Logo
Logo
×

অভিমত

ভয় কেটে যাওয়া মানুষ বিজয় ছাড়া ঘরে ফিরবে না

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২৪ এএম

ভয় কেটে যাওয়া মানুষ বিজয় ছাড়া ঘরে ফিরবে না

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের কাছে মানুষ আর পুলিশের প্রবল লড়াইয়ে তখন বিরতি। মানুষের পাথর ছোড়ার তোড়ে পালিয়েছে অস্ত্রধারী পুলিশ। মানুষের ভিড়ে পাওয়া গেলো রাগে লাল হয়ে যাওয়া লুঙ্গি পড়া এক ক্ষীণদেহীকে, বয়স হয়তো চল্লিশের ঘরে হবে। জিজ্ঞাসা করলাম, ছাত্রদের এই আন্দোলনে আপনি কী করেন?

'এতগুলা ছাত্র মাইরা ফেললো আর আপনি জিগান আমি কী করি?' - উল্টা প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক। এই পুলিশের চেয়ে খারাপ আর কেউ নাই। আমি ফেরি কইরা তরকারী বেচি, ডেইলি পুলিশরে ৩০০ কইরা দেওয়া লাগে। এরপর আর কী থাকে কন? জিনিসপত্রের যেই দাম বাড়ছে, এমনেতেই তো না খাইয়া মরমু। আমগোরে তো ডেইলি মারে, কিন্তু এখন ছাত্র ভাইগোরেও মাইরাই ফেললো। এমনেও মরমু, তার থিকা যদি এই জালিম সরকাররে সরাইতে পারি আমগো একটা আশা থাকবো। ছাত্রগো সাথে আছি দেশ বাঁচানোর এই আন্দোলনে।

বাংলাদেশে এখন মুক্তির লড়াই চলছে। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য রাস্ট্রীয় হত্যাকান্ডের সাক্ষী হয়েছে গোটা দেশ। ১৫ বছর ধরে চলা একটা অবৈধ সরকার আকছার দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে নিজেদের জন্য যে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে তা রক্ষার জন্য দেশের মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে মারছে এর পেটোয়া বাহিনী। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে সরাসরি গুলি চালাচ্ছে জনতারই বুকে। খুন হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভাইয়েরা, বোনেরা, এমনকি রেহাই পাচ্ছে না শিশুরা।

সরকারী বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলি, পুলিশ আর সেনাবাহিনীর অবিরাম গুলিতে মারা গেছে অনেকগুলো শিশু। কেউ কেউ বাবা মা হারিয়ে এতিম হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও এই আন্দোলন এখন কেবলমাত্র সরকার পতনের। জালিম থেকে মুক্তির।

সায়েদাবাদের অদূরে যাত্রাবাড়ী অন্তত ছয়দিন রণক্ষেত্র হয়ে ছিলো। পুলিশ-সেনাবাহিনীর অস্ত্রের বিরুদ্ধে কেবল ইটপাথর দিয়েই প্রতিরোধ করেছিলো জনতা। ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন শ্রমজীবী মানুষেরা। রামপুরায় দেখা গেছে পিলপিল করে নেমে এসেছেন নারীরা। উত্তরায় আওয়ামী খুনেরা আক্রমণ করলে পালটা আক্রমণে প্রতিহত করা হয়। এরপর পুলিশ আর সেনাবাহিনী জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

সারা দুনিয়ায় উত্তেজিত জনতাকে দমনের অনেক কৌশল থাকলেও এই হামলাগুলো ছিলো সরাসরি খুন। পায়ে গুলি না চালিয়ে, ফাঁকা গুলি বা টিয়ার গ্যাস নয়, বরং সরাসরি বুকে গুলি চালানো হয়। শত শত লাশ তো বটেই, হাজার হাজার মানুষের চোখে গুলি লাগা তা প্রমাণ করে। হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমায় যারা আহত হয়ে বেঁচেছিলেন তাদের বলা হয় হিবাকুশা। আওয়ামী হত্যাকান্ডে বেঁচে যাওয়াদেরও হয়তো ইতিহাস এইরকম ভাবে কোনো নাম দেবে। মনে করিয়ে দেবে বাংলার বুকে নৃশংসতম হত্যাকান্ডের কথা।

কেবল ঢাকা নয়, গোটা দেশই যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠে। অবশ্য যুদ্ধ বলা ভুল হবে, কারণ একদিকে অস্ত্রধারী বাহিনীর বিপরীতে ছিলো অস্ত্রহীন মানুষের ঢল। নির্মমভাবে যাদের নিকেশ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু, কয়জনকে মারবে হাসিনার পোষা হত্যাকারীরা?

তেজগাঁওয়ের এক শ্রমিক ভাই একজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করেন, আচ্ছা ওদের গুলির পরিমাণ কতো? বিশ কোটির বেশি হবে কি? সব গুলি খরচ করে হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের সংখ্যা তো শেষ হবে না। মুক্তির লড়াইয়ে মানুষ এইভাবেই ভাবে। যেমনটা মিরপুরে একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ভাইয়েরা, আমরা যদি যুদ্ধে থাকি তাহলে মরতেও পারি নাও মরতে পারি, কিন্তু যদি আলাদা হয়ে যাই, তবে ওরা ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের নিশ্চিতভাবে মেরে ফেলবে। তাই যুদ্ধই আমাদের শ্রেয়।

কিন্তু এই যুদ্ধ যে বিপুল শক্তিধর এক দানবের সাথে। তার অনেক হাত, অনেক পা, অনেক অস্ত্র। একে ধ্বংস করতে হলে দিতে হবে প্রচুর রক্ত। এই লড়াই সহজ হবে না।

আমরা তাই দেখি এই শয়তানের দল নানারকম কৌশল করে। যারা মাঠে ছিলো তারা জানে জনতার শত্রু ছিলো কেবলই খুনে পুলিশের দল। আর ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীরা অনেক আগেই লেজ তুলে পালিয়েছিলো। ভাংচুর বা সম্পদের ক্ষতি জনতার লক্ষ্য ছিলো না।

তবে, পোষা মিডিয়া যে বারংবার মেট্রোরেল আর নানারকম সম্পদের ক্ষতির কথা বলছে? যারা আওয়ামী ইতিহাস সমন্ধে অবগত তারা জানেন এরা ক্ষমতার জন্য ধ্বংস করতে কসুর করে না। শ্রমিক লীগের একজন তো ধরাই পড়লো। আলামতে মনে হয় বাকিগুলোও ওদেরই করা।

ওরা ভেবেছিলো এর মাধ্যমে জনতাকে দোষী বানানো যাবে। ভয় দেখানো যাবে। আর দুই টাকার ক্ষতিকে বিশ টাকা দেখিয়ে লুটপাট করার ধান্দা তো আছেই। সঙ্গে আছে পুলিশের রমরমা বাণিজ্য। লাখো লাখো লোককে বেনামী আসামী করে চাঁদাবাজির মচ্ছব। সেনাবাহিনী দিয়ে প্রথম দফায় ঠান্ডা করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের তুলে নিয়ে ভয় দেখিয়ে ওরা ভাবসিলো সব দমন করে ফেলবে।

কিন্তু, একবার যাদের ভয় কেটে যায়, যারা জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে। ফলে আমরা দেখি, মৃত্যর সামনে অবলীলায় দাঁড়িয়ে যান শহীদ আবু সাঈদ। বন্ধু গুলি খেয়েছে তাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টেনে নিয়ে যায় আরেক বন্ধু, বাবুমশাই জিন্দেগী বাড়ি হোনে চাহিয়ে লাম্বি নেহি বলে ঝাপিয়ে পড়ে এক দেবশিশু, পুলিশের হাতে বন্দী ছেলেকে যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছে তখন সাহসী মা অভয় দেন নো টেনশন, নো টেনশন বলে, রাগে ফেটে পড়া তরুনী বলে উঠে, আজাদী কাকে বলে বুঝেন?

মানুষ খুব ভয়ংকর প্রাণী। সম্মিলিত শক্তি অসম্ভব সুন্দর এক বিষয়। ভয় কেটে যাওয়া মানুষ বিজয় ছাড়া ঘরে ফিরবে না।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন