Logo
Logo
×

অভিমত

এক-এগারো যেন ফিরে না আসে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৩ এএম

এক-এগারো যেন ফিরে না আসে

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন কোনো ঘটনা না। বেশ কয়েকবার এই ধরনের সরকার দেশের ক্ষমতা নিয়েছে। কখনোবা গণঅভ্যথানে সরকার পতনের পর, কখনোবা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আস্থা না থাকায়। এইসব সরকারের মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে ক্ষমতা নেন ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন, যা এক-এগারোর সরকার নামে পরিচিত, এক বিপজ্জনক সরকার গড়ে তোলেন। 

সেই সরকার রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, দুই প্রধান দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রধানদের বাদেও আরো অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে এবং প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, সেই সরকার তাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলো আর আওয়ামী লীগ আতাত করায় তারা পরবর্তী নির্বাচনে বিপুল সংখ্য্যগরিষ্ঠতা পায়। 

বিএনপির এই অভিযোগ কতোটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ আছে, তবে এক-এগারো সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা দেশকে বিপদে ফেলেছিলো। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ দিতে গড়িমসি করা, রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি কারণে দেশে গুমোট অবস্থা তৈরী হয়েছিলো। গণতন্ত্র রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো।  সেই সরকারের বিরুদ্ধেও ছাত্রজনতা আন্দোলন করেছিলো। 

সম্প্রতি, স্বৈরাচার হাসিনার পতন নিশ্চিত করার পর আরো একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনবিরোধী স্বৈরাচারের পতনের পর দেশের মানুষ এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। আশা করছে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের। কিন্তু কিছুটা আশংকাও দেখা দিচ্ছে। 

সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ হলো। এই সময়েই তাদের নিয়ে আশংকা করাটা অপরিণত। তবে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোন রোডম্যাপ দিতে পারেননি। কতো দিনের মেয়াদে তারা ক্ষমতায় থাকবে, কবে নির্বাচন দেবে সেগুলোও উল্লেখ করেনি। ইউনুস তার ঘোষণায় বলেছেন, জনতা যদ্দিন চাইবে তদ্দিন তারা থাকবেন, কিন্তু এই চাওয়া কিভাবে বোঝা যাবে? এর জন্য কি গণভোটের আয়োজন হবে? সুশীল সমাজে জোর গলায় বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ তো বটেই, বিএনপিকেও ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। অথচ কে ক্ষমতায় আসবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার একমাত্র জনগণের। ভোটের মাধ্যেমে। 

এই নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানোর হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তার মতে, এ কাজগুলো করা হচ্ছে আবার এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ করে, বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা থেকে।

এক-এগারো সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনীতিকীকরণের। এমনকি ওই সময়ে আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল। এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না। এটা আমার গণতন্ত্রের জন্য, আমার রাজনীতির জন্য, আমার দেশের কল্যাণের জন্য, এ কথাগুলো আমার মনে রাখতে হবে। আবার ওই চেহারাগুলোই যদি সামনে দেখি, তখন তো যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়।’

অবশ্য ফখরুল তাড়াহুড়া করছেন না। অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। সেই যৌক্তিক সময়ের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জন্যই আলোচনা দরকার। যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। আমরা কী চাই, ওনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ–আলোচনা তো হতে হবে। সে জন্য বলেছি, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতি দ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।’

মির্জা ফখরুলের এই আশংকা মাথায় রাখা জরুরি। খুনি আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার জরুরি, দেশের সংস্কার দরকার, কিন্তু সবার আগে ফিরিয়ে আনতে হবে গণতন্ত্র।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন