আওয়ামী লীগের শাসনামলে আর সবকিছুর মতো ক্রিকেটটাকেও দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছিল। শয়ে শয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য, রীতিমতো জাতীয়তাবাদের অংশ বানানো হলেও সেই তুলনায় ক্রিকেট দলের সাফল্য ছিল সীমিত। দুনিয়ার অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড হলেও সাফল্য ছিল খুবই সীমিত। বরং ক্রিকেটকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফিকে আওয়ামী লীগ বিনাভোটের এমপি বানিয়েছে। মাশরাফি নিজের সুনাম খুইয়ে আওয়ামী লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। ক্ষমতার দাপটে ২০১৯ বিশ্বকাপে আনফিট হয়েও জোর করে খেলে গেছেন, দলের ক্ষতি করেছেন।
একই অবস্থা হয়েছে দেশের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানের বেলাতেও। তিনিও ক্ষমতার জোরে ব্যাপক দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। দলকে কুক্ষিগত করে ২০২৩ বিশ্বকাপে হতাশাজনক ফলাফল বয়ে এনেছেন মাশরাফির মতোই। আওয়ামী স্বার্থে ক্রিকেটের এইরুপ ধ্বংস হয়েছে।
তবে, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের ক্রিকেটের তৃণমূল পর্যায়ে। আওয়ামী নেতারা ক্রিকেট বোর্ড দখলের উদ্দেশ্যে তৃণমূলের ক্রিকেট পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। পাতানো খেলা ও আম্পায়ারদের হাত করে বোর্ড ডিরেক্টরদের দলগুলোকে জেতানো হয়েছে। তৃণমূলে এতো বেশি পরিমাণ এন্ট্রি ফি রাখা হতো যে, উৎসাহী একাডেমি কিংবা পাড়ার ক্লাবদের খেলার সুযোগই বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও যারা খেলে গেছে তাদের জোর করে হারানো হতো। একবার এক বোলার সেই প্রতিবাদে ৪ বলে ৯২ রান দেন, বিশ্বব্যাপী ঘটনাটা আলোচিত হয়, কিন্তু ক্রিকেটের দুর্নীতি থামে না।
আওয়ামী নেতারাই ক্রিকেট বোর্ডের হর্তাকর্তা। তাঁদের ইশারাতেই ক্রিকেটের আগাগোড়া চলতো। টিভি স্বত্ত্বের বাণিজ্য থেকে সমস্ত টাকা পয়সা হাতানোই উদ্দেশ্যে। তরুণ খেলোয়াড়রা তাঁদের পছন্দমতো ক্লাবে না খেললে ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেওয়া হতো। আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাপণ ও শেখ হাসিনার জাতীয় দলের সাফল্য নিয়ে ক্রেডিট নিয়ে নেয়ার নোংরামি তো ছিলোই।
অথচ, পুরনোরা মনে করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও মরহুম আরাফাত রহমান কোকো ক্রিকেট বোর্ডে বড় পদে যাননি। যেসময় ক্রিকেট কেবল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেড়ে উঠছে তখন ক্রিকেট অন্তপ্রাণ কোকো সাধারণ পদে থেকে ক্রিকেটের উন্নয়নের চেষ্টাই চালিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময়ে তৃণমূলের উন্নয়ন, খেলোয়াড় পাইপলাইন তৈরির কাজটা করেছিলেন বলেই আমরা মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের পেয়েছিলাম।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের উইনিং শটটা আসলো সাকিবের ব্যাট থেকে। দারুণ খেলোয়াড় হলেও প্রচণ্ড বিতর্কিত এই মানুষটি বাংলাদেশের আওয়ামীকরণের বড় একটা প্রতীক। সাকিব, মাশরাফির অপরাধ প্রমাণ হলে অতি অবশ্যই বিচার করতে হবে। কিন্তু এই সাথে এও মনে রাখতে হবে, কীভাবে খেলোয়াড়রা স্বৈরাচারের গুটি হয়ে যান। ভবিষ্যতে সেগুলো রোধ করতে হবে।
প্রথম টেস্ট জয়ের পর ম্যান অফ দি ম্যাচ মুশফিক পুরস্কারের টাকা বন্যার্তদের তহবিলে দিয়েছিলেন, অধিনায়ক শান্ত জয় উৎসর্গ করেছিলেন জুলাই আন্দোলনের শহীদদের। সেই স্পৃহা নিয়েই বাংলাদেশ ঐতিহাসিক সিরিজটাও জিতলো। জুলাই আন্দোলনের উদ্দীপ্ত দেশে এই জয় দারুণ টনিক হয়ে আসবে। এই দেশের তরুণরা নিজেদের ক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী হবে।
স্বৈরাচারমুক্ত দেশে ক্রিকেটটা ডানা মেলে উড়ুক। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের গর্ব হোক।