বাংলাদেশের মানুষ একসময় কল্পনা করতেই প্রায় ভুলে গিয়েছিলো যে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব। শুধু রাষ্ট্রের সমস্ত শক্তি আর ক্ষমতাই না, প্রতিবেশী দেশের গোলামি ছিলো হাসিনার টিকে থাকার খুটি। কিন্তু, এদেশের মানুষ আবার প্রমাণ করেছে যে, জনতার মিলিত শক্তির কাছে শাসকের শক্তি একসময় মাথা নত করবেই।
তবে, হাসিনা পালিয়ে গেলেও দেশটাকে রেখে গেছে এক বিরাট ধংসস্তুপ হিসেবে। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ধসিয়ে দিয়েছে, পুলিশকে নিজের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করায় এরা কেবল জনগণের উপর গুলিই চালায়নি, হারিয়েছে আস্থা ও বিশ্বাস। আর দেশের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে বিপুল ঋণের বোঝা।
এর অন্যতম জঘন্য উদাহরণ হচ্ছে ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছের লোক আদানির সঙ্গে দেশবিরোধী এমন এক অসম চুক্তি হাসিনা সরকার করেছিলো যে, একে গোলামি চুক্তি বলাই শ্রেয়। নানা সময় রিপোর্ট এসেছে যে, নিম্নমানের কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাজারের তুলনায় অনেকগুণ বেশি দামে কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের কাঠামো ব্যবহার করে, সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেওয়ার শর্তে বাংলাদেশ রাজি হলেও লাভের গুড় খাবে আদানি— এমনটাই এই চুক্তির সারকথা।
তবে, হাসিনা পতনের কিছুদিন আগে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়। এই কারণে হাসিনা সরকার আদানির পাওনা বকেয়া রাখে। কিন্তু, হাসিনার পতনের পর আদানি এই পাওনা টাকার জন্য নড়েচড়ে বসেছে। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ঘাটতিতে লোডশেডিং বেড়ে গেছে।
ইতোমধ্যেই বিপাকে থাকা বাংলাদেশ কীভাবে আদানির ১ বিলিয়ন ডলারের মতো পাওনা মেটাবে তা একটা আশু সমস্যা। ভারতও ঠারে ঠুরে বুঝিয়ে দিয়েছে হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো শক্তিকে তারা এদেশে পছন্দ করে না। ফলে, সেদিক থেকেও চাপ বাড়বে, বাংলাদেশকে গোলামি চুক্তির বকেয়া শোধ করতেই হবে।
কিন্তু, তা এই চুক্তির দায় আসলে কতোদিন টেনে যেতে হবে তা নিয়ে ভাবা জরুরি। হাসিনা সরকারের চুক্তিগুলো হতো নিজের দলের লোকদের পকেট ভরা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। ফলে, এগুলো যে কেবল দেশবিরোধী হতো তাইই না, এইসব চুক্তি বাতিলের ক্লজও নিশ্চিতভাবেই অনেক অসম হওয়ার কথা। যদ্দুর জানা গেছে, আদানির সাথে চুক্তিটি ২৫ বছরের।
কিন্তু, যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে এই ধরনের অসম ও ক্ষতিকর চুক্তি বাতিল করতে হবে। গোলামির জিঞ্জির ভাঙ্গার সেটাই হবে প্রথম ধাপ।