বাংলাদেশে ২০২৪ সালে যা ঘটলো তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের টেক্সট বইয়ে বহুকাল যাবত পড়ানো হবে বলে মনে হয়। সারভেইলেন্স ক্যাপিটালিজমের যুগে যখন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে একটা দল জনতাকে শুষে নিচ্ছিল, প্রতিবেশী গ্লোবাল সুপারপাওয়ারের হাতের পুতুল হয়ে অসীম ক্ষমতার চর্চা করছিল, সেসময় নিরস্ত্র জনতা এইরকম একটা সরকারের পতন ঘটাতে পারে তা ভাবা অবিশ্বাস্য ছিল। 

এই বিশ্বায়নের যুগেও পুরো ৫ দিন বিশ্ব থেকে সকল যোগাযোগ বন্ধ রেখে গণহত্যা চালানো, হেলিকপ্টার থেকে নিরস্ত্র সিভিলিয়ানদের উপর লাইভ রাউন্ডস, টিয়ার শেল মারা, স্নাইপার ইউজ করেও বাঁচতে পারেনি খুনি হাসিনা। বাধ্য হয় ভারতে পালাতে। 

অবিশ্বাস্য শুধু এই পর্যন্তই না। এরপর এক সপ্তাহের বেশি পুলিশ না থাকা, পুরা জুডিশিয়ারি মিলে ক্যুর চেষ্টা করা, ৩০০ আসন থেকে ৩০০ এমপি ভেগে যাওয়া এইসব একাডেমিয়াতে রীতিমত বিস্ময়কর এবং গভীর গবেষণার দাবি রাখবে। রাষ্ট্রের কাছে কেবলই শোষণের পিন্ড হয়ে মারা মানুষগুলো কীভাবে নিজেরাই এক হয়ে রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হয়ে উঠলো? প্রায় ১৬ বছরের অসহ্য শোষণ, লুটপাট, হত্যা সামলে তারা কিভাবে এইরকম একটা ফুল ফোটালো প্রবল সাহসে!  

হাসিনা যাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে কী এক ভয়াবহ সরকার ছিল, যারা ১৬ মাস বিদ্যুতের জ্বালানি বিল বাকি রেখে দিয়েছে, রিজার্ভের হিসাব কত কেউই জানে না, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের রুমে তার এলাকার এক ক্লার্করে নিয়ে বসে দেশের ডাটা বানাইয়া উন্নয়ন দেখাইতো, আর পুরা আইনি ব্যবস্থাকেই বানিয়ে ফেলেছিল শোষণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। হাসিনার রেখে যাওয়া বিষের জের বাংলাদেশকে আরও বহুদিন টানতে হবে। 

আর এর প্রভাবে এখন চলছে অরাজকতা। পৃথিবীর ইতিহাসে অভ্যুত্থানের অসম্ভব এক গল্প লেখার পরেও প্রবল এক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু, যেই প্রবল আত্মবিশ্বাস আর শক্তি অর্জন করেছে তা বুঝিয়ে দেয় এই দেশ হারবে না। 

রাজনীতি বিজ্ঞানের পণ্ডিতরা বলেন রাজনীতি সবচেয়ে মহান হয় যদি তা গণমানুষের ভেতর থেকে আসা আত্মবিশ্বাসকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। আমাদের জুলাই ২০২৪ সবসময় সেই আলো হয়ে যেন থাকে। আমরা হয়তো দারুণ হতাশ হয়ে পড়বো মাঝে মাঝেই। কিন্তু যেই ইতিহাস আমরা রচনা করেছি তা আমাদের পথ হারাতে দেবে না। 

হাসিনাকে যারা উৎখাত করতে পেরেছে তারা দুনিয়ার সব কিছু পারবে।