Logo
Logo
×

অভিমত

বিপ্লবীদের সতর্ক থাকতে হবে প্রতিবিপ্লব থেকে, এই বিপ্লব যেন ব্যর্থ না হয়

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:০৯ পিএম

বিপ্লবীদের সতর্ক থাকতে হবে প্রতিবিপ্লব থেকে, এই বিপ্লব যেন ব্যর্থ না হয়

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটা বিপ্লবের পরেই শুরু হয় প্রতিবিপ্লব। সেই প্রতিবিপ্লবকে ব্যর্থ করতে হতে হয় কৌশলী। আজকে আমাদের জেনারেশন জেড এর তরুণরা যে বিপ্লব এনে দিলেন, তাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। যেতে হবে অনেকদূর। দীর্ঘ ১৬ বছরের জঞ্জাল জমে জমে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। পরাজিতরা জানে সে কথা। তারা জানে, অর্থনীতির কী হাল। তারা জানে, দেশের কোন কোন জায়গায় তাদের লোক বসানো আছে। বলতে গেলে প্রতিটা কী পয়েন্টে এখনো তাদের লোক। তারা চেষ্টা করবে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর এবং এটাই স্বাভাবিক। এছাড়াও তাদের পেছনে রয়েছে বড় একটা শক্তি। যাদের মদদে এত বছর নির্বাচনহীন, জনতার রায়হীন হয়েও ক্ষমতায় টিকে ছিলো তারা। সুতরাং তাদের দ্বারা প্রতিবিপ্লব ঘটানো অসম্ভব কিছু না। 

৫ আগস্ট বিপ্লবের আগের রাত থেকেই প্রতিবিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি করার পরিকল্পনা হয়েছে। বলা হয়েছে বাংলাদেশ আক্রান্ত। সাথে আগাম বলা হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার কথা। অর্থাৎ পাগলকে সাঁকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দেয়া আর কী। তার নমুনা আমরা বিপ্লব শেষ হতে না হতেই দেখতে পাচ্ছি। চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার জন্য। কিন্তু ওই যে বললাম, আমরা পোড় খাওয়া মানুষ। বুঝতে পারি কী হতে যাচ্ছে। যার ফলেই জেনারেশন জেড তো বটেই মাদরাসার শিক্ষার্থী থেকে সাধারণ মানুষ এমনকি দেশের বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিসহ অন্যান্যরাও হিন্দু সম্প্রদায়ের জান-মাল, মন্দির সাথে সাধারণ মানুষের জান-মালের রক্ষায় নেমে পড়েছে। আর এটাই আশার কথা। আমাদের এবারের বিপ্লবও বিপথে যাবে না বলেই ধারণা করছি। কারণ, এখন আর গুজব ছড়িয়ে কাজ হয় না। মানুষ ফ্যাক্টচেক করতে শিখে গিয়েছে। অনেকে বলেন, ফেসবুক গুজবের জায়গা। আমি বলি সামাজিকমাধ্যম একই সাথে গুজব প্রতিরোধেরও জায়গা। ৩ আগস্ট রাতে ফেসবুক ভরে গেলো গুজবে। সাথে সাথে মানুষ সক্রিয় হয়ে উঠলো সেই গুজবকে মিথ্যে প্রমাণে। ফেসবুকই প্রমাণ করে দিলো গুজব মিথ্যা। আজকে বিপ্লব পরবর্তী রাতে আমি লিখছি। তখনো সামাজিকমাধ্যমে নানা গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। জানি, এসব গুজবও মিথ্যে করে দেবে সেই ফেসবুকই। 

গুজবের কথা থাক, গজবের কথায় আসি। আমাদের দেশটাকে ফতুর করে দিয়ে গেছে স্বৈরশাসক ও তার দোসররা। রিজার্ভ খালি, ব্যাংকে তারল্য সংকট। তারমধ্যে নিজেদের উন্নয়নের কারিগর প্রমাণ করতে মেগা প্রজেক্টের নামে বিদেশ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় পরিশোধ অযোগ্য ঋণ। শুধু বিদেশ থেকেই নয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও নেয়া হয়েছে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে টাকা। আর ফ্রডেরা তো ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে পুরোপুরি রুগ্ন করে দিয়ে গেছে। এই ব্যাংক সবল করতে নতুন সরকারকে ভয়াবহ একটা স্ট্রাগলের মুখোমুখি হতে হবে। সাথে মুখোমুখি হতে হবে কিছু অসম চুক্তির, যা করা হয়েছে ভারত ও চীনের সাথে। মুখোমুখি হতে হবে বিশাল বাণিজ্যিক বৈষম্যের। মুখোমুখি হতে হবে ধ্বংসপ্রায় পোশাকশিল্পের সাথে। সোজা কথা আমাদের আয়ের জায়গাগুলো প্রায় বন্ধ করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার। আর আমাদের মাথার উপর রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা চাপিয়ে প্রচার করেছে উন্নয়ন বলে। এক উৎসবের আতশবাজি কিনতেই ৩শ কোটি টাকা খরচ করেছে তারা। নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা মানুষকে শোনাতে সরকারি মাধ্যম ব্যবহার করে শতশত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। যে টাকা আমাদের টাকা, আমাদের ট্যাক্সের টাকা। আমাদের ঘামের টাকা, রক্তের টাকা। আর পুষেছে কিছু অথর্ব চাটুকার এবং তাও আমাদেরই টাকায়। 

নিজেদের গণমাধ্যমের কথা যদি বলি, তাহলে গণমাধ্যমকে শেষ করে দিয়ে গেছে তারা। এখন গণমাধ্যম ভর্তি সব চাটুকার। আর যারা সত্যিকার অর্থেই গণমাধ্যমের মানুষ, তাদের মুখ বুজে সইতে হয়েছে অপমান, কাজ করতে চাইলে হতে হয়েছে অপদস্ত। আমার নিজেরই একটা ভালো জায়গায় কাজ করার কথা ছিলো, কিন্তু হয়নি এমনি এক চাটুকারের জন্য। বলা হয়েছে আমি সরকারের বিপক্ষে লিখি। আমার মামা বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। যেখানে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় এবং তারচেয়ে বেশি হয়ে ওঠে নিঃশর্ত আনুগত্য সেখানে আর যাই হোক মেধাবীদের জায়গা থাকে না। যার ফলেই আজকের মেধাবী তরুণরা স্লোগান তুলেছিলেন ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ এই বলে। সাঈদ, মুগ্ধরা জীবন দিয়েছেন এ কারণেই। বিপ্লবের দিন পর্যন্ত এই তরুণদের আত্মদানের সংখ্যা অগণিত। যা বলা হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি। চব্বিশ এর এই শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। বলে শেষ করা যাবে না জেনারেশন জেড এর কাছ থেকে প্রাপ্তির কথা। 

কিন্তু এই প্রাপ্তিও ব্যর্থ হতে পারে। প্রতিবিপ্লবের কথা আগেই বলেছি, সাথে বলছি ভুল সিদ্ধান্তের বিষয়ে। জানি একটি বিপ্লবের পর, দ্রুত কাজ করতে গিয়ে কিছুটা ভুল হতেই পারে। কিন্তু সেই ভুল যদি ধরে রাখার জেদ করা হয়, তাহলে বিপ্লব ব্যর্থ হতে বাধ্য। ভাবতে হবে এই বিপ্লব আমাদের কী শেখালো। আমরা কী দেখতে পেলাম এই বিপ্লবকালীন সময়ে। দেখতে পেলাম শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে এক হয়ে গেছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও। তাদের সাথে এক হয়ে গেছেন শিল্পী, লেখক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, রাজনীতিক এবং শিক্ষকগণ। এই যে সব স্রোতের মিলন এটাই আগামীর বাংলাদেশের মডেল। এই মডেলের বাইরে কিছু করতে গেলে, বিভাজন সৃষ্টি করতে গেলে সব প্রাপ্তি নস্যাৎ হয়ে যাবে। প্রতিবিপ্লবীরা সে সুযোগে আবার ফিরে আসবে আরো বেশি ফ্যাসিস্ট হিসেবে। 

ফুটনোটে আরেকটি কথা বলে যাই। আমার কথা নয়, আমার পিতার কথা। তিনি সবসময় বলতেন, ‘অতিবিপ্লবী মানেই প্রতিবিপ্লবী’। এ কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন