Logo
Logo
×

অভিমত

ডাকাত সাম্প্রদায়িকতার পরিকল্পিত চেষ্টা গুজব, নাটক ও পল্টিবাজি

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

ডাকাত সাম্প্রদায়িকতার পরিকল্পিত চেষ্টা গুজব, নাটক ও পল্টিবাজি

ডাকাত ঠেকাতে সবাই মিলেমিশে রাতে পাহারা দিচ্ছে

নানা-নাতি নাটকের মতন যারা ডাকাত নাটকের জন্ম দিয়েছিলেন, তাদের জন্য খারাপ খবর। মানুষ বলছে, ‘সারাদিনের বাসি থালাবাসন রেখে দিয়েছি, ডাকাত আসলে তাদের দিয়ে মাজিয়ে নেব’। বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে সম্মিলিত মানুষ। নাটক যে পরিকল্পিত ছিল, তা ডাকাতির ধরণ দেখেই বোঝা যায়। শেষ পর্যন্ত ডাকাতিকেও জোক বানিয়ে ফেলেছে পাবলিক। 

ডাকাতিকে উপলক্ষ করে একধরনের উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে পাড়া-মহল্লায়। সবাই মিলেমিশে রাতে পাহারা দিচ্ছে। যে ছেলেটি পাড়ার মানুষজনকে চিনতো না, সারাদিন থাকতো বাসার ভেতরে। সে ছেলেটিও এখন ডাকাত রুখতে রাতভর মানুষের সাথে এলাকা পাহারায়। মোড়ে মোড়ে খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। একসাথে সারা পাড়ার মানুষ বসে খাচ্ছে। বিপদকে উপেক্ষা করে মানুষ তাকে পরিণত করেছে উৎসবে। স্বৈরশাসক এমন বাংলায় কী করে টেকে। কোনোভাবেই টিকতে পারে না, পারা সম্ভব নয়। 

আর গুজবের কথা না বললাম। গুজব মেশিন পতনের পরও চালু ছিল এবং আছে। তারা ডাকাতির গুজবসহ না-না গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ গুজব ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে। গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টির একটা কুৎসিত প্রচেষ্টা ছিল এটা। বহুল চর্চিত পুরানো কৌশল তাদের। 

বাংলাদেশের মানুষ এটা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। চিপায় পড়লেই তাদের ঢাল হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে ঢাল বানিয়ে দীর্ঘদিন ফায়দা লুটেছে তারা। এবার সেই কাহিনিকে আর খায়নি পাবলিক। মানুষ আগেই বুঝে গিয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার কার্ডটি খেলবেই স্বৈরাচার। 

সুতরাং এটাও নাটকে পরিণত করেছে সম্মিলিত জনতা। তারা ডাকাতকে যেমন সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করেছে, তেমনি সম্মিলিত ভাবে দাঙ্গার সৃষ্টির প্রয়াসকেও রুখে দিয়েছে। যারা গুজববাজ ছিল তারা অবশ্য হতাশ হননি। এই গুজববাজদের সাথে যোগ হয়েছে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম। পুরানো দিনের রবি ঠাকুরের মূর্তি ভাঙার ছবি। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ের ভিডিওকে এসময়ের দাঙ্গা বলে চালানোর প্রয়াস চালিয়েছে তারা। 

মুশকিল হলো এসব দাঙ্গার নাটক ভারতের শাসকগোষ্ঠীর জন্য সান্ত্বনার প্রয়াস হলেও সারাবিশ্বের কাছে তা খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। বরং তারা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে কীভাবে রুখে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মিলে পাহারা দিচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির থেকে তাদের বাসাবাড়ি। সম্মিলিত মানুষের সমুখে যে কোনো চক্রান্তই টিকতে পারে না তার প্রমাণ রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের রাজনৈতিক দল এবং মানুষেরও অনেক কিছু শেখার রয়েছে। শেখার রয়েছে কীভাবে একটি রেজিমের বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে লড়তে হয়। কীভাবে মাইনরিটিকে রক্ষা করতে হয় বুক আগলে। কীভাবে সকল চক্রান্তকে রীতিমতো কৌতুকের বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে হয়। এসব শেখা উচিত ভারত এবং ভারতের মানুষকে। তারাও নির্যাতিত। 

আশার কথা, বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে ধরে নিয়েছে ভারতের বিরোধী রাজনীতিকরা। ইতোমধ্যেই প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেস এবং তাদের ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, ভারতেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। শ্রীলঙ্কা দিয়ে উদাহরণের শুরু, বাংলাদেশে তার আপডেট ভার্সন দেখলো বিশ্ব। জানি না, ভারত বা অন্য কোনো দেশে হয়তো আরও একটি আপডেট ভার্সন দেখা যাবে কিনা। হয়তো যাবে। অবিচার যখন চূড়ান্ত হয় তখন হয়তো প্রকৃতিই প্রতিশোধ নিতে সক্রিয় হয়। ধর্মের কল বলে যাকে।

গুজববাজ এবং পল্টিবাজি 

তসলিমা নাসরিন ও তার দোসরদের কথা বলি। যারা ভারতের বিজেপির রাজনীতিকে ভালো বলেন এবং বাংলাদেশের আলেম সমাজের পিণ্ডি চটকান। তসলিমারা তাদের পুরানো চরিত্রে ফিরতে শুরু করেছেন। গুজব ছড়াতে শুরু করেছেন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে। এটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। সাথে রয়েছে প্রচার পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সেই প্রচার পাবার জন্যই বিপ্লবের রূপকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে কিছু কথা বলেছেন হয়তো তারা। সেটা ছিল তাদের মুখোশ। এবার ক্রমশই তারা মুখোশ ছেড়ে বাইরে। হাজার প্রাণের বিনিময়ে যে বিপ্লব, সেই বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনি মাঠে নেমেছেন। হাতিয়ার সেই বহু ব্যবহৃত সাম্প্রদায়িকতার বয়ান। যা মূলত ভারতীয় প্রোগাগান্ডিস্টদের বয়ান। 

জ.ই মামুনের চাটুকারিতা বিষয়ক ভিডিও ফুটেজ ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। মারাত্মক ট্রল হচ্ছে। পল্টিবাজির একটা মাত্রা থাকে, এদের পল্টিবাজী মাত্রাহীন। ভোল পাল্টাচ্ছে অনেক মানুষই, সাংবাদিকদের অনেকেই সে দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তাদের পল্টিবাজির জায়গাও তৈরি করে দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

সাংবাদিকতার মানে হলো অ্যাস্টাব্লিশমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু গত দেড় দশকের সাংবাদিকতা সেই মানেটাকে ভুলে তোষামোদিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিল। অনেকেই বলছেন, সাংবাদিকদের প্রভু বদল হতে চলছে মাত্র, চরিত্র না। এরা মানসিকভাবে দাসই রয়ে গেছে। ড. ইউনূস কতটা প্রচার চান তা তার কথাতেই বোঝা যায়। তিনি হেন, তিনি তেন এসব কথা কোথায় উল্লেখ করেননি তিনি। এ থেকেই বোঝা যাওয়ার কথা চাটুকারিতার দিন শেষ হয়ে আসছে। 

ড. ইউনূস মানুষ, তারও ভুল থাকতে পারে। সেই ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় সাংবাদিকতার কাজ। এই কাজটা যদি স্বৈরাচারী হাসিনার রেজিমে সাংবাদিকেরা করতো, তাহলে এত মানুষকে হয়তো জীবন দিতে হতো না। এত মানুষকে নির্যাতন ভোগ করতে হতো না। কদিন আগেই কয়েকজনকে দেখেছি বলতে, হাসিনার জন্য তারা সব করতে পারে। অর্থাৎ মানুষের গুলিবিদ্ধ দেহ তাদের অনুভূতিকে কোনো ভাবেই নাড়া দেয় না, যা দেয় ভাস্কর্য ভাঙলে। আজব না, জীবিত মানুষের জন্য তাদের মায়া নেই, আছে কংক্রিটের ভাস্কর্য এর জন্য। এখন এরাই আবার হয়তো নতুন রূপে ফিরবে। আবার তারা তোষামোদির অস্ত্রে ঘায়েল করতে চাইবে নতুন সরকারকে, অ্যাস্টাব্লিশমেন্টকে। 

ফুটনোট: ডাকাত ধরেছে পাবলিক। ডাকাতকে বলা হচ্ছে আব্বা ডাকতে। ডাকাত বলছে, কারে আব্বা ডাকুম। পাবলিক বলছে সবাইকে। ভিডিওটা দেখে না হেসে থাকতে পারিনি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন