শেখ হাসিনার পলায়ন এবং আওয়ামী স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তির পর বাংলাদেশের সামনে অনেক পুনর্গঠনের একটা হচ্ছে, ভারতের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে অগ্রসর হওয়া। গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলো। আওয়ামী-উত্তর বাংলাদেশে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন উভয় দেশের জন্যই জরুরি।
বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অনেকগুণে বড়। তবে, সেদেশটি মূলত একটি ইউনিয়ন স্টেটের মতো, যেখানে বহুভাষাভাষী জাতি বসবাস করে। একটি রাজ্যর সাথে অন্য রাজ্যর মানুষের বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। অনেক সময়েই কোনো কোনো রাজ্য বা জাতি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। যে কারণে ভারত সবসময়েই নিজের অস্তিত্বের ব্যাপারে আশংকায় থাকে। বাংলাদেশের সীমান্তের পাশেই থাকা সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সে বহুদিন ধরেই স্বাধীনতার আন্দোলন চলছে। ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে সেসব রাজ্যে মূলত বাংলাদেশের উপর দিয়েই যেতে হয় বলে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে দেশটির উদ্বেগ আরো বেশি।
তবে, বছরের পর বছর পাপেট সরকার বসিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে তা আওয়ামী আমলেই বোঝা গেছে। মানুষের সমস্ত রকম অধিকার বন্ধ করে দেয়ার পরও আওয়ামী সরকারের শেষ আশ্রয় ছিলো ভারত সরকার। ফলে, বাংলাদেশর মানুষের ভারতবিদ্বেষ বেড়েছে। এই বিদ্বেষের ফলে ভারতের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীদের প্রতিও এদেশের মানুষের সহানূভূতি বাড়ার কথা। ব্যাপারটা ভারতের জন্য আশংকাজনক।
তথাপি, ভারত এখনো আওয়ামী লীগকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, কোন আইনে বা কত দিন এই খুনি সেদেশের আশ্রয়ে থাকবে তাও পরিস্কার করছে না। অন্যদিকে, সে দেশের মিডিয়াগুলো হাসিনাপতনের পরের অরাজকতাকে হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালাতে চাইছে। গোদী মিডিয়া বলে পরিচিত, নরেন্দ্র মোদীর পোষা মিডিয়া সমানে মিথ্যাচার করছে।
মনে রাখা জরুরি যে, ভারত সরকার ও ভারতের জনতা আলাদা ব্যাপার। যেমনটা হাসিনা সরকার ও আমরা ছিলাম। সে কারণে ভারত সরকারের কারণে ভারতের জনতার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ভুল হবে। ভারতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকলেও সেই সরকারের মূল অস্ত্র ও নীতি হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ। কিন্তু, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মোদী আর তার হিন্দুত্ববাদের শক্তিতে ভাটা পড়েছে। সেদেশের মানুষ পরিবর্তন চাইছে।
তাই হাসিনার বিরুদ্ধে যখন বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করছিলো তখন কলকাতাসহ ভারতের বেশ কিছু জায়গায় সেই আন্দোলনের পক্ষে সংহতি দেখা গেছে। হাসিনাশাহী ইন্টারনেট বন্ধ করার পর ভারতীয় বন্ধুরা আমাদের আন্দোলনের খবর বহির্বিশ্বে প্রচার করেছে। শুধু তাই না, আমাদের আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যাণার্জির বিরুদ্ধেও লোকজন মাঠে নেমেছে। আর, কেবল ভারত নয়, পাকিস্তানেও এই উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে।
ফলে, আমাদের জন্য সুযোগ, সামনের দিনে এই অঞ্চলের মানুষদের, যারা গণতন্ত্র ও অধিকারের সংগ্রামে লড়াই করছেন, তাদের সঙ্গে এক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। মোদী-হাসিনা মার্কা প্রভু আর গোলামের সম্পর্ক উপড়ে ফেলে সার্কের চেতনায় আঞ্চলিক জনগণের মোর্চা তৈরি করা।