শেষ পর্যন্ত তারা কয়েকশো মানুষকে নির্বিচারে হত্যার সত্যটাই স্বীকার করে না
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন একটি চিত্র।
এখনও যারা এই আলোচনা করছেন যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনায় সরকার কী করলে পরিস্থিতি এই দিকে গড়াতো না, শেখ হাসিনা কী করতে পারতেন, কেনো সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা করলো, সরকার ‘দায়িত্বশীল ভূমিকা’ পালন করলো কীনা, তরুণদের বিষয়ে সরকারের আরও অনুভূতিশীল হওয়া দরকার ছিলো, আদালত কেনো আগেই এই রায় দিলো না ইত্যাদি ইত্যাদি তাঁরা জেনে বা না জেনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আসলে আড়াল করছেন কতজন মানুষ নিহত হয়েছেন, কীভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, এই হত্যাযজ্ঞের দায় কার, এখন যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে সেই সব বিষয়। এটা সরকারের ‘প্রাণের চেয়ে সম্পদের দাম বেশি’ তত্ত্বেরই একটি ভিন্ন ভাষ্য মাত্র।
‘কী করিলে কী হইতো’ আলোচনা হচ্ছে যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে সেই ঘটনার ভয়াবহতাকে আড়াল করে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা প্রদান। ‘সরকার চাইলেই এই প্রাণহানি এড়ানো যেতো’ বলে যারা আহাজারি করছেন তারা এটা বলছেন না সরকার ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা চান না এমন কিছু বাংলাদেশে ঘটে না।
যে আলোচনা ১৮ জুলাই এবং তার পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে যা ঘটেছে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নেয় না, এই ঘটনা প্রবাহকে ‘হত্যাযজ্ঞ’ বলে চিহ্নিত করে না এবং এর জন্যে দায়ীদের ব্যাপারে কোনো ধরনের কথা বলেন না। তাদের উদ্দেশ্য কি সেটা বোঝা দুরূহ নয়। যদিও এরা ‘এপোলজি’ বা ক্ষমা চায় না, কিন্ত এই আচরণের কারণে ইংরেজিতে এই ধরনের লোকদের বলা হয় ‘রেজিম এপোলোজিস্ট’।
‘রেজিম এপোলোজিস্ট’-দের ভিন্ন চেহারাও আছে, দুর্বোধ্য তত্ত্বের আড়ালে, সাইকো-এন্যালিসিসের আড়ালে, রাজনীতির কাঠামোগত দিকের প্রশ্ন তুলে, ইতিহাসের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরে তারা যা বলেন, সেটা শেষ পর্যন্ত এই সত্যটাই স্বীকার করে না যে, কয়েকশো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।