Logo
Logo
×

অভিমত

ড্যাম বানানোর বিরুদ্ধে দাঁড়াবো কি আমরা এবার?

আলতাফ পারভেজ

আলতাফ পারভেজ

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম

ড্যাম বানানোর বিরুদ্ধে দাঁড়াবো কি আমরা এবার?

২০২৩ সালে সিকিমে ভেঙ্গে যাওয়া ড্যাম

বাংলাদেশ ও ত্রিপুরায় চলতি আগস্টের বন্যা দক্ষিণ এশিয়ায় ড্যামকেন্দ্রীক বিপদের দিকটা আবারও বেশ মোটাদাগে সামনে আনলো। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শেষে বন্যার পানি হয়তো আস্তে আস্তে নামবে—কিন্তু ড্যামের বিপদ বন্ধে এ অঞ্চলের মানুষ কার্যকর কিছু করতে পারবে কি না—সেটা নিশ্চয়ই এ সময়ের এক বড় প্রশ্ন হতে পারে।

ড্যাম থেকে সৃষ্ট বিগত সময়ের ক্ষয়ক্ষতির মানচিত্রের দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যারা ড্যামের সুবিধাভোগী তারা ড্যামে ক্ষতিগ্রস্ত নয়।   এক দল মানুষ ড্যাম থেকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আরেক দল দশকের পর দশক এ থেকে সৃষ্ট ঝুকিতে থাকছে, কখনও কখনও হঠাৎ করে তীব্র বিপদে পড়ে যাচ্ছে। আবার, প্রত্যেক অঞ্চল আলাদা-আলাদা হয়ে কেবল নিজের বিপদে সোচ্চার হয় বলে ড্যাম-বিরোধী জনমত বড় চেহারা নেয় না। 

বাংলাদেশ যখন ফারাক্কা নিয়ে সমস্যায় ভোগে তখন হয়তো পাঞ্চেত ড্যামে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের সর্বনাশের কথা এখানে প্রচারই পায়নি। ২০২৩-এর অক্টোবরে সিকিমে যখন চুংথাং ড্যাম ভেঙ্গে গেল, বড় ক্ষতি হলো কিন্তু তা বেশ দূরের উজানবাসীর। প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেল তাতে; যার একাংশ কোচবিহার-দার্জিলিংয়ের।

এটা শুনলে সচরাচর বিশ্বাসই হতে চায় না, কেবল গঙ্গা ও তার শাখা-প্রশাখা নিয়ে গড়ে ওঠা অববাহিকায় কয়েক’শয়ের বেশি ড্যাম ও ব্যারাজ বানানো হয়েছে। এর মাঝে বাংলার মানুষ ‘ফারাক্কা’র কথাই বেশি জানে এবং এক ফারাক্কা যে কীরকম বড় ক্ষতি করলো সেটা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। 

গঙ্গার উজানে চীনের ড্যামের কথাও পত্রপত্রিকায় দেখি আমরা। বিপুল সংখ্যায় ড্যাম আছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীতেও।  অবকাঠামো হিসেবে ড্যাম কেবল নদীপ্রবাহেরই সর্বনাশ করছে না; ভূমিকম্পপ্রবণ আসাম-বাংলা ভাটি-অঞ্চলকে চিরস্থায়ী এক বিপদের মুখেও রেখে দিয়েছে। এছাড়া এরকম অবকাঠামোর নীরব প্রতিক্রিয়া হিসেবে নদী-অববাহিকার নানান স্থানে নিরন্তর ভাঙ্গন চলছে। 

ফারাক্কা চালু হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গে পানি বিজ্ঞানী কপিল ভট্টাচার্য ক্ষয়ক্ষতির যেসব ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন তার সবই কমবেশি ফলেছে মালদার দিকে। অথচ কপিল সাহেবকে শুরুতে ‘পাকিস্তানের চর’ অপবাদ শুনতে হতো। পাকিস্তানও তখন কাপ্তাই-ড্যাম করার সময় বিরুদ্ধবাদীদের জেলে ফুরেছিল। যে কারণে আজকে ডম্বুর বাধের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত গোমতি অববাহিকার মানুষকে দেখে অন্যান্য ড্যাম-সন্নিহিত এলাকার মানুষের সতর্ক ও প্রতিবাদী হওয়া দরকার। 

ত্রিপুরায় তুলনামূলকভাবে ছোট এই ড্যামের দরজা খোলায় আশেপাশে কী হলো সেটা সবাই দেখলো। কল্পনা করলেও শিহরিত হতে হয় আন্তঃদেশীয় বড় বড় নদীগুলোর বড় বড় ড্যামগুলো ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়লে বা অন্য কোনো বিবেচনায় খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হলে, ভাটিতে কী ভয়াবহ সর্বনাশ হবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন