Logo
Logo
×

অভিমত

মোদি কেন গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে এখনও আশ্রয় দিচ্ছেন?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম

মোদি কেন গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে এখনও আশ্রয় দিচ্ছেন?

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

খুনী হাসিনার পতন হলো। দীর্ঘ ১৫ বছর চরম স্বৈরশাসনের পর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস, সাইকোপ্যাথ শাসক ও শাসনামলের অবসান হলো। বাংলাদেশের মানুষের আবার মুক্তি অর্জিত হলো এক গণহত্যায়, রক্তনদীর বিনিময়ে। গণআন্দোলনের মুখে লেজ গুটিয়ে পালালো শেখ হাসিনা। 

তবে, হাসিনা এতো দ্রুত পালাবে তা সম্ভবত কেউই চিন্তা করতে পারেনি। কারণ দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ ও ধ্বংস করে ক্ষমতায় টিকে থাকা হাসিনার সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিলো ভারত। সেই প্রথম থেকে দেশটি হাসিনাকে সুরক্ষা দিয়ে আসছিলো। এই বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে হাসিনাশাহী যখন দেশবিদেশের প্রবল চাপে ছিলো তখন প্রকাশ্যে তাকে সুরক্ষা দেয় ভারতের মোদি সরকার। 

এরপর কিছুদিন চীনের দিকে হাসিনার হেলে পড়া নিয়ে একটা আশংকা তৈরি হয় ভারতের তরফে। অন্যদিকে নিজের দেশে টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হলেও প্রথমবারের মতো মোদির বিজেপি এককভাবে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়। মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হন ঠিকই , তবে তা জোট সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে। ফলে, আগের মতো নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যেমন হারায় বিজেপি, তেমনি প্রশ্নের মুখে পড়ে তাদের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ। হাজার কোটি টাকা দিয়ে রামমন্দির নির্মাণ করলেও মোদির শক্ত ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশেই তার দল নির্বাচনে খারাপ করে। ফলে মোদি ম্যাজিক বা হিন্দুত্ববাদ দিয়ে এরপরে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যাবে কিনা সন্দেহ দেখা দেয়। 

হাসিনা অবশ্য চীনের কাছেও প্রত্যাখ্যাত হয়। চতুর চীন বুঝতে পারে হাসিনা অনেকটাই বিপদে। দেশের অর্থনীতির হাল খারাপ, দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। এদিকে বছরের পর বছর সব বিদেশি শক্তিকে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। দেওয়ার মতোও তেমন কিছু বাকি নেই। 

হাসিনা যখন ভারত আর চীন উভয় তরফ থেকেই কিছুটা তাচ্ছিল্য পাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের মানুষ গণআন্দোলনে নামে। প্রথমে ছাত্রদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন হলেও হাসিনার স্বভাবসুলভ জেদ ও খুনে দাম্ভিকতা একে গণআন্দোলনে পরিণত করে। দীর্ঘকাল ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে থাকতে হাসিনার দম্ভ এমন এক জায়গায় পৌঁছেছিলো যে, তার ভাবনা ছিলো লাখো মানুষকে হত্যা করে হলেও সে ক্ষমতার মসনদ রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু আগস্টের ৫ তারিখ হাসিনা দেখলেন সব পথ বন্ধ। নিজের দলের হাজার হাজার কর্মী আর সুবিধাভোগীদের ফেলে দেশ ছেড়ে পালালেন তিনি। এইরকম অকস্মাৎ ক্ষমতা বদলে দেশে নৈরাজ্য নেমে আসে। দীর্ঘদিন অত্যাচারের শিকার জনতা তীব্র আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উপর। খুনে যন্ত্র বানানো পুলিশের উপর। দেশের প্রায় সমস্ত থানা লুট করা হয়, তাণ্ডব চালানো হয়। সন্দেহাতীতভাবে অনেকে এই সুযোগ নেয়। 

অন্যদিকে, হুট করে শেখ হাসিনা ভারত গিয়ে হাজির হওয়ায় দেশটি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাসিনাকে ব্রিটেন পরিষ্কারভাবে বলে দেয় সেই দেশে তার জায়গা হবে না। কিছুটা বাধ্য হয়েই ভারত তাকে আশ্রয় দেয়। 

এদিকে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে চারদিন লেগে যায়। কোনরকম আইনশৃঙ্খলা না থাকায় দেশের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আওয়ামী লীগের পান্ডারা লুটপাট ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশ অচল করতে চায়। সমর্থকরাও বলতে থাকে, নতুন স্বাধীনতার চেয়ে আগেই ভালো ছিলো। কিন্তু, এই সুযোগটা সবচেয়ে ভালো দেখতে পায় ভারত। হাসিনাকে নিয়ে আবার রাজনীতি করার। ভারত জানে, ক্ষমতার জন্য হাসিনা দেশকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না। 

ফলে, হাজির হয় সাম্প্রদায়িক কার্ড। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের হিন্দুদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। অনেকে আওয়ামী লুটপাটের অংশও হয়। ফলে, হাসিনা যাবার পর নৈরাজ্যে তাদের উপরও জনতা ক্ষোভ দেখায়। কিন্তু, এদের আওয়ামী পরিচয় ভুলে ভারত শুধু হিন্দু পরিচয় তুলে ধরে এবং এদের অতীত না দেখিয়ে ভিক্টিম হিসেবে দেখায়। ভারতের গোদি মিডিয়া এই নিয়ে প্রোপাগাণ্ডা চালায়। হাসিনাকে দেশত্যাগের বদলে উলটো পুনর্বাসনের চেষ্টা দেখা যায়।

ভারতের আশপাশে প্রতিটি প্রতিবেশী দেশটির উপর খেপা। পাকিস্তান আর চীন তো আছেই, হিন্দু দেশ নেপাল, পুঁচকে মালদ্বীপ পর্যন্ত ভারতকে বর্জন করেছে। কেবল বাংলাদেশই ছিলো ভারতের হাতে। হাসিনার পতনে তাও গেলো। উপরন্তু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হন ডক্টর ইউনুস, যার সঙ্গে পশ্চিমের বেশ সখ্যতা। আর তিনি ক্ষমতা নেওয়ার আগেই ভারতকে মনে করিয়ে দেন যে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা বাংলাদেশের সীমান্তের পাশে থাকা সাত রাজ্যও বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। 

ফলে, মোদি সরকার নড়েচড়ে বসে। উপরন্তু, তারা দেখে যে, বাংলাদেশে হিন্দুরা ‘খাতরে মে হ্যায়’ বললে নিজের দেশে হিন্দুত্ববাদের পালে হাওয়া লাগবে। ভোটের রাজনীতিতে আবার একে কাজে লাগানো যাবে। মোদি কেবল এই ইস্যুই জারি রাখবে তাই না, সে নানা অজুহাতে বাংলাদেশ আক্রমণও করে ফেলতে চাইবে। আর কে না জানে, যুদ্ধ বাধালে শাসকের সবদিক দিয়েই লাভ। 

আর তাই, মোদির সরকার হাসিনাকে পাকাপাকিভাবে আশ্রয় দিবে বলেই মনে হচ্ছে। নিজেরা গণতন্ত্রের বড়াই করলেও একজন গণহত্যাকারীকে প্রশ্রয় ও আশ্রয় দিয়ে প্রতিবেশী দেশে আগুন লাগানোর চেষ্টা করবে। অবশ্য, মোদি নিজেই একজন কসাই। গুজরাটে হাজারো মুসলমান হত্যা করার খলনায়ক। দুই গণহত্যাকারী মিলে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়ে আরো হত্যার নীল নকশা আটবে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন