শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যেম ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার শেষ ‘বন্ধু’কে হারালো। যদিও হাসিনা আসলে যতোটা না বন্ধু এর চেয়ে বলা ভালো গোলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর অগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি ভারতকে এই অঞ্চলে সকলের শত্রু বানিয়েছে।
ভারত মূলত একটি ইউনিয়ন স্টেট। বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির মানুষ মিলে এই বিশাল দেশ। ভারতের কিছু রাজ্যর আকার ও জনসংখ্যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। ভারতের জিডিপি দক্ষিণ এশিয়ার বাকি ছয় দেশের সম্মিলিত জিডিপির কয়েকগুণ। সামরিক শক্তিও তাই। দেশটির কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং এই এলাকার একমাত্র সুপারপাওয়ার।
কূটনৈতিক দিক দিয়েও ভারত বেশ ভালো অবস্থানে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেবল অস্ত্র আমদানি নয়, রফতানিও করে। গত দশ বছরে ভারতের সামরিক রফতানি বেড়েছে ৩১ গুণ যার সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। আবার রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যর সাথেও ভারতের দহরম মহরম আছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সুবিধা নিয়ে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কিনেছে।
এতো কিছুর পরেও ভারতের সমস্যা দুইটি। চীন ও সীমান্ত। যদিও চীন ভারতের সাথে খুব বেশি আগ্রাসন দেখায়নি কখনোই, বরং ব্রিকের মতো জোটে একসাথেই আছে। কিন্তু, প্রতিবেশী এই দেশটার সাথে ভারতের সম্পর্ক সবসময়েই টানটান। দক্ষিণ এশিয়ার কর্তৃত্ব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানটান সম্পর্ক।
এর প্রভাব দেখা যায় পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং নেপালে। তিনটি দেশেই ভারতবিরোধিতার সুযোগে চীন বেশ ভালো অবস্থানে আছে। ছোট্ট ভুটানে পর্যন্ত চীনের প্রভাব বাড়ছে। মালদ্বীপে তো খোলাখুলি ভারতবিরোধিতার কারণেই ক্ষমতায় আসলেন মোহাম্মদ মইজ্জু।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত সবচেয়ে বেশি এবং এই দেশের জনঘনত্বও অনেক বেশি। এতোদিন হাসিনাকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখতে চাইলেও হাসিনার পতনের পর পাশার দান উলটে গেছে। বাংলাদেশ ভারতের শাসকদের মামদোবাজিতে যে বিরক্ত তা পরিস্কার।
শক্তিতে হয়তো ভারত সব প্রতিবেশীকে সামলাতে পারবে, তবে ভারতের একটা বড় সমস্যা, এর সীমান্তে বড় প্রাকৃতিক বাধা নেই। যদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো অবনতি হয় তবে হয়তো ভারত তাদের দমন করতে সক্ষম হবে ঠিকই, কিন্তু এর পালটা আঘাতে নিজ দেশেও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।
ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ও সেভেন সিস্টার্সের কিছু রাজ্যসহ ভারতের অনেক এলাকা স্বাধীনতাকামী। বৈরী প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় এসব অঞ্চলে আরো গন্ডগোল বাড়বে। মাওবাদীসহ অন্যন্য গোষ্ঠী আরো সক্রিয় হবে। দেশে ও প্রতিবেশী দেশে যুদ্ধ বাধলে ভারতের অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।
চীন তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রও এই সুবিধা নিতে পারে। ফলে, মোদী হিন্দুত্ববাদের জোশে যে উগ্র জাতীয়তবাদী জজবা তৈরি করছেন তা ভারতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। গত নির্বাচনে মোদীর আসন কিছুটা টলমল হয়েছে, এই কারণে হয়তো তিনি আরো আগ্রাসী হয়ে যুদ্ধ বাধাতে চাইবেন, কিন্তু তা হবে ভারত ও সেদেশের জনগণসহ গোটা অঞ্চলের মানুষের জন্য বিরাট বিপর্যয়।
ভারতের নিজের ভালোর জন্য, মানুষের ভালোর জন্য সংহত হতে হবে। প্রতিবেশীদের সাথে চিঁড় ধরা আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে শক্তি আর তাচ্ছিল্য প্রদর্শন বাদ দিয়ে।