বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতার মধ্যে রবিবার হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হলো, প্রতিবাদী জনতার ওপর পুলিশের সরাসরি গুলি করায় কোনো নিষেধ নেই। হাইকোর্ট হচ্ছে দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার অভিভাবক, অথচ সেই কিনা দেশের মানুষকে হত্যা করার লাইসেন্স দিলো। গণহত্যাকারী হাসিনার সুদীর্ঘ ক্ষমতা সম্বন্ধে যাদের ধারণা আছে তারা অবশ্য জানেন, এই দেশের আর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের মতো উচ্চ আদালতও ধ্বংস হয়ে গেছে। কেবলমাত্র হাসিনাশাহীর অসীম ক্ষমতা আর তার পোষ্যদের অবাধ লুটপাট করতে দেয়াই প্রতিষ্ঠানের কাজ হয়ে গেছে।
একের পর পাতানো নির্বাচন আর দেশ ধ্বংসের পরও জনতা অনেকটাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর স্বৈরাচারের শাসন সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছিলো, কিন্তু ইতিহাসে যেমন দেখা গেছে যে পুঞ্জীভূত বারুদ কোন একসময় সামান্য ঝলকেই বিস্ফোরণ হয়, তাই ঘটলো কোটা সংস্কার আন্দোলনে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষ গুলিতে ছিন্নভিন্ন হওয়া ভাইবোনদের লাশ দেখে সিদ্ধান্ত নিলো, অনেক হয়েছে! আর না! এবার এসপার না হয় ওসপার! এভাবে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে লড়াই করে মরবো।
ফলে, হাসিনার অস্ত্রধারী পুলিশ আর গুন্ডা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে খালি হাতেই ছাত্রদের সঙ্গে প্রতিরোধে নামলো জনতা। অবধারিতভাবেই লাশের স্তূপ বাড়লো। কারফিউ আর সেনাবাহিনী দিয়ে দিন কয়েক পরিবেশ শান্ত করতে পারলেও, আন্দোলনকারীসহ দেশবাসী বুঝে যায় যে, এই লড়াই থামালে মৃত্যু আর ধ্বংস অবধারিত। দানবের হাত থেকে রক্ষা পেতে, দেশকে বাঁচাতে, এই অসম যুদ্ধে নামতেই হবে। আর ফেরার পথ নেই।
তাই, ছাত্রদের ডাকা সমাবেশ, যা জনসমুদ্রে পরিণত হয়, সেখান থেকে ঘোষণা এলো এক দফার। এই জালিম সরকারের পদত্যাগ। নিপীড়িত, মরিয়া মানুষের আওয়াজে ভীত হলো হাসিনার পোষ্যরা। কুকুর যেভাবে ভয় পেলে ঘেউ ঘেউ বাড়িয়ে দেয়, নিজেকে অনেক বড় করে দেখায়, তেমনি ফাঁকা হুংকার ছাড়তে লাগলো অনলাইন জুড়ে। শনিবার রাতের পর থেকেই। রবিবার কোর্টের আদেশে বোঝা গেলো হাসিনা গদি বাঁচাতে গণহত্যা করতে চান।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের গুন্ডারা গণহত্যার জোশে ঝাঁপিয়ে পড়লো পুলিশ নিয়ে। কিন্তু, ইতিহাস সাক্ষী, মরিয়া জনস্রোতকে ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই। রবিবার শতাধিক লাশের উপর দাঁড়িয়ে বেশিরভাগ জায়গাতেই জনতার বিজয় এলো। লেজ গুটিয়ে পালালো পুংগবের দল।
কিছু কিছু জায়গায় ক্রোধান্বিত জনতার রোশে নির্মমভাবে মরলো পোষ্যরা। জনতা বুঝিয়ে দিলো, তারা মরে যাবে কিন্তু প্রতিরোধ ছাড়বে না। অস্তিত্বের লড়াইয়ে যারা নামে জয় তাদেরই হয়।
তবে, হায়েনার দল মরণ কামড় দিতে ছাড়বে না। খুনি, উন্মাদ হাসিনা সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করবে। আর তাই জনতাকে আরো বেশি সুসংগঠিত হতে হবে। প্রতিটি মানুষকে নেমে আসতে হবে এই যুদ্ধে। এই দানবকে হারিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে।