পরীক্ষা বাতিল বা অটোপাসের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ
বাংলাদেশ হাসিনামুক্ত হলেও এখনও দেশের অবস্থা টালমাটাল। শত শত প্রাণের বিনিময়ে, স্বৈরাচারী হাসিনার অস্ত্রধারী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করার পর বাংলাদেশের মানুষ প্রিয় দেশকে মুক্ত করেছে কিন্তু অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগেই দেশ-বিদেশ থেকে আওয়ামী অপশক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ডাকাতের আক্রমণ, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনের ধোয়া তুলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। হাসিনারপুত্র জয় এমনকি ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
গত ১৫ বছরে প্রশাসনসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগ নিজেদের লোকজন বসিয়েছে। হাসিনা সরকারের পতন হলেও এদের সিংহভাগ রয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমে এসেছে, এরা নানারকম ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। বিচারক, পুলিশেরা ক্যু করার উদ্যাগ নিয়েছে।
অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। ডলারের রিজার্ভ স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের কমিশন বাণিজ্য ও লুটপাটের সুবিধার জন্য দেশের জন্য ক্ষতিকর এইরকম চুক্তিতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ঋণ নিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পদত্যাগের সময় শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে, যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান।
দেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে দেদার টাকা ছাপানোয় এখন মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশে পৌঁছেছে, আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ। এর উপরে বিপদ হয়েছে যে, এত দিন অনেক ক্ষেত্রে সুদসহ ঋণের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে শিথিল হলেও, সেগুলো ফেরত দেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ভঙ্গুর অর্থনীতির মধ্যেই সরকারকে এই বিপুল চাপ নিতে হবে।
কিন্তু, হাসিনামুক্ত হওয়ায় দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাও অনেক বেড়ে গেছে। অনেকেই নিজেদের বঞ্চিত ভেবে দ্রুত সব পাওনা আদায় করতে চাইছেন। কেউ কেউ আবার সুযোগের সদ্ব্যাবহার করছেন। এর প্রমাণ পাওয়া গেল এইচএসসি পরীক্ষা এবং মেট্রোরেল নিয়ে।
জুলাই আন্দোলনের আগেই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো। অনেকগুলো বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। কিন্তু, আন্দোলনের সময় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক পরীক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়, অনেকে প্রাণ হারায়, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়। এই আন্দোলনের ট্রমা ও শোক অনেকের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকবে। সেই বিচারে ওদের এই মুহূর্তেই পরীক্ষা দিতে বসতে বলা অন্যায়।
কিন্তু, এই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তিন মাস পরে হলেও পরীক্ষা নেয়া দরকার ছিলো। কারণ অটোপাস এদের ভবিষ্যৎকে বিপদগ্রস্ত করবে। যেই মেধার মূল্যায়নের কারণে আন্দোলনের শুরু তার ঠিক উল্টোটা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অটোপাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের কর্তব্য এড়িয়ে গেলেন, যা একটা বাজে ইঙ্গিত দেবে। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমাবে।
একই রকম ঘটনা আমরা দেখি মেট্রোরেলের বেলায়। বিপুল লুটপাট করে হাসিনা সরকার জনগণের অর্থে মেট্রোরেল নির্মাণ করেছিলো এবং তা জনগণের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু, আন্দোলনের সময় দুটি স্টেশন পুড়ে যাওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। হাসিনা দাবি করেছিলো, ৩৫০ কোটি টাকা ও এক বছর সময় লাগবে এই ক্ষতি সারাতে। তবে, হাসিনার আর বেশির ভাগ কথার মতোই এই দাবিও মিথ্যা। মেট্রো যেকোনো সময়েই আবার চালু করা যেতে পারে এবং হরেদরে ৫০ কোটি টাকা দিয়েই স্টেশন দুটি সারানো যাবে।
হাসিনা দুর্নীতি এবং লোকজনকে শাস্তি দেবার জন্য মিথ্যা বলেছিলো। কিন্তু, মেট্রো চালু হয় নাই। কিছু কর্মকর্তা এ সুযোগে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করছে। সরকারও বিপদে পড়ে তাদের দাবি মানতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অটোপাস আর মেট্রোর মতো অন্যন্য সেক্টরেও দাবিদাওয়া বেড়ে চলেছে। সরকার যদি নতজানু হয়ে সেইসব দাবি বাছবিছার ছাড়া মানতে শুরু করে, দেশের সংকট গভীরতর হবে।