অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ
ইউনূস সরকার এক মাস পূর্ণ করল। যে অবস্থায় শেখ হাসিনা দেশকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ধংসস্তূপে, লুটেপুটে শেষ হওয়া বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়ে এক মাসের মাথায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না এই কথাটাই বাস্তব। তবে, সারা দুনিয়ার কাছে সমাদৃত, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার উপদেস্টা পরিষদের কাছে জাতির আশা ছিলো এই এক মাসে অন্তত কিছু দিশা দেয়া।
দুঃখজনকভাবে, সেই আশার অনুপাতে দিশা পাওয়া যাচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। ভঙ্গুর অর্থনীতি মেরামতের খুব একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক অবস্থা থমথমে। তবে সবচেয়ে শংকাজনক হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
আওয়ামী লীগ যেভাবে লুটপাট ও সন্ত্রাস করেছিলো, তাতে আশংকা ছিলো দেশের আইনশৃঙ্খলা আর জীবনে ফিরবে কিনা। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ আবার অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। একে রক্ষা করতে হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফেরাতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন মাজারগুলোতে ভাংচুর চলছে। উত্তেজিত জনতা এইসব ধংসের সাথে জড়িত বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। কিন্তু, সেসব আটকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতা অশনি সংকেত।
এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যেম কেউ তর্ক করছেন, মাজার ইসলামের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং মাজার ভাঙ্গার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। আমাদের মনে পড়ে যায়, হাসিনা সরকার ঠিক এইভাবে নিজেদের অপছন্দের মতামতকে দমন করার জন্য জনতাকে উস্কে দিত। ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞাই হচ্ছে জনতার দোহাই দিয়ে অপছন্দের মতামতকে গুঁড়িয়ে দেয়া।
এরই মধ্যে আমরা দেখতে পেলাম, ছাত্রলীগের এক প্রাক্তন নেতাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। জানা যায়, তিনি অনেক আগে পা হারিয়েছিলেন এবং আর ছাত্রলীগ করতেন না। মাত্র তিন দিন আগে বাবা হওয়া এই মানুষটিকে শিবিরের কর্মীরা হত্যা করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যেম উঠে এসেছে। এই নির্মমতা মানুষকে আবারও ভয়ের দোলাচলে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় স্বৈরাচারী শাসন এবং বিপুল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত, কিন্তু বিনা বিচারে প্রতিশোধ নিতে থাকলে ঘুরেফিরে সেই আওয়ামী শাসনের মতোই দেশের পরিণতি হবে। আওয়ামী লীগ একই কায়দায় জামাত ও শিবিরের নাম দিয়ে হত্যা করাটাকে জায়েজ বানিয়ে ফেলেছিলো। বিচার ও জবাবদিহিহীনতা আওয়ামী লীগ ও হাসিনাকে দানব বানিয়েছিলো।
বাংলাদেশ সেই দানব আর দেখতে চায় না। জনগণের উচ্চাশা অনেক বেশি। হাজারো শহীদের রক্তের উপর ভাসছে দেশ। সেখানে সামান্যতম ফ্যাসিবাদী চিহ্ন আমাদের ভয়ার্ত করে, আতংকগ্রস্ত করে। সরকারের মেয়াদ মাত্র এক মাস, এইগুলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এইসব কথা অজুহাতের মতো শোনায়। ফ্যাসিবাদের মূল গোড়া থেকেই উৎপাটন করতে হবে, বিন্দুমাত্র সুযোগ দেয়া যাবে না।