম ‘জল’ ঢালতে বললে দোষ হয় না। বাচ্চাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বললেও দোষ হয় না, কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা হলেই দোষ। অরুণা বিশ্বাস চালাক বলেই পালিয়েছেন। তিনি বুঝেছেন হিন্দু কার্ড খেলে এখন জ্যাকপট পাওয়া যাবে না। জোতিকা জ্যোতি এত ঘাটের ‘জল’ খাননি। অরুণা বিশ্বাসের মতন অভিজ্ঞতা তার সঞ্চয় হয়নি, তাই তিনি ধরা খেতে যাচ্ছেন। তিনি হিন্দু কার্ড খেলে সাম্প্রদায়িকতার যে উসকানি দিয়েছেন তা এক অর্থে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কারণ তার মতো ফ্যাসিস্ট রেজিমের অনেক উচ্ছিষ্টভোগীই ধরা খেয়েছেন এবং তারা দৃশ্যত মুসলমান। সুতরাং দু’একজনের হিন্দুর কার্ড খেলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কলকাতার রিপাবলিক টিভিতে যে উদ্দেশ্য দৃশ্যমান।
জোতিকা জ্যোতি যদি যোগ্য হন তাহলে বাংলাদেশে যত অভিনেত্রী আছেন সবাই যোগ্য। একবারে মুনমুন, ময়ূরী পর্যন্ত। একটা দেশের সংসদকে নাচগানের আড্ডা বানানোর পাশাপাশি প্রতিটা সেক্টরকেই জোতিকা জ্যোতির মতন মানুষ দিয়ে কলুষিত করা হয়েছে। এমনকি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রকেও বানানো হয়েছে রীতিমত প্রমোদভবন। মালা খানের কাহিনী তো গণমাধ্যমের কল্যাণে সবারই জানা। জোতিকা জ্যোতি নিজের অজান্তেই স্যানেটারি প্যাডের কথা উচ্চারণ করে তাই জানিয়ে দিলেন যে, একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস যা সাধারণত ব্যাগে বহন করার কথা, তা থাকে অফিসে এবং তা নিতে অফিসে আসতে হয়। ভাগ্য ভালো অন্যরা তার ব্যাগ চেক করেনি। সে ব্যাগে হয়তো আরো অনেক বিড়াল ছিলো। ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রয়াত বরপুত্র সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের রেলের কালো বিড়ালের মতন।
জোতিকা জ্যোতি যোগ্যতার কথা বলেছেন। হাসি পায় এমন কথা শুনলে। নিজের কথা বলি। প্রকাশের আগে একটা গণমাধ্যমের মালিকপক্ষ থেকে ফোন করা হলো, আমাকে থাকতে হবে তাদের সাথে। সম্পাদনা পরিষদে থাকা চ্যালেঞ্জিং। বলা হলো, প্রতিদিন শেষের পাতায় আমার জন্য একটা জায়গা বরাদ্দ থাকবে, সেখানে মিনি কলামের মতন লিখতে হবে। আমি বললাম ভেবে দেখি। কিন্তু না, কাগজটি বের হলো, কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ হলো না। পরে অবশ্য কারণটি জানতে পেরেছিলাম। আমার মামা মরহুম খোন্দকার আব্দুল হামিদ সাংবাদিকতা করতেন। স্পষ্টভাষী ও মর্দে মুমিন নামে কলাম লিখতেন ইত্তেফাক ও আজাদে। সাংবাদিকতায় একুশে পদকও পেয়েছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সাথে যার নাম জড়িয়ে আছে। দু’বার মন্ত্রী হয়েছিলেন বিএনপি সরকারের। শহীদ জিয়াউর রহমান যে কয়জন মানুষ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলেন তার মধ্যে আমার মামা ছিলেন অন্যতম। আমার পিতা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কঠিন সময়ে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে হাল ধরেছিলেন এবং নিজেও দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর সাংবাদিকতা করেছেন। শুধু তাই নয়, লেখক ও কবি ছিলেন বাবা। তার বেশ কয়েকটি বই রয়েছে। বিপরীতে আমি শুধু সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলাম। স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের জন্য। সবসময় লিখেছি মাঝ বরাবর থেকে। কোনো অন্যায়কেই ছাড় দিইনি এতদিনের সাংবাদিকতা জীবনে। কিন্তু তারপরেও আমার মামা ও বাবা’র গায়ে বিএনপির সিল ছিলো, তাই আমার চাকরি হয়েনি সেই কাগজে। সেই কাগজের সম্পাদক এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। সম্পাদনা পরিষদে রয়েছেন আমার পরিচিত একজনও। জানি না তারা বিষয়টি অবগত কিনা। কথা হয়েছিলো আরেকটা টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনের জন্যও। বড় পদেই যোগ দেয়ার কথা। কিন্তু হয়নি আরেকজনের কারণে, তিনিও হিন্দু মানুষ, এখন মামলার আসামি। জোতিকা জ্যোতির লাইভের ভাষ্য অনুযায়ী তাহলে তো আমিও সাম্প্রদায়িকতার শিকার।
জানি, এখনো আমার হবে না। কারণ তোষামোদিটা আমার রক্তে নেই। পরিচিত অনেকেই আছেন, যাদের বললে হয়তো যেকোনো সময় ‘টুক করে’ চাকরিতে ঢুকে যেতে পারি। কিন্তু বলবো না। মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই, নত করে নয়। লিখতে পারি। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনাও আছে যৎসামান্য। জানি, কিবোর্ড কখন অস্ত্র হয়ে ওঠে এবং সে অস্ত্রে কাকে কীভাবে ঘায়েল করতে হয়। কী লিখলে কোথায় টান পড়ে। কোন দড়ি ধরে টান দিলে রাজা খানখান না হলেও পায়ের জমিন খানিকটা নড়বড়ে হয়। জানি, এসব জানি। সুতরাং শিরদাঁড়া খাঁড়া থাক। শ্রীজাতের ভাষায় তফাৎ থাক শিরদাঁড়ায়।