Logo
Logo
×

অভিমত

জাতীয় সংগীত নিয়ে অসময়ের বিতর্ক

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম

জাতীয় সংগীত নিয়ে অসময়ের বিতর্ক

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে এখনো শহীদের রক্তের দাগ শুকায় নাই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে নিজের মসনদ বাঁচাইতে যাদের উপর গুলি করেছিলো তাদের কেউ কেউ এখনো মরণের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। প্রায় প্রতিদিনই আমরা শুনছি কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন দীর্ঘ লড়াইয়ের পর। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেশটা গুছিয়ে চলছে না। 

হাসিনা পুলিশকে একেবারে জনবিরোধী হত্যাযন্ত্র বানিয়ে ফেলেছিল। এর ফলে জনগণের সঙ্গে এই বাহিনীর দূরত্ব ও অবিশ্বাস তৈরি হয়। প্রায় এক মাসেও সেই আস্থা ফেরেনি। তদুপরি দেশে বন্যা আঘাত এনেছে। দীর্ঘদিন অধিকার বঞ্চিত মানুষদের বড় অংশ নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এতোদিন কথা বলতে না পারা মানুষরা চকিতেই সমাধান চাইছেন। শ্রমিক, মেহনতি মানুষরা রাস্তায় নেমে আসছেন। 

অন্যদিকে পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগ নানাভাবে প্রতিবিপ্লব করতে পারে এই আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

এই অবস্থায়, প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো, এরপর আওয়ামী লীগের ধসিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করা। আর দ্রুততম সময়ে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। কেননা, জনপ্রতিনিধিরাই গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে। জনগণের ভোটাধিকার গণতন্ত্রের ভিত্তি। 

ফলত, এখন যেসব কাজ না হলেই না, বিশেষত তাত্ত্বিক বিতর্কের সুযোগ যেখানে আছে, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়াই উচিত। যেই দারুণ ঐক্যর মধ্যে দিয়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছিল সেই ঐক্য যদ্দুর সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত। মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ক্রান্তিকাল। শুধু তাই না, এই সরকারের সমস্ত কিছু পরিবর্তন করার এখতিয়ারও নেই। 

অথচ, এই সময় রব উঠলো জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের। এমন না যে, জাতীয় সংগীত অপরিবর্তনীয়, কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংগীতের আশু পরিবর্তন করতেই হবে তা না। এই সংগীত হাসিনার আমলে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নির্বাচিত এই সংগীত দেশের জন্মলগ্ন থেকেই ছিলো। আর হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হাতিয়ার বানিয়েছিল বলে মুক্তিযুদ্ধকে কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এতো কিছুর পরেও, দেশের অধিকাংশ জনতা যদি মনে করে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা দরকার, তার জন্য গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরকম একটা সিদ্ধান্তে যাবার এখতিয়ার যেমন সীমিত তেমনি এই ক্রান্তিলগ্নে সময়েরও অপচয়। 

এরচেয়ে অনেক জরুরি হচ্ছে হাসিনার আমলে করা ডিএসই আইন বাতিল করা। যেই আইন জনতার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো। হাসিনাসহ সকল খুনি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার করা আর অতি অবশ্যই আন্দোলনে শহীদদের তালিকা করা এবং আহতদের পাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাঁড়ানো। 

গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যে কোনো দাবি করতেই পারে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে, সময়ের প্রয়োজনে কিছু কিছু অসময়োচিত দাবি উপেক্ষা করাও জরুরি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন