প্রসঙ্গ আয়নাঘর
আমরা কি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি
সোনালী আক্তার
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
আয়নাঘর
দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে সর্বাধিক আলোচিত চার-পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে আয়নাঘর একটি। আয়নাঘর নিয়ে কেউ কলাম লিখছেন, কেউ সিনেমা, কেউ টকশো, কেউ মানববন্ধন আরও কত কি। বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, কেউ কেউ টিভি, সংবাদপত্র, অনলাইন বিভিন্ন প্লাটফর্মে এসে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন। আমরা শুনছি, কষ্ট পাচ্ছি, ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।
কিন্তু যেটি দরকার সেই কাজটি কেউ করছেন না, তা হলো মামলা। কেউ মামলা করছেন না। নিখোঁজ হওয়ার পর বেশিরভাগ পরিবার জিডি করলেও কেউ মামলা করেছে বলে শুনিনি। প্রশ্ন উঠতে পারে, মামলা করার পরিবেশ ছিল কিনা? উত্তর খুব সহজ, না ছিল না। কিন্তু আজ তো আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। প্রশ্ন উঠবে মামলা কার বিরুদ্ধে, সেই উত্তরও আছে।
কর্নেল হাসিন মামলা করবেন আয়নাঘরের বিষয়ে আর অন্যরা আয়নাঘর উল্লেখ না করলেও তাদের সাথে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে। সাদা মাইক্রোবাসে ধরে নিয়ে যাওয়ার কায়দা-কৌশল, চোখ বেঁধে অত্যাচার-নির্যাতন, ছোট্ট অন্ধকার ঘরে বন্দি, তিন বেলা একই ধরনের খাবার, তারপর কোনো একদিন ৭০ পিস ইয়াবা দিয়ে মামলা অথবা চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে ফেলে দেওয়া, সব তো একই বর্ণনা।
আমি মায়ের ডাক ও ভুক্তভোগীদের অনুরোধ করতে চাই আপনারা মামলা করুন। মামলা করতে, দেশের যে সব বড় বড় আইনি প্রতিষ্ঠান মানুষকে আইনি সহায়তা দেয়, তাদের অনুরোধ করবো আপনারা মায়ের ডাক-এর সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি মামলায় আইনি সহযোগিতা করুন। এমন ১০০, ২০০, ১০০০টি মামলা হোক। প্রথমে মামলা, তারপর বিচার নিশ্চিতে চাপ প্রয়োজন। এখন যা হচ্ছে, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো অর্থাৎ চাপ তৈরি করছি মামলা ছাড়া।
মাফ করবেন, আমি কখনোই সিনেমা, টকশো অথবা মানববন্ধনের বিপক্ষে নই। জনমত তৈরিতে এগুলোর গুরুত্ব্য অপরিসীম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা এই কাজগুলো করছেন, তাদের এই কষ্টকে স্বাগত জানাবো না এমন অকৃতজ্ঞ আমি নই। এই দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে দায়ীদের শাস্তি প্রয়োজন। শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রথমে মামলা তারপর দেশে বিদেশে চাপ তৈরি আবশ্যক।
আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবর্তিত বাংলাদেশে দলকানা বিচার ব্যবস্থা আর চলবে না। প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল সব পদই পরিবর্তন হয়েছে। আইন উপদেষ্টা নিজে এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ১৬ জন উপদেষ্টার অন্তত একজন তার স্বামীকে নিয়ে এমন নির্যাতনের শিকার। তাই অন্তর্বর্তী সরকারই মামলা করার শ্রেষ্ঠ সময়।